লাল বলে সারাদিনের চিরাচরিত টেস্ট হোক বা গোলাপি বলের ঐতিহাসিক টেস্ট। বাংলাদেশের হাল বদলাল না। ফলে সেই প্রশ্নটা আবার উঠে গেল। পাঁচদিন খেলা হবে তো? যাঁরা গোলাপি বলে দিন রাতের টেস্ট খেলা দেখার অভিজ্ঞতা নিতে মাঠে যেতে চান এবং ধরা যাক চতুর্থ দিনের টিকিট জোগাড় করেছেন বা পঞ্চম দিনের, তাঁরা ইতিমধ্যেই প্রমাদ গুনতে শুরু করেছেন যে আদৌ তাঁদের স্বপ্ন পূরণ হবে তো? আদৌ ইডেনে গোলাপি বলের টেস্ট দেখার সুযোগ পাবেন তো? কারণও রয়েছে। আগের ২টি টেস্টে যেভাবে বাংলাদেশকে উড়িয়ে দিয়ে জিতেছে ভারত, যেভাবে পুরো পাঁচদিন খেলা হয়নি, সেদিকেই এগোচ্ছে গোলাপি বলের ঐতিহাসিক টেস্ট। আর তা প্রথম দিনের শেষেই পরিস্কার হয়ে গেছে।
টস জিতে ইডেনে গোলাপি বলের দিন রাতের টেস্টে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। খুব স্বাভাবিক সিদ্ধান্ত ছিল। বিরাট বলেই ফেলেন যে তাঁরাও চেয়েছিলেন প্রথমে ব্যাট করতে। গোলাপি বলে প্রথম ম্যাচ। ফলে এই বলে ফিল্ডিং নিয়েও চিন্তা ব্যক্ত করেন বিরাট। যদিও মাঠে নামার পর শুরুতেই যেভাবে একের পর এক উইকেট বাংলাদেশ হারাতে থাকে তাতে খেলার ভাগ্য প্রথম ২ ঘণ্টার শেষেই পরিস্কার হয়ে যায়। সেই টেস্টে যে টেস্টে রাতের আলোয় খেলা কেমন হবে তা নিয়েই সবচেয়ে বেশি উদগ্রীব ছিলেন সকলে।
প্রথমের দিকে বলে চোখ সেট করতে বাংলাদেশ তাড়াহুড়ো করে রানের রাস্তায় হাঁটেনি। কিন্তু সপ্তম ওভারে প্রথম ধাক্কা দেন ইশান্ত শর্মা। ইমরুল কায়েশ ফেরেন ৪ রান করে। এরপরই বাংলাদেশের ব্যাটিং ধস শুরু হয়। অধিনায়ক মমিনুল হক, মহম্মদ মিঠুন ও মুশফিকুর রহিমের মত বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ের ৩ অন্যতম ভরসা ০ রান করে ফেরেন। শুরুতে নেমে একা লড়ে যাওয়া সাদ্দাম ইসলাম (২৯) এরপর ফেরেন। দলের ৩৮ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশ তখন কার্যত শেষ। মাহমুদুল্লাহ ফেরেন ৬ রান করে। বাংলাদেশের লিটন দাস একা কিছুটা লড়াই দিচ্ছিলেন। কিন্তু ব্যক্তিগত ২৪ রানের মাথায় মহম্মদ সামির বলে চোট পেয়ে তিনি মাঝপথেই মাঠছাড়া হন। পরে তাঁর সিটি স্ক্যান করাতে হয়। এরপর নঈম হাসান করেন ১৯ রান। এরপর বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে ধস নামাতে অসুবিধা হয়নি ইশান্ত, উমেশ, সামিদের। এদিন একা ইশান্ত শর্মা নেন ৫ উইকেট। উমেশ যাদব নেন ৩ উইকেট। মহম্মদ সামি নেন ২ উইকেট। বাংলাদেশ ১০৬ রানে গুটিয়ে যায়।
ব্যাট করতে নামে ভারত। অন্ধকার নামার পর ফ্লাড লাইটে বাংলাদেশকে আর খেলতে হয়নি। ভারতই গোলাপি বলে রাতের অন্ধকারে ব্যাট ধরে। মায়াঙ্ক আগরওয়াল ১৪ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। সাফল্য পাননি রোহিত শর্মাও। ২১ রান করে ফেরেন তিনিও। রোহিত, মায়াঙ্ক ফেরার পর সন্ধের ইডেনে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের হাল ধরেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও চেতেশ্বর পূজারা। কোহলি-পূজারা জুটি ছন্দে খেলে ভারতের স্কোর বোর্ডের মিটার ঘোরাতে থাকেন। রান উঠতে থাকে ২ প্রান্ত থেকেই। বাংলাদেশ বোলিং বদল করেও বিশেষ এঁটে উঠতে পারেনি। গোলাপি বল বলে যে বিরাট বা পূজারার খেলায় অসুবিধা হচ্ছিল, তাও কখনও মনে হয়নি। বেশ সাবলীলভাবে খেলে যান ২ জনে। ৫৫ রান করে ফেরেন পূজারা।
কানায় কানায় ভরা ইডেন গোলাপি রঙে ভাসছে। বিরাট এরপর জুটি বাঁধেন অজিঙ্কা রাহানের সঙ্গে। এঁরাই ২ জন প্রথম দিনের খেলা শেষ হওয়া পর্যন্ত ক্রিজে রয়ে যান। বিরাট খেলছেন ৫৯ রানে, রাহানে ২৩ রানে। ভারত প্রথম দিনের শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৭৪ রান তুলেছে। বাংলাদেশের চেয়ে এখন ৬৮ রানে এগিয়ে তারা।