পঞ্চম ওয়ান ডে-তেও লজ্জার হার হারতে হল দক্ষিণ আফ্রিকাকে। তাও আবার নিজের মাঠে। নিজের দর্শকের সামনে। দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকাকে সিংহ গুহায় ঢুকে তাকে খোঁচানো বলে ধরে নেওয়া হয়। সেই সিংহদের ওয়ান ডে সিরিজে কার্যত নখদন্তহীন বানিয়ে ছাড়ল বিরাটের ভারত। সিরিজ জয় আগেই সম্পূর্ণ হয়েছিল। সেঞ্চুরিয়নের মাঠে ৬ ম্যাচের সিরিজের শেষ ম্যাচে ব্যবধান বড় করাই ছিল লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্যে এদিন অত্যন্ত হেলায় উতরে গেল ভারত। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং। কোনও বিভাগেই এদিন ভারতের ধারে কাছে পৌঁছতে পারেনি প্রোটিয়ারা।
সেঞ্চুরিয়নের মাঠে এদিন টস জিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ব্যাট করতে পাঠান ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। শুরুতেই ব্যর্থ হন হাসিম আমলা (১০)। তবে এদিন ব্যর্থতা তাড়া করেছে প্রায় গোটা দক্ষিণ আফ্রিকা দলটাকেই। কিছুটা হলেও ব্যতিক্রমী জোন্ডো (৫৪)। এছাড়া মার্করাম (২৪), ডেভিলিয়ার্স (৩০) কিছুটা লড়াই দেওয়ার চেষ্টা করেন। বাকি কিছুটা রান তোলেন ক্ল্যাসেন (২২) ও মর্কেল (২০)। বরং শেষের দিকে ভাল ব্যাট করেন ফেলুখাও (৩৪)। তবে পুরো ওভার খেলার সুযোগ হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার। ৪৬.৫ ওভারেই সব উইকেট পড়ে যায় তাদের। ২০৪ রানে অলআউট হয় দক্ষিণ আফ্রিকা।
এদিন ভারতীয় বোলিং আক্রমণ ও ফিল্ডিং ছিল চোখে পড়ার মতন। তবে তারমধ্যেও ঝলমল করেছে ভারতের শার্দূল ঠাকুরের বোলিং। তাঁর বলের বৈচিত্র্যে প্রোটিয়াদের ব্যাট শুরু থেকেই নড়বড় করেছে। ৪ উইকেট তুলে নেন তিনিই। ২০৫ রান করলেই সিরিজ ৫-১-এ জিতে যাবে ভারত। টার্গেটও বড় কিছু নয়। এই অবস্থায় ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই রোহিত শর্মার উইকেট হারায় ভারত। এরপর ফর্মে থাকা শিখর ধাওয়ান ও বিরাট কোহলি জুটি বাঁধেন। কিন্তু এদিন ব্যাটে তেমন জুত করে উঠতে পারেননি শিখরও। ৫৬ বল খেলে মাত্র ১৮ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিনি। শেষে রাহানেকে সঙ্গে করে ২০৫-এর লক্ষ্যভেদ করেন বিরাট। মাত্র ৩২.১ ওভার খেলেই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছয় মেন ইন ব্লু। ৮ উইকেটে জেতে ভারত। এদিন শিখর বা রাহানের যত না রান তোলার তাড়া ছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি তাগিদ ছিল বিরাটকে যোগ্য সঙ্গত দেওয়া। যাতে রানের জন্য ব্যাকুল বিরাটের ব্যাট তার মারকাটারি ইনিংসটা নিশ্চিন্তে খেলে যেতে পারে। উল্টোদিকের উইকেট পতনের সমস্যায় যাতে বিরাটকে ব্যাটিং মন্থর না করতে হয়। সেটাই হয়েছে। ১২৩ বল খেলে ১২৯ রান করেন বিরাট। খেলার শেষ পর্যন্ত থাকেন অপরাজিত।
এদিনের জয়ের জেরে ৬ ম্যাচের সিরিজ ৫-১ ব্যবধানে জিতে নিল ভারত। ম্যাচের সেরা নির্বাচিত হন বিরাট কোহলি। সিরিজের সেরাও হন তিনিই। ওয়ান ডে-তে বিরাট অসাধারণ হলেও গোটা ভারতীয় দলটার পারফর্মেন্স ছিল চোখে পড়ার মতন। একজন ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ হলে অন্যজন ভয়ংকর উঠেছেন। বোলিংয়ে চাহল, কুলদীপের ঘূর্ণি অনেক ক্ষেত্রেই দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য সুনামি হয়ে আছড়ে পড়েছে। পেসাররাও তাঁদের কাজটা করতে পেরেছেন। বুমরাহ, ভুবনেশ্বর কুমার ও শেষ ম্যাচে শার্দূল ঠাকুর ভেল্কি দেখিয়েছেন। ভুবনেশ্বরের অবদান আরও রয়েছে। সবার অলক্ষ্যেই ব্যাট হাতে শেষের দিকে নামা ভুবনেশ্বর অনেক ম্যাচেই গুরুত্বপূর্ণ রান সংযোজন করেছেন। সঙ্গত দিয়েছেন অন্যদিকে থাকা ব্যাটসম্যানকে। ফিল্ডিংও ছিল বিশ্বমানের। সব মিলিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় বোধহয় ভারতের এই ঐতিহাসিক জয়ের নেপথ্যে কারও একার কৃতিত্ব নয়, রইল টিম গেমের যাদু।