বলে যদি এদিন ক্রুণাল পাণ্ডিয়া অস্ট্রেলিয়ার ৪ উইকেট তুলে নিয়ে ব্যাটিংয়ে বড় ফাটল ধরিয়ে দিয়ে থাকেন তবে ব্যাট করতে নেমে শিখর ধাওয়ানের রণংদেহী মূর্তি অজিদের শিরদাঁড়ায় হিমস্রোত বইয়ে দেয়। অবশ্যই ভারত মাঝে কিছুটা সময় স্পিনের সামনে চাপে পড়ে যায়। হয়তো তখন অজিরা ভাবতে শুরু করেছে এই ম্যাচ তারা ক্রমশ নিজেদের ঝুলিতে পুরে ফেলছে। আর ঠিক তখনই জ্বলে উঠলেন বিরাট কোহলি। পাশে কার্তিককে পেয়ে যেন আরও ভয়ংকর ঠেকেছে বিরাটকে। বিরাটের দাপুটে ইনিংস ফের অজি শিবিরে নামিয়ে আনে শ্মশানের নিস্তব্ধতা। অবশেষে ৬ উইকেটে জেতে বিরাট বাহিনী। শেষ বলে চার হাঁকিয়ে জয়টাও ছিল স্টাইলে ভরা।
৩ ম্যাচের টি-২০ সিরিজ। অস্ট্রেলিয়ার মাঠ। ২টো দলেরই টি-২০ স্পেশালাইজেশন আছে। সেখানে প্রথম ম্যাচে বিরাটদের হারতে হয়েছে ডাকওয়ার্থ লুইসের কোপে পড়ে। দ্বিতীয় ম্যাচে দারুণ অবস্থায় থেকেও বৃষ্টি ভেস্তে দিয়েছে খেলা। ফলে আবহাওয়ার প্রতি একটা অভিমান হয়তো জমা হয়েছিল বিরাটদের। এদিকে এদিন সিডনিতে তৃতীয় ও শেষ টি-২০-তে অজিরা জিতলে বা ম্যাচ অমীমাংসিত থাকলেই সিরিজ জিতবে। আর ভারতকে সিরিজে সমতা ফেরাতে জিততেই হবে এই অবস্থায় টস জেতে অস্ট্রেলিয়া। টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। হয়ত প্রথম ম্যাচে ডাকওয়ার্থ লুইসের সুবিধার কথা তারা ভুলতে পারেনি। কিন্তু এদিন আর আবহাওয়া সাথ দেয়নি তাদের। ভারতীয় বোলাররা প্রথম দিকে কিছুটা নড়বড় করলেও স্লো উইকেটে স্পিনার আসতেই ম্যাজিক শুরু হয়। প্রথম ম্যাচে ক্রুণাল পাণ্ডিয়ার খারাপ পারফরমেন্স হারের অন্যতম কারণ ছিল। ফলে এদিন ছিল ক্রুণালের সামনে নিজেকে প্রমাণ করার দিন। ক্রুণাল সেটাই করেছেন। এদিন ৪ ওভার বল করে ৩৬ রান দিয়ে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে অজি ব্যাটিংয়ে আসল ফাটলটা ধরিয়ে দেন ভারতের এই অলরাউন্ডার। অন্যদিকে এদিন অজিদের কোনও ব্যাটসম্যানই তেমন ব্যাট করতে পারেননি। শেষে স্টোইনিজ আর কুল্টারনাইল হাল না ধরলে অজিরা একটা সম্মানজনক টোটালও ভারতের সামনে রাখতে পারত না। ২০ ওভার খেলে ৬ উইকেট হারিয়ে অজিদের সংগ্রহ ১৬৪ রান। এই ২০ ওভারে অজি ব্যাটসম্যানেরা কোনও ছক্কা এদিন হাঁকাতে পারেননি।
১৬৫ রান করলে জিতবে। এই অবস্থায় ব্যাট করতে নেমে প্রথম ২ ওভারে শিখর ও রোহিত জুটে তোলে ১২ রান। ধরে শুরু। কিন্তু তারপরের ৩ ওভারে যে ব্যাটিং সকলে দেখলেন তা এক কথায় বিধ্বংসী। মাঠে চার আর ছয়ের বন্যা বইল। যার হাত ধরে মাত্র ৫ ওভারেই ভারতের স্কোর পৌঁছে যায় ৬৭-তে। ৫ ওভার ৩ বলের মাথায় শিখর ধাওয়ানের পায়ে বল লেগে এলবিডব্লিউ। তার আগে অবশ্য ২২ বলে ৪১ রানের একটা আগ্রাসী ইনিংস খেলে ফেলেছেন শিখর। যেখানে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৬টা চার ও ২টি ছয়। অবশ্য শিখর আউট হয়ে ফেরার পর থেকে পাল্টা শুরু হয় অজিদের ঘুরে দাঁড়ানো। কারণ শিখরের পরই আউট হন রোহিত। যাঁর ব্যাট থেকেও এসেছিল ২টি ছক্কা ও ১টি চার। ভারতের স্কোর তখনও ৬৭। এই অবস্থায় বিরাট কোহলির সঙ্গে কেএল রাহুল জুটি বেঁধে খেলতে শুরু করেন। যদিও রাহুল বেশিক্ষণ টেকেননি। রাহুল ১৪ রান করে ফেরার পর আসেন ঋষভ পন্থ। এসে প্রথম বলেই আউট হয়ে ফেরেন। এখানে কিন্তু ভারত চাপে পড়ে যায়। বিরাটের সঙ্গে জুটি বাঁধেন কার্তিক। স্পিনারদের দাপট কিছুটা হলেও চাপে ফেলে ভারতকে। রান ও বলের ফারাক বাড়তে থাকে। আর এখান থেকেই বিরাটের ব্যাট ভয়ংকর হয়ে ওঠে। সঙ্গে কার্তিকের দুরন্ত সাপোর্ট। ছুটে রান হতে থাকে। সঙ্গে সুযোগমত চার বা ছয়। আর তার জোরেই ২ ওভার বাকি থাকতেই ম্যাচের ভাগ্যলিখন পরিস্কার হয়ে যায়। ২ বল বাকি থাকতেই বিরাট পরপর ২টো চার হাঁকিয়ে ম্যাচ জিতে নেন। ৬১ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। কার্তিক করেন ২২ রান। ভারত জেতে ৬ উইকেটে। সিরিজে সমতা ফেরে। ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হন ক্রুণাল পাণ্ডিয়া। ম্যান অফ দ্যা সিরিজ হন শিখর ধাওয়ান।