কথায় বলে ইংল্যান্ড নিজের মাটিতে ভয়ংকর। কিন্তু ভারতীয় দল যে যেকোনও মাটিতেই ভয়ংকর তা বুঝিয়ে দিলেন রোহিত, হার্দিকরা। রোহিত শর্মার বিষাক্ত ব্যাটিংয়ে ভরসা করে টি-২০ সিরিজ রবিবার ২-১ ব্যবধানে পকেটে পুরল ভারত। ১-১ অবস্থায় থাকা সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ ছিল নির্ণায়ক। আর সেখানেই বাজিমাত করল ভারত। ইংল্যান্ড চেষ্টার ত্রুটি করেনি। কিন্তু তাদের মিডল অর্ডারের ব্যর্থতা এদিনও তাদের জন্য কাল হল। ইংল্যান্ড শুরুটা দারুণ করলেও পরে সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারছেনা। এদিনও সেটাই হয়। ঝোড়ো শুরুর পর সেই গতিতে রান মিটার ছোটাতে ব্যর্থ মিডল অর্ডারের ব্যাটসম্যানেরা। অন্যদিকে বোলিং ও ব্যাটিং ২ ক্ষেত্রেই সফল হার্দিকের পাণ্ডিয়া। যা ভারতকে এদিন জয় এনে দেওয়ায় বড় ভূমিকা নিয়েছে। আর রোহিত শর্মার অপরাজিত শতরানের ইনিংস তো ব্রিটিশদের ঘুমই উড়িয়ে দিল।
ব্রিস্টলের কাউন্টি গ্রাউন্ডে এদিন টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন বিরাট কোহলি। ছোট মাঠ। পাটা উইকেট। পিচে ঘাস থাকলেও তা কাজের নয়। কারণ বল সুইং তেমন নিচ্ছে না। ফলে শুরু থেকেই ভারতের ২ অপেক্ষাকৃত নতুন মুখ দীপক চাহর ও সিদ্ধার্থ কল মার খেতে থাকেন। আর শুধু নতুন মুখদ্বয় কেন, জেসন রয় আর জস বাটলারের তাণ্ডবের হাত থেকে রেহাই পাননি উমেশ যাদবও। প্রতি ওভারে যেভাবে রয়-বাটলার জুটি ভারতীয় বোলারদের তুলোধোনা শুরু করেন তাতে এক সময়ে ক্রিকেট বোদ্ধারাও মনে করছিলেন এই ম্যাচে ইংল্যান্ডের ২০০ তো হবেই। এমনকি রান ২৩০-২৪০ পর্যন্ত পৌঁছে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। এর মাঝেই সবচেয়ে ভয়ংকর হল হার্দিক পাণ্ডিয়ার প্রথম ওভার। এক ওভারে ২২ রান দেন পাণ্ডিয়া। তাঁর বোলিং কেরিয়ারে এমন মার কখনও খাননি হার্দিক। তবে প্রথম ১০ ওভার যদি এদিন ইংল্যান্ডের হয়, তবে ম্যাচের শেষ ১০ ওভার ভারতের। যেভাবে ভারতীয় বোলাররা এই ম্যাচে কামব্যাক করেছেন তা তারিফ কুড়িয়েছে সকলের। শেষ ১০ ওভারে ইংল্যান্ডের ৭ উইকেট পড়েছে। প্রথম ৯ ওভারে যেখানে ইংল্যান্ড ১০০ রানের কোটা পার করেছিল। সেখানে পরের ১১ ওভারে তারা মাত্র ৯৫ রানই স্কোর বোর্ডে জমা করতে পেরেছে।
জেসন রয় ৩১ বলে ৬৭ রান ও জস বাটলার ২১ বলে ৩৪ রান করে ফেরার পর থেকেই ইংল্যান্ডের ইনিংস থমকে যেতে থাকে। এরপর হেলস ২৪ বলে ৩০ রান, বেয়ারস্টো ১৪ বলে ২৫ রান করলেও বাকি কেউই সেভাবে ভারতীয় বোলিংয়ের মুখে দাঁড়াতে পারেননি। যার ফলে ভারত ইংল্যান্ডকে ২০ ওভারের শেষে ১৯৮ রানে বেঁধে দিতে পারে। যে হার্দিক পাণ্ডিয়া প্রথম ওভারে ২২ রান হজম করেন। সেই হার্দিক পরের ৩ ওভারের ১৬ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন। দুরন্ত কামব্যাক বোধহয় একেই বলে। এদিন ভারতের সবচেয়ে সফল বোলার তিনিই। অন্যদিকে এদিন উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে ফের একটি রেকর্ড গড়লেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। উইকেটরক্ষক হিসাবে তিনি ৫টি ক্যাচ ধরেন। যা এখনও পর্যন্ত একটি রেকর্ড।
১৯৯ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে দ্রুত মাত্র ৫ রান করে ফেরেন শিখর ধাওয়ান। যদিও অন্যদিকে রোহিত শর্মা তখন নিজের ছন্দে ব্যাট করছেন। তাঁকে সঙ্গত দিতে নামেন কেএল রাহুল। এই সিরিজেই শতরান হাঁকানো রাহুল এদিনও শুরু থেকে ফর্মেই ব্যাট শুরু করেন। ৯ বল খেলে ২টি ছক্কা ও ১টি চার মারার পর ১৯ রানের ব্যক্তিগত স্কোরে তিনি ফের ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ধরা পড়ে যান জর্ডনের হাতে। যে ক্যাচ এদিন জর্ডন ধরেন তা বহুকাল মনে থেকে যাবে। এমনকি শিখরের ক্যাচও যেভাবে ঝাঁপ দিয়ে ধরেন তাও ছিল চোখ জুড়নো। ইংল্যান্ড এদিন শুরু থেকেই বুঝিয়ে দিয়েছে তারা ফিল্ডিং তৈরি করেই নেমেছে। রাহুল ফেরার পর ম্যাচের হাল ধরেন রোহিত ও অধিনায়ক বিরাট কোহলি। এরপর রোহিত-বিরাট জুটি যে ঝড় শুরু করে তার মোকাবিলা করার মত বোলিংয়ের ধার ব্রিটিশদের ছিলনা। বোলার বদলালেও চার, ছয়ের বন্যা বন্ধ হয়নি। এই ২ জনের নির্দয় প্রহারে ভারত বিশাল রানের পিছু ধাওয়াকে অনায়াসে পরিণত করে। পরে কোহলি ২৯ বলে ৪৩ রান করে ফিরলেও ততক্ষণে ম্যাচ ভারতের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। এরপর রোহিতের সঙ্গে জুটি বাঁধেন হার্দিক।
বোলিংয়ে সাফল্যের পর এদিন ব্যাটিংয়েও নিজের চেনা বিধ্বংসী ছন্দ ধরে রাখেন তিনি। রোহিত আর হার্দিক যুগলবন্দি মাঠে যেভাবে চার, ছয় মারতে থাকেন তাতে এটা বোঝাই যাচ্ছিল খেলা নির্ধারিত ২০ ওভারের আগেই শেষ হয়ে যাবে। ১৮ তম ওভারে ভারত ২০ রান তোলার পর জিত নিয়ে কেউ ভাবছিলেন না। ভাবছিলেন ৯৫-তে থাকা রোহিতের সেঞ্চুরি হবে তো? নাকি তার আগেই হার্দিক অন্যদিকে দাঁড়িয়ে শেষ করে দেবেন ইনিংস। হয়তো রোহিতের মাথায়ও তেমনই ভাবনা এসেছিল। তাই জয়ের জন্য ৯ রান বাকি এই অবস্থায় ৯৫ রানে থাকা রোহিত জর্ডনের প্রথম বলই চার হাঁকান। আর তার পরের বলেই ১ রান নিয়ে আগে তাঁর শতরান পূর্ণ করেন।
রোহিত কেন এত তাড়াতাড়ি শতরান করে নিয়েছিলেন তা বোঝা গেল জর্ডনের চতুর্থ বলেই। হার্দিক ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ জিতে নেন। একদম স্টাইলে জিত যাকে বলে, ঠিক তাই। ভারত ৮ বল বাকি থাকতেই ১৯৯ রানে পৌঁছে যায়। জেতে ৭ উইকেটে। এই জয়ের ফলে ৩ ম্যাচের টি-২০ সিরিজ তারা ইংল্যান্ডের মাটিতে ইংল্যান্ডকে ২-১-এ হারিয়ে জিতে নিল। ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ এবং ম্যান অফ দ্যা সিরিজ হন রোহিত শর্মা। — ছবি – সৌজন্যে – ট্যুইটার – বিসিসিআই