‘মহা’ আসতে পারে। এলে আর রক্ষে নেই। সব তছনছ করে দেবে। এমন আশঙ্কার কথা কয়েকদিন ধরেই খবরে ঘুরছিল। সেক্ষেত্রে খেলা তো দূর, আমজনতার সুরক্ষা নিয়েই প্রশ্ন উঠে যেত। এমনকি বৃহস্পতিবার সকালেও জানানো হয়েছিল মহা-র প্রভাবে বৃষ্টি হতে পারে সন্ধেয়। সেক্ষেত্রে রাজকোট ভাসবে। খেলা হবেনা। কিন্তু আদপে কিছুই হল না। বরং সুন্দর আবহাওয়াতেই খেলা হল সন্ধের রাজকোটে। দর্শকরাও চুটিয়ে উপভোগ করলেন ভারতের ব্যাটিং স্বর্গ বলে খ্যাত রাজকোটে সাইক্লোন রোহিতের তাণ্ডব। মহা এল না, কিন্তু রোহিত এল। এলোই শুধু নয়, মাঠে ঝড় বইয়ে দিয়ে গেল। চার আর ছয়ের ঝড়।
হিটম্যান হিসাবে তো তিনি খ্যাতই ছিলেন। তার ওপর এদিন পেয়েছিলেন রাজকোটের উইকেট। ফলে রোহিতকে এদিন আটকানোর কেউ ছিলনা। একাই শেষ করে দিলেন বাংলাদেশের সব আশা। রাজকোটের খেলা কিন্তু ছিল ভারতের জন্য ডু অর ডাই। ৩ ম্যাচের টি-২০ সিরিজে বাংলাদেশ দিল্লির ম্যাচে জিতে গিয়েছিল। ফলে এই ম্যাচ হারলে সিরিজ হাতছাড়া হত ভারতের। সেখানে টস জিতে এদিন প্রথম বাংলাদেশকে ব্যাট করতে পাঠান অধিনায়ক রোহিত শর্মা।
ব্যাট করতে নেমে শুরুতে লিটন দাস ও মহম্মদ নইমের ব্যাট কথা বলতে থাকে। তরতর করে চড়তে থাকে বাংলাদেশের রানের মিটার। এই সময় একটি সহজ ক্যাচ ফেলে দেন রোহিত। কিন্তু কিছুক্ষণ পর একটি হঠকারী সিদ্ধান্তে দোনোমনা করতে গিয়ে আউট হন লিটন (২৯)। এরপর সৌম্য সরকার ও নইম ভাল রান তুলতে থাকেন। নইম ৩৬ রান করে ফেরেন। সৌম্য করেন ৩০ রান। অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ শেষের দিকে দারুণ একটা ৩০ রানের ইনিংস খেলেন। কিন্তু অন্য ব্যাটসম্যানদের থেকে তেমন একটা রান না আসায় বাংলাদেশ দারুণ শুরু করেও ১৫৩ রানে শেষ করে নির্ধারিত ২০ ওভার।
১৫৪ রান করলে জিতবে। বিশাল রানও নয়। ফেলে দেওয়ার মত রানও নয়। তবে আইপিএল খেলার দৌলতে এখন ভারতীয় খেলোয়াড়দের কাছে ১৫৪ খুব বড় টার্গেট নয়। ব্যাট করতে নামেন রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ান। প্রথম ম্যাচে হারার জন্য রোহিত শর্মাকে অনেকেই বক্রোক্তি করেছিলেন। এদিনও একটি ক্যাচ ফেলেন তিনি। ফলে নিজেকে এদিন প্রমাণ করার দরকার ছিল তাঁর। তার ওপর এদিনের টি-২০ ছিল রোহিতের জীবনের শততম টি-২০ ম্যাচ। ফলে রান দরকার ছিল। দরকার ছিল সকলকে জবাব দিতে নিজের জোরে ম্যাচ বার করে আনা। আর ঠিক সেটাই করে দেখালেন তিনি।
মরণ বাঁচন ম্যাচে যে দলের প্রয়োজনে অধিনায়ক একা খেলে দিতে পারেন তা দেখিয়ে দিলেন রোহিত। এদিন তাঁর বিধ্বংসী চওড়া ব্যাটের প্রহার থামাতেই চাইছিল না। যেমন শটে শিল্পের ছোঁয়া, তেমন হার্ড হিট। দুইয়ে মিলে মাঠের চারধারে তখন চার আর ছক্কার বন্যা। এদিন ছক্কায় হ্যাটট্রিকও করেন তিনি। প্রথম ১০ ওভারের শেষেই ম্যাচের ভাগ্য পরিস্কার হয়ে যায়।
একাদশ ওভারে শিখর ধাওয়ান ব্যক্তিগত ৩১ রানের মাথায় ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান। এতে দলের রান তোলার গতি একটু থমকে যায়। কেএল রাহুল সেই গতিতে রান তুলতে পারছিলেননা। এদিন শিখর আউট হওয়ার পর ত্রয়োদশ ওভারে রোহিত শর্মাও ব্যক্তিগত ৮৫ রানের মাথায় ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন। যা ধরতে ভুল করেননি মিঠুন। এদিন আর একটু ধরে থাকলে রোহিত শতরান করে ফেলতে পারতেন। শেষে শ্রেয়স আইয়ার ও কেএল রাহুল ২৬ বল বাকি থাকতেই খেলা জিতে নেন। ৮ উইকেটে জেতে ভারত। ম্যাচের সেরা হন রোহিত শর্মা। তৃতীয় ও শেষ টি-২০ এখন নির্ণায়ক ম্যাচে রূপান্তরিত হল যা আগামী রবিবার নাগপুরে খেলা হবে।