জিততে তখন মাত্র ৮ রান দরকার। এমন সময় মাঠ জুড়ে শুরু হল বোতল বৃষ্টি। শ্রীলঙ্কার ক্ষুব্ধ সমর্থকদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটল মাঠে। বাউন্ডারি লাইনে দাঁড়ানো শ্রীলঙ্কার ফিল্ডাররা মাথা বাঁচিয়ে ছুটে চলে এলেন মাঠের মাঝখানে। মুখ শুকনো। চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। ক্রিজের পাশে জটলা করে দাঁড়িয়ে দর্শকদের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে শ্রীলঙ্কার ১১ জন খেলোয়াড়। অবাক ধোনি, রোহিতও। হেলমেট, গ্লাভস ছেড়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর ধোনি শুয়ে পড়লেন সবুজ মাঠে। চোখ বুজে ঘুমিয়েও পড়লেন। ভাবটা এমন, যা হয় হোক। সব মিটলে জাগিয়ে দিস। ব্যাটিং করব। প্রায় আধঘণ্টা মাঠ জুড়ে প্রবল বোতল বৃষ্টির পর ম্যাচ রেফারি ও আম্পায়াররা কথাবার্তা বলে ম্যাচ আর এগোনোর ঝুঁকি নিলেন না। ততক্ষণে গ্রাউন্ড স্টাফেরা মাঠের বোতল সাফ করতে ব্যস্ত। পুলিশ ব্যস্ত মাঠ ঘিরে অশান্তি থামাতে। দুই টিমই আস্তে আস্তে প্যাভিলিয়নের দিকে হাঁটা দিল। এরপরই ট্যুইস্ট। কিছুক্ষণ ম্যাচ বন্ধ থাকার পর ফের মাঠে নেমে পড়ে দুই দল। শুরু হয় খেলা। শেষ পর্যন্ত ৪৫.১ ওভারের মাথায় জয় ছিনিয়ে নেয় ভারত। এই জয়ের ফলে ৫ ম্যাচের ওয়ান ডে সিরিজে পরপর ৩টে ম্যাচ জিতে সিরিজ পকেটে পুরল বিরাটের ছেলেরা। বাকি ২টো জিততে পারলে টেস্টের মত ওয়ান ডে-তেও শ্রীলঙ্কার মাটিতে তাদের হোয়াইট ওয়াশ করার রেকর্ড গড়বে ভারত।
এদিন টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। সমালোচিতও হয়েছিল। প্রতিবার প্রথমে ব্যাট করে কম রানে ইনিংস গুটিয়ে ভারতকে সহজ জয়ের রাস্তা করে দিচ্ছে তারা। শ্রীলঙ্কা দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছিলেন সে দেশের প্রাক্তনরা। এদিন ফের সেই প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় খেলা শুরুর আগেই সমালোচনায় মুখর হন তাঁরা। তাঁদের ক্ষোভ যে ন্যায্য তা এদিন শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং থেকেই পরিস্কার। ৫০ ওভারের ম্যাচে নিজেদের ঘরের মাঠে যেভাবে গোটা দলটা ভারতীয় বোলিং আক্রমণ, বিশেষত বুমরাহ-র ভয়ংকর স্পেলের সামনে আত্মসমর্পণ করল তাতে শ্রীলঙ্কার অনুরাগীদের রাগ হওয়ারই কথা। থিরিমানের ৮০ রানের দুরন্ত ব্যাটিং না হলে শ্রীলঙ্কা এদিন ২০০ রানের গণ্ডিও পার করতে পারত না। সেইসঙ্গে ভারতের তরফে এক্সট্রা ১৯ রানের উপহার। সব মিলিয়ে শ্রীলঙ্কার ৫০ ওভার শেষ হয় ৯ উইকেট হারিয়ে ২১৭ রানে।
২১৮ রানের সহজ লক্ষ্য ছুঁতে হবে এবং সিরিজ ২ ম্যাচ বাকি থাকতেই পকেটে পুরতে হবে এই অবস্থায় ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই শিখর ধাওয়ানের উইকেট হারায় ভারত। তারপরেই অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে প্যাভিলিয়নে ফেরান ফার্নান্ডো। ৩ রান করে বিরাট ফেরার পর রোহিতের সঙ্গে জুটি বাঁধেন কে এল রাহুল। কিন্তু তিনিও ব্যর্থ। মাত্র ১৭ রান কে এল রাহুল আউট হওয়ার ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই আয়ারাম গয়ারাম কেদার যাদব। তাও খাতা না খুলেই। ৬১ রানে ৪ উইকেট খুইয়ে ভারত তখন চাপে। কিন্তু সকলের মনের কোণে একটা ভাবনা ছিলই। ধোনি এখনও আছেন। যাঁকে নিশ্চিন্তে এখনও ভরসা করা যায়। হলও তাই। ধোনি নামতেই উইকেট পতনে তালা পড়ে যায়। রানের গতি বাড়তে থাকে। রোহিত শর্মাও যেন অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে প্রাণ ফিরে পান। শুরু হয় রোহিত-ধোনির যুগলবন্দি। আর তা শুরু হতেই খড়কুটোর মত ভেঙে পড়ে শ্রীলঙ্কার বোলিং লাইনআপ। দ্রুত জয়ের লক্ষ্যে এগিয়ে যায় ভারত। জয়ের জন্য ৮ রান বাকি থাকতে মাঠ জুড়ে শুরু হয় অশান্তি। বোতলবৃষ্টি। তবে সব বাধা টপকে ৬ উইকেটে ম্যাচ জেতে ভারত। ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হয়েছেন বুমরাহ।