মোহালির মাঠে সন্ধের পর যে শিশির একটা বড় ভূমিকা নেবে তা কী ভারতীয় দলের জানা ছিলনা? প্রশ্নটা উঠছে কারণ পাহাড় প্রমাণ রান করেও শিশিরে ভেজা বল এদিন ভারতের হারের জন্য অনেকটাই দায়ী। অবশ্যই অস্ট্রেলিয়ার দুরন্ত ব্যাটিংকে সবরকম তারিফ করেও বলতেই হচ্ছে এরপরেও শিশির সাহায্য না করলে এভাবে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ বার করতে পারত না। আর এসব জেনেও ডিউ ফ্যাক্টরকে উপেক্ষা করে ভারত টস জিতে এদিন ব্যাটিং নেয়। ৩৫৮ রানের বিশাল ইনিংসও গড়ে তোলে। তারপরও ভারত হারল ৪ উইকেটে। সিরিজ ২-২-তে এনে দাঁড় করাল অস্ট্রেলিয়া ফলে দিল্লিতে সিরিজের শেষ ম্যাচ ফাইনাল হয়ে গেল।
রবিবার মোহালিতে টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। ভারতের ২ ওপেনার রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ান ২ জনেই শেষ কয়েক ম্যাচে রানের জন্য হাপিত্যেশ করেছেন। ফলে এদিন তাঁদের রান করার দিন ছিল। করেনও। রোহিত (৯৫) আর ধাওয়ান (১৪৩) ভারতকে একটা দুর্দান্ত শুরু উপহার দেয়। দলের ১৯৩ রানের মাথায় প্রথম উইকেট খোয়ায় ভারত। এরপর রাহুল (২৬), পন্থ (৩৬), বিজয় শঙ্কর (২৬) দলের খাতায় রান যোগ করেন। রান পাননি বিরাট কোহলি (৭) ও কেদার যাদব (১০)। তার পরেও ৫০ ওভারের শেষ ৯ উইকেট হারিয়ে ভারত তোলে ৩৫৮ রান। শেষ বলে ছক্কা হাঁকান বুমরাহ।
৩৫৯ রানের টার্গেট। প্রথমে ব্যাট করে এই রান তোলা যতটা সহজ, তা তাড়া করে জেতা অত সোজা নয়। ফলে অস্ট্রেলিয়ার জন্য এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। আবার এই ম্যাচ হারলেও সিরিজে হাতছাড়া। এই অবস্থায় ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই অজি অধিনায়ক ফিঞ্চ ০ রানে ফেরেন। মার্সও ফেরেন ৬ রান করে। একে বিশাল রান। তায় আবার শুরুতেই ২ উইকেট হারানো। ফলে প্রবল চাপে পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। ভারতের অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন এ ম্যাচ আর দেখে লাভ নেই। নেহাতই একতরফাভাবে জিততে চলেছে ভারত। কিন্তু প্রবাদ বলে ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা। আর সেটা কতটা অনিশ্চয়তার এদিনের ম্যাচ না দেখলে বোঝা যেতনা।
২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া অস্ট্রেলিয়ার হাল ধরেন খোওয়াজা ও পিটার হ্যান্ডসকম্ব। ধীরে সুস্থে অল্প অল্প করে রান তুলতে থাকেন তাঁরা। কিন্তু মন্ত্র ছিল একটাই। ক্রিজে টিকে থাকতে হবে। সেটাই লক্ষ্য স্থির করে খেলতে থাকেন এঁরা। রান কম উঠলেও ক্রমশ সেট হতে থাকেন খোওয়াজা ও হ্যান্ডসকম্ব। তারপর এক সময়ে ভারতীয় স্পিনারদের প্রহার করতে শুরু করেন এঁরা। রানের চাকা ঘুরতে থাকে।
খোওয়াজা ৯১ রান করে ও হ্যান্ডসকম্ব ১১৭ রান করে ফেরার পর কিছুটা লড়েন ম্যাক্সওয়েল (২৩)। কিন্তু হ্যান্ডসকম্ব ও খোওয়াজার দাঁত কামড়ে লড়াইকে সত্যিই যদি কেউ এগিয়ে নিয়ে গিয়ে থাকেন তবে তিনি জীবনের দ্বিতীয় ওয়ান ডে ম্যাচ খেলতে নামা টার্নার। তাঁর অতি ভয়ংকর বিধ্বংসী ব্যাটিং এদিন অস্ট্রেলিয়াকে এই ম্যাচকেও জিতিয়ে দিয়েছে। ৪২ বলে ৮২ রান করেন টার্নার। অস্ট্রেলিয়া ৩৫৮ রানের বিশাল টার্গেট তাড়া করে ১৩ বল বাকি থাকতেই জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রান তুলে নেয়। জেতে ৪ উইকেটে।
এমন স্বপ্নের জয় অজিরা অনেকদিন জেতেনি। আর এতবড় রানের ইনিংস খেলেও ভারত অনেকদিন হারেনি। এদিন অজিরা যেভাবে খেলল তা ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপের কাছে একটা বড় শিক্ষাও। কারণ বড় রান তাড়া করতে নেমে ইদানিং ভারতীয় দলকে স্নায়ুর চাপ হারাতেই দেখেছেন সমর্থকেরা। বড় রান হলেই শুরু থেকে হাঁকপাঁক করে মারতে গিয়ে আউট হয়ে লজ্জার হার একের পর এক হেরেছে তারা। সেখানে অজিরা দেখিয়ে দিল টার্গেট যতই বড় হোকনা কেন ঠান্ডা মাথায় ম্যাচে টিকে থাকলে আর হিসেব কষে খেললে যে কোনও ম্যাচ বার করা যায়। আর সঙ্গে শিশিরের সুবিধা পেলে তো কথাই নেই। যা এদিন মোহালিতে হল। এদিন ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হন টার্নার।