হাড্ডাহাড্ডি লড়াই যাকে বলে ঠিক সেটাই দেখল হ্যামিলটনের মাঠ। আর মাঠে যাঁরা উপস্থিত রইলেন তাঁরা ২৩ খানা ছক্কা দেখলেন একটা টি-২০ ম্যাচে। যদিও প্রবল লড়াই দিয়েও ম্যাচ ঘরে তুলতে পারলনা ভারত। শুধু ম্যাচই হারল না, হারল সিরিজও। কারণ ৩ ম্যাচের সিরিজে ১-১ অবস্থা হওয়ার পর এদিনের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ ছিল কার্যত ফাইনাল। আর সেই ম্যাচ ৪ রানে জিতে নিল নিউজিল্যান্ড। ২-১ ব্যবধানে জিতে নিল সিরিজও।
রবিবার টস জিতে প্রথমে নিউজিল্যান্ডকে ব্যাটিং করতে পাঠায় ভারত। ক্রিকেটবোদ্ধাদের মতে এটা কিছুটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। কারণ ছোট মাঠ, তার ওপর ব্যাটিং পিচ। এই পরিস্থিতিতে বড় রানের ইনিংস গড়া সোজা। কিন্তু পাহাড় প্রাণ রান তাড়া করা যে কোনও মাঠেই চাপের।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নিউজিল্যান্ডের ২ ওপেনার কলিন মুনরো ও সাইফার্ট বিধ্বংসী ব্যাটিং শুরু করেন। শুরু থেকেই রান উঠতে থাকে ঝোড়ো গতিতে। ভারতের কোনও বোলারই এই রানের গতিতে লাগাম পরাতে পারছিলেন না। ৪৩ করে সাইফার্ট আউট হওয়ার পর মারমুখী মুনরোকে সঙ্গত দিতে শুরু করেন অধিনায়ক উইলিয়ামসন। ৪০ বলে ৭২ রান করে যখন মুনরো ফিরলেন তখন কিউয়িদের স্কোর ভাল অবস্থায়। এরপর উইলিয়ামসন ২৭ রানে ফেরার পর গ্র্যান্ডহোমও ভয়ংকর চেহারা নেন। ৩০ রানে ফেরেন গ্র্যান্ডহোম। স্লগ ওভারে মিচেল ও টেলর এদিন গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে দেন। ২ জনেই অপরাজিত থেকে ২০ ওভার শেষ করেন। নিউজিল্যান্ড তোলে ২১২ রান। ভারতের একমাত্র কুলদীপই নিউজিল্যান্ডকে কিছুটা বেগ দিতে সক্ষম হন। এছাড়া সকলেই মার খেয়েছেন।
বিশাল অঙ্কের স্কোর তড়া করতে নেমে শুরুতেই ৫ রান করে ফেরেন শিখর ধাওয়ান। রোহিত শর্মা ও বিজয় শঙ্কর জুটি এরপর ম্যাচের হাল ধরে। বিজয় শঙ্কর মারমুখী মেজাজে ব্যাট করতে থাকেন। মাত্র ২৮ বল খেলে ৪৩ রান করে বিজয় ফেরার পর মাঠে নেমেই চার আর ছয়ের বন্যা বওয়াতে শুরু করেন ঋষভ পন্থ। তাঁর শুরু থেকে ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল ভারত এই ম্যাচ অনেক আগেই জিতে নেবে। ১২ বল খেলে ২৮ রান করে ফেরেন ঋষভ। হার্দিক পাণ্ডিয়া নেমেও সেই বিধ্বংসী মেজাজ ধরে রাখেন। ১১ বল খেলে ২১ রান করেন তিনি। এরপর ধোনি নামলেও তাঁর ব্যাট থেকে এদিন রান আসেনি। মাত্র ২ রান করে আউট হন ধোনি। হাল ধরেন কার্তিক আর ক্রুণাল পাণ্ডিয়া।
এখানে ভারতের হাল বেহাল ছিল। কিন্তু এই ২ ব্যাটসম্যানের অতি ভয়ংকর ব্যাটিং ক্রমশ ম্যাচের মোড় ঘোরাতে শুরু করে। খেলা নিউজিল্যান্ডের ঝুলি থেকে ক্রমশ ভারতের দিকে হেলে পড়তে শুরু করে। প্রতি ওভারে ২টো করে ছক্কা আসতে শুরু করে। অষ্টাদশ ওভাবে সাউদির বলে ১৮ রান নিয়ে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেন এঁরা। শেষ ওভারে দরকার ছিল ৬ বলে ১৬ রান। আর এখানেই ব্যাটে বলে সঠিক সংযোগ তৈরিতে অসমর্থন হন এই ২ ব্যাটসম্যান। ম্যাচ হাতের মুঠোয় এসেও ফস্কে যায়। শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়েও ৪ রানে হারতে হয় ভারতকে।
এদিনের ম্যাচ ছিল ফাইনালের মত। ম্যাচ জিতে সিরিজও জিতে নেয় নিউজিল্যান্ড। নিজেদের মাঠে একদিনের সিরিজ হারের পর টি-২০ হারার গ্নানি তাদের বহন করতে হল না। অন্যদিকে হাতে পেয়েও ম্যাচ হারার কষ্ট ভারতের জন্য চোরকাঁটার মত বিঁধে রইল। ম্যাচের সেরা হন কলিন মুনরো। টি-২০ সিরিজের সেরা হন নিউজিল্যান্ডের সাইফার্ট। বিশ্বকাপের আগে এটাই ছিল বিদেশের মাটিতে ভারতের শেষ ম্যাচ। সেই ম্যাচ হারল ভারত। এই মাসের শেষে টি-২০ খেলতে ভারতে আসছে অস্ট্রেলিয়া।