ভারত কী ভাল খেলে জিতল? নাকি বাংলাদেশ খারাপ খেলে হারল? বিতর্কিত প্রশ্নটা থেকেই যাবে। তবে এটা মানতেই হবে যে নাগপুরে রবিবার টি-২০ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ কিন্তু খেলাকে নিজেদের দিকে এনেও অভিজ্ঞতা ও ধারাবাহিকতার অভাবে হেরে গেল। ৩ ম্যাচের সিরিজের প্রথম ম্যাচ ভারতকে হারিয়ে চাপে ফেলে দিয়েছিল বাংলাদেশ। পরের ২টি ম্যাচের ১টিতে জিততে পারলেই সিরিজ তাদের ছিল। সেখানে দ্বিতীয় টি-২০ জিতে নেয় ভারত। রোহিত ঝড় তৃতীয় টি-২০-কে নির্ণায়ক ম্যাচে পরিণত করে। আর সেই ম্যাচে ভারত ৩০ রানে জয়লাভ করল। সেইসঙ্গে জিতে নিল সিরিজও। তবে এদিন সিরিজ জয়ের সিংহভাগ শ্রেয় কিন্তু দখল করলেন বোলার দীপক চাহর। ৬ উইকেট তোলার পাশাপাশি তিনি হ্যাটট্রিকও করলেন।
তৃতীয় ও শেষ টি-২০ ছিল এদিন ফাইনালের মত। তাতে টস জেতে বাংলাদেশ। প্রথমে ভারতকে ব্যাট করতে পাঠায়। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে অধিনায়ক রোহিত শর্মার ব্যাট থেকে বড় রান যখন আশা করছিলেন ভারতবাসী সেখানে রোহিতকে মাত্র ২ রানে ফিরিয়ে প্রথমেই ধাক্কা দেয় বাংলাদেশ। তারপর ১৯ রানে ফেরেন শিখর ধাওয়ান। পরপর ২টি উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া ভারতকে এই অবস্থা থেকে একটা সম্মানজনক পরিস্থিতিতে তুলে আনেন কেএল রাহুল ও শ্রেয়স আইয়ার। এই ২ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানের মারমুখী ব্যাটে ভারত রান পেতে থাকে। রাহুল করেন ৫২ রান। শ্রেয়স করেন ৬২ রান। যাতে ৫টি ছক্কা ছিল। রাহুল ও শ্রেয়সের কাঁধে ভর করে একটা ভাল রানে পৌঁছনো ভারতকে স্লগ ওভারে চ্যালেঞ্জিং টোটালে পৌঁছে দেন মণীশ পাণ্ডে। অপরাজিত থেকে ২২ রান করেন তিনি। ভারত ২০ ওভারের শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে তোলে ১৭৪ রান।
১৭৫ করলে শুধু ম্যাচই জিতবে না। সিরিজও জিতবে। এই অবস্থায় ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ শুরুতেই বড় ধাক্কা খায়। লিটন দাস ৯ রান করে ও সৌম্য সরকার খাতা না খুলেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন। ১২ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া বাংলাদেশকে সব চাপ থেকে বার করে আনেন মহম্মদ নইম ও মহম্মদ মিঠুন। এই ২ ব্যাটসম্যানের দাপুটে ব্যাটিংকে হাতিয়ার করে বাংলাদেশ শুধু খেলায় ফেরেনি জয়ের সম্ভাবনাও উজ্জ্বল করে তোলে। এই ২ ব্যাটসম্যান যখন ম্যাচ বার করার লড়াই চালাচ্ছেন ঠিক তখনই বড় ধাক্কা দেন ভারতের এদিনের স্ট্রাইক বোলার দীপক চাহর। ব্যক্তিগত ২৯ রানে ফেরেন মিঠুন। ভেঙে যায় জুটি। হয়তো ভেঙে যায় জয়ের আশাও। জয়ের আশা আরও ক্ষীণ হয় যখন পরের বলেই ফেরেন মুশফিকুর রহিম। ২ বল আগেও যখন ভারতীয় সমর্থকরা প্রমাদ গুনছিলেন ঠিক ২ বল বাদেই তাঁরা আনন্দে মাঠে হৈচৈ শুরু করেন। এটাই হয়তো ছিল ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। এরপর ভারতের জয় ছিল সময়ের অপেক্ষা।
৫ উইকেট হারানোর পরও যে সামান্য আশা বাংলাদেশের মনে টিমটিম করছিল সেই বিধ্বংসী নইম ব্যক্তিগত ৮১ রানে ফেরেন। ৪৮ বলে ৮১ রান করা নইমকে বোল্ড করে ফেরান শিবম দুবে। এরপর বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ শুধু আয়ারাম গায়ারাম-এর ছন্দে চলে। কেউই ২ অঙ্কের রানে পৌঁছতে পারেননি। তৈরি করে দেওয়া খেলাকে লড়াইয়ে টেনে নিয়ে যেতে পারেননি বাংলাদেশের বাকি ব্যাটসম্যানেরা। এখানেই তাঁদের ধারাবাহিকতার অভাব।
ক্রিকেট টিম গেম। একদিন কেউ ব্যর্থ হলে অন্যকে খেলতে হবে। তবেই আসবে জয়। এরপর একের পর এক উইকেট হারিয়ে ১৪৪ রানে শেষে হয় বাংলাদেশের ইনিংস। দীপক চাহর ৬ উইকেট তুলে নেন। যারমধ্যে রয়েছে একটি হ্যাটট্রিক। ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ ও প্লেয়ার অফ দ্যা সিরিজ হন দীপক চাহরই।