২০ ওভারে ২০৭ রান। টি-২০ ম্যাচে এ রান কম কথা নয়। প্রথমে ব্যাট করে এই রান তোলার পর তাই জয়ের স্বপ্ন যদি ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল দেখেও থাকে তো ভুল কিছু নয়। কিন্তু ভারত যে এখন অশ্বমেধের ঘোড়া তা মাঝেমধ্যে ভারতীয়রাও ভুলে যান। তাই অনেকেই মনে করছিলেন আজ ভারত গেল! এত রান তাড়া করা মুশকিল। রোহিত আউট হওয়ার পর তো সেই সম্ভাবনা আরও জোড়াল হয়। কিন্তু বিরাটের চওড়া ব্যাট যে কতটা বিধ্বংসী হতে পারে তার প্রমাণ ফের এদিন মিলল হায়দরাবাদের মাঠে। ২০৮ রানের টার্গেট ৮ বল আগেই সম্পূর্ণ করে ভারত। আর তার শ্রেয় অবশ্যই দেওয়া যায় বিরাট কোহলির অতিমানবিক ব্যাটিংকে। ম্যান অফ দ্যা ম্যাচও হন বিরাট কোহলি।
টি-২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টস জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেন বিরাট। হয়তো রাতের শিশির বিষয়টি মাথায় ছিল তাঁর। ব্যাট করতে নেমে এদিন শুরু থেকেই ভয়ংকর হয়ে ওঠেন ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানরা। শুরুতেই সাইমন্স (২) আউট হলেও লিউইস ও কিং মিলে মারকাটারি ব্যাটিং করতে থাকেন। রান উঠতে থাকে ঝোড়ো গতিতে। ১৭ বলে ৪০ রান করে লিউইস ফেরার পর তাঁর জায়গা নেন শিমরন হেটমায়ার। কিং ফেরেন ৩১ রান করে। এরপর শিমরন হেটমায়ার ও কায়রন পোলার্ড রানের গতি এক রেখে মিটার ঘোরাতে থাকেন। হেটমায়ার ৫৬ রান করে ফেরেন। হেটমায়ার ফেরার পরই ফেরেন পোলার্ড (৩৭)। শেষে ২৪ রানের একটা ঝোড়ো ইনিংস উপহার দেন হোল্ডার। রামদিন করেন ১১ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০ ওভার খেলে ৫ উইকেট হারিয়ে ২০৭ রান তোলে।
ভারতের একটা রেকর্ড ছিল। ভারত এখনও পর্যন্ত টি-২০ আন্তর্জাতিক ম্যাচে ২০৭ রান করে জেতে। কিন্তু ২০৮ করে নয়। ভারত ব্যাট করতে নেমে বিশাল রান তাড়া করতে গিয়ে শুরুতেই রোহিত শর্মার উইকেট হারায়। রোহিত করেন ৮ রান। এরপর বিরাট কোহলি ও কেএল রাহুল জুটি বাঁধেন। এদিন শুরু থেকেই রাহুল ভাল ব্যাট করছিলেন। রানের গতি ধরে রাখছিলেন। বরং বিরাটের এদিন রান আর বলের সংখ্যা একসঙ্গে এগোচ্ছিল। মাঠে নিজের প্রতি একটু ক্ষুব্ধও হতে দেখা যাচ্ছিল তাঁকে। বড় শট মারতে গিয়েও মারতে না পারার ক্ষোভটা তাঁকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল। জড়িয়ে পড়ছিলেন কখনও আম্পায়ারের সঙ্গে তো কখনও বোলারের সঙ্গে কথা কাটাকাটিতে। এদিন মাঠে বিরাটকে খুব অধৈর্য ও আগ্রাসী মনে হচ্ছিল।
রাহুল কিন্তু রানের গতি ধরে রাখছিলেন। রাহুল ৪০ বলে ৬২ রান করে ফেরার পর বিরাটের সঙ্গে জুটি বাঁধেন ঋষভ পন্থ। রাহুল আউট হওয়ার আগে বিরাট মাঝেমধ্যেই বড় শট নিচ্ছিলেন। কিন্তু রাহুল ফেরার পর তিনি যেন আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠেন। রান আর বলের বিশাল ফারাক দ্রুত কমতে থাকে। ক্রমশ উজ্জ্বল হতে থাকে ভারতের জয়ের সম্ভাবনা। ক্যারিবিয়ানদের নিশ্চিন্ত মুখগুলো ক্রমশ বদলে যেতে থাকে। ফিল্ডিং ভুল হতে থাকে। এরমধ্যেই ১৮ রান করে ফেরেন ঋষভ। নামেন শ্রেয়স আইয়ার। তবে শ্রেয়সও ৪ রান করে পোলার্ডের দুরন্ত ক্যাচে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। কিন্তু এসব উইকেট আর ভারতকে চাপে ফেলেনি। কারণ একা বিরাটই খেলা শেষের দিকে টেনে নিয়ে যান। শেষে দুবে নামলেও তিনি একটাও বল খেলার সুযোগ পাননি। তার আগেই ৮ বল বাকি থাকতে ছক্কা হাঁকিয়ে খেলা শেষ করেন বিরাট। ৯৪ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। ৬টি ছক্কা ও ৬টি চার হাঁকান বিরাট। ভারত জেতে ৬ উইকেটে। ৩ ম্যাচের সিরিজে প্রথম ম্যাচ জিতে শক্তপোক্ত অবস্থানে ভারত।