ব্রিটিশদের পরাজয়ের পর্ব চলছে। গত বুধবার ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরে বিদায় নিয়েছে সাড়া জাগানো হ্যারি কেনের ইংল্যান্ড। তারপর দিন তাদেরই মাঠে ওয়ান ডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডকে হেলায় হারাল ভারত। ভারত জিতল ৮ উইকেটে। ৫০ ওভারের খেলায় ভারতের জয়ের লক্ষ্য ছুঁতে লাগল মাত্র ৪০ ওভার ১ বল। ম্যাচে এদিন অতিভয়ংকর রূপে দেখা দেন কুলদীপ যাদব। একাই শেষ করে দেন গোটা ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপ। তুলে নেন ৬ উইকেট।
টস জিতে প্রথমে ইংল্যান্ডকে ব্যাট করতে পাঠায় ভারত। টি-২০ খেলে খেলে সব দলের খেলোয়াড়ই এখন ফরম্যাটের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে দ্রুত বদলে ফেলতে পারছেন না। পারছেন না মানসিক অবস্থান বদলাতে। ব্যাটিং কৌশল বদলাতে। এদিন কিছুটা তারই মাশুল গুনতে হল ইংল্যান্ডকে। ব্যাট করতে নেমে প্রথম দিকে হয়ত জেসন রয়দের মাথায় ছিল এটা টি-২০ নয়। ৫০ ওভারের ম্যাচ। কিন্তু কিছু পরেই ছন্দপতন। দ্রুত মারতে গিয়ে আউট হতে থাকেন তাঁরা। ফলে মিডল অর্ডার চাপে পড়ে যায়। সেখানে অবশ্য স্টোকস-বাটলার জুটি বেশ কিছুটা খেলা টানলেও স্টোকস উইকেট বাঁচাতে গিয়ে অনেক বল নষ্ট করেন। সেটা অবশ্যই ইংল্যান্ডের জন্য বড় ধাক্কা। এটাও ঠিক যে একদিনের ম্যাচ টেস্ট নয়। ফলে সেখানে রানের গতি ঠিক রাখাও দরকার। স্টোকস ১০৩ বল খেলে করেন ৫৩ রান। বাটলার ৫০ রান করে আউট হন। এছাড়া ইংল্যান্ডের ২ ওপেনার জেসন রয় ও বেয়ারস্টো ২ জনেই ৩৮ রান করে করেন। ৫০ ওভার শেষ হতে ১ বল বাকি থাকতেই ২৬৮ রানে আলআউট হয়ে যায় ইংল্যান্ড।
ইংল্যান্ডের করা ২৬৮ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে এদিন শুরু থেকেই সংযত অথচ মারমুখী ব্যাট করেছেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানেরা। একদিনের ক্রিকেটের মানসিকতা নিয়েই খেলছিলেন তাঁরা। কিন্তু রানের গতি ছিল যথেষ্ট ভাল। ইংল্যান্ডের দুর্বল বোলিংকে যথাযোগ্য প্রহার করতে কিন্তু একেবারেই পিছপা হননি রোহিত, শিখর, বিরাটরা। ২৭ বল খেলে ৪০ রান করার পর শিখর ধাওয়ান ফিরলে দুরন্ত ফর্মে থাকা রোহিতের সঙ্গে জুটি বাঁধেন বিরাট কোহলি। এঁরা ২ জনেই কার্যত খেলা শেষ করে দেন। ৭৫ রান করে করে বিরাট ফেরার পর কেএল রাহুল নামেন রোহিতের সঙ্গে জুটি বাঁধতে। কিন্তু তাঁকে কার্যত খেলতেই হয়নি। রোহিতকে সঙ্গত দেওয়াই ছিল তাঁর কাজ। আর রোহিত শর্মার যত প্রশংসা করা যায় সেটা কম হবে। একেবারে সাক্ষাৎ যমরাজের মত ইংল্যান্ডের সামনে নটিংহামের ট্রেন্ট ব্রিজের মাঠে প্রকট হয়েছিলেন তিনি। একদিনের ক্রিকেটে নিজের ১৮ তম শতরান করার পাশাপাশি পুরো ৫০ ওভার খেলেন। অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে প্যাভিলিয়নমুখী হন। করেন ১১৪ বলে ১৩৭ রান। এদিন জয়ের লক্ষ্য ছুঁতে ভারতকে ৫০ ওভার খেলতে হয়নি। মাত্র ৪০ ওভার ১ বল খেলেই জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ২৬৯ রান তুলে নেয় মেন ইন ব্লু। যদিও তাঁর এই দুরন্ত ব্যাটিংয়ের পরও ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হতে পারেননি রোহিত। ইংল্যান্ডের গোটা দলটার জন্য মৃত্যুদূত হয়ে দেখা দেওয়া চায়নাম্যান কুলদীপ যাদবকেই নির্বাচকরা বেছে নেন ম্যাচের সেরা হিসাবে। আর সেটাই সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মেনে নিচ্ছেন ক্রিকেট বোদ্ধারা। কুলদীপের ১০ ওভার বল করে ২৫ রান দিয়ে ৬ উইকেট তুলে নেওয়ার এই স্বপ্নের বোলিং স্পেল বহুকাল মনে রাখবে ভারতীয় দল থেকে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ ও ক্রিকেটপ্রেমীরা। যে স্পেলই এদিন কার্যত ইংল্যান্ডের হারের ললাট লিখন লিখে দিয়েছিল নটিংহামে।