এ ম্যাচ যে ভারত জিততে পারে তা ভারতের অতিবড় ফ্যানও আশা করেননি। তবে যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশের মত যতক্ষণ ক্রিজে ধোনি ততক্ষণ আশাটা বুকের কোণায় কোথাও একটা জিইয়ে রেখেছিলেন তাঁরা। সেটাই হল। একা ধোনি যে এখনও বুড়ো হাড়ে ভেল্কি দেখাতে পারেন তা এদিন সব হারানো ম্যাচেও দলকে ফিনিক্স পাখির মত জিতিয়ে প্রমাণ করলেন তিনি। তবে ধোনির পাশাপাশি প্রশংসার দাবিদার ভুবনেশ্বর কুমারও। ওই চাপের মুখেও যে কত ঠান্ডা মাথায় একজন পেশাগত ব্যাটসম্যানের মানসিকতা নিয়ে ব্যাট করা যায় তা এদিন দেখিয়ে দিলেন ভারতের অন্যতম সেরা বোলিং আক্রমণ ভুবি।
এদিন প্রথমে ব্যাট করা শ্রীলঙ্কাকে যথারীতি কম রানে বেঁধে দেন ভারতীয় বোলাররা। সিরিবর্ধনা-র ৫৮ রান, চামারার ৪০ রান ও ডিকওয়েলার ৩১ রানের ইনিংস বাদ দিলে বাকি শ্রীলঙ্কা টিমের আর কেউই তেমন রান দলের খাতায় যোগ করতে পারেনি। ২৩৬ রানে ৫০ ওভার শেষ করার পর বৃষ্টির জন্য ম্যাচে বিঘ্ন। তার জেরে ডাকওয়ার্থ লুইস নিয়মের কোপে পড়ে ভারতের বরাদ্দ ওভার কমে দাঁড়ায় ৪৭। জিততে রান করতে হবে ২৩১।
৫০ ওভারের ম্যাচে এ রানটা আজকাল আর কোনও রানই নয়। তারওপর ব্যাট করতে নেমে ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ান যে তাণ্ডব দেখাতে শুরু করলেন, তাতে পরিস্কার হয়ে গিয়েছিল এই ম্যাচও শেষ হতে ২৫-৩০ ওভারের বেশি সময় নেবে না। কিন্তু দলের ১০৯ রানের মাথায় রোহিত শর্মা আউট হওয়ার পরপরই শ্রীলঙ্কার ম্যাথিউসের চোখ জুড়নো ক্যাচে শিখর আউট হন। কিছুটা চাপে পড়ে ভারত। তারপর থেকেই শুরু হয় শ্রীলঙ্কার অচেনা ঘূর্ণি আকিলা ধনঞ্জয়ের বিষাক্ত স্পেল। আর তাতেই কার্যত তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ে ভারতের বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনআপ। কে এল রাহুল (৪), কেদার যাদব (১), বিরাট কোহলি (৪), হার্দিক পাণ্ডিয়া (০) ও অক্ষর প্যাটেলকে (৬) রানে প্যাভিলিয়নে পাঠিয়ে মাঠে ভারতকে কার্যত মুখ থুবড়ে মাটিতে ফেলে দেয় ধনঞ্জয়। ১৩১ রানের মধ্যেই ৭ উইকেট হারিয়ে ভারত তখন শুধু হারের অপেক্ষায়। ক্রিজে ধোনি, ভুবনেশ্বর।
মহারথীরা যেখানে শুধু এসেছেন আর গেছেন সেখানে একজন বোলার কতক্ষণ আর টিকবেন? এই প্রশ্ন নিয়েও দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভারতীয় দর্শকরা খেলা দেখতে লাগলেন। আর অধিকাংশই টিভি বন্ধ করে দলের এমন বিপর্যয়ে চরম বিরক্তি প্রকাশ করে চলে গেলেন অন্য কাজে বা ঘুমোতে। কিন্তু এই অবস্থাতেও খেলা যে বার করা যায় তা ধোনির বরফশীতল মাথা দেখিয়ে দিল। অন্যদিকে ধোনির পরামর্শ পেয়ে ভুবিও ধরে রাখলেন উইকেট। একেবারে প্রয়োজনীয় রান রেট ধরে অঙ্ক কষে চলল ধৈর্যের পরীক্ষা। যা ফল দিল ৪৪ ওভার ২ বলে। এই জুটিই ভারতকে পৌঁছে দিল কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে। এক অত্যাশ্চর্য জয় দিয়ে সিরিজে ২-০-এ এগিয়ে গেল ভারত। ধোনি দেখিয়ে দিলেন, বিতর্ক অপ্রাসঙ্গিক। এখনও তিনি ভারতীয় দলে সমান মর্যাদায় এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।