ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে সহজে ছাড়ার পাত্র নয় তা চেন্নাইতে তাদের সহজ জয় বুঝিয়ে দিয়েছিল। ফলে কটকে মরণবাঁচন লড়াইতে তারা শেষ কামড় দেবে এটা পরিস্কার ছিল। তাই দিলও। ৩১৫ রান করে ৩১৬ রানের টার্গেট দিয়েছিল ভারতকে। আর খেলার একটা সময়ে ভারত জিততে আদৌ পারবে কিনা, তা নিয়ে নিশ্চিত করে বলার উপায় ছিলনা। অবস্থা আরও জটিল হয় বিরাট আউট হওয়ার পর। রোহিত, রাহুল, বিরাটরা যেমন রান তুলেছেন, তেমনই জয়ের আশা জাগিয়ে নিয়মিত এদের প্যাভিলিয়নমুখীও করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলাররা। এদিন তাই কারও একার কৃতিত্বে ভারতের পক্ষে ম্যাচ বার করে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিলনা। টিম গেমের দরকার ছিল। আর সেটাই হল। এদিন টিম গেম খেলে ৪ উইকেটে ম্যাচ জিতল ভারত। জিতে নিল একদিনের সিরিজও।
টস জিতে কটকের বারাবটি স্টেডিয়ামে এদিন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথমে ব্যাট করতে পাঠান বিরাট কোহলি। ব্যাট করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিয়মিত উইকেট যেমন পরতে থাকে তেমন রানও উঠতে থাকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রতিটি ব্যাটসম্যানই কিন্তু দলের খাতায় একটা রান যোগ করে গেছেন। ফলে দলের রান উঠতে থাকে। লিউইস (২১), হোপ (৪২), হেটমায়ার (৩৭), চেস (৩৮) এক এক করে যেমন ফেরেন। তেমন দলের খাতায় রানও দিয়ে যান। এদিন ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান করেন পুরান। ৮৯ রানের একটা দুরন্ত ইনিংস খেলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে দলের জন্য অনবদ্য ইনিংস উপহার দেন পোলার্ডও। ৭৪ রান করে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকেন তিনি। হোল্ডার করেন ৭ রান। ক্যারিবিয়ানরা ৫ উইকেট হারিয়ে তোলে ৩১৫ রান। ভাল ইনিংস, ভাল রান। যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং।
৩১৬ করলে জিতবে এই অবস্থায় রান তাড়া করতে নেমে দুর্দান্ত শুরু করেন রোহিত শর্মা ও কেএল রাহুল। রাহুল যে খেলা এখন খেলছেন তাতে শিখর ধাওয়ানের ওপেনিংয়ের জায়গা নিয়ে টানাটানি পড়ে যেতে পারে। পরপর ৩টি একদিনের ম্যাচের ৩টিতেই দারুণভাবে সফল তিনি। সঙ্গে রোহিত শর্মার মত ক্লাস খেলোয়াড়ের ব্যাটিং তো ছিলই। দলের ১২২ রানের মাথায় রোহিত শর্মা আউট হন। ৬৩ রান করেন তিনি। ৭৭ রান করে এরপর ফেরেন কেএল রাহুল। তখন ক্রিজে বিরাট রয়েছেন। ওপেনাররা দুরন্ত শুরু দেওয়ার পর বিরাটের জন্য দরকার ছিল মিডল অর্ডারে একটা ভাল সঙ্গত। যাতে রান ওঠে টার্গেটকে তাড়া করে। কিন্তু এখানেই ৭ রানে শ্রেয়স আইয়ার, ৭ রানে ঋষভ পন্থ ও ৯ রানে কেদার যাদব প্যাভিলিয়নে ফেরেন। যে খেলা শুরু থেকে ভারতের দিকে ঝুঁকে ছিল। সেই খেলা ক্রমশ ক্যারিবিয়ানদের দিকে ঝুঁকতে থাকে। কারণ এরপর বিরাটের সঙ্গে সঙ্গত দেওয়ার জন্য মাত্র ২ জন খেলোয়াড় ছিলেন। রবীন্দর জাদেজা ও শার্দূল ঠাকুর।
কেদার ফেরার পর বিরাট তাঁর ছন্দে খেলে যান। তাঁকে দারুণ সঙ্গত দিতে থাকেন জাদেজা। সঙ্গে রানও তুলতে থাকেন। ২ জনের পার্টনারশিপ ফের ভারতকে জয়ের দিকে ক্রমশ টেনে নিয়ে যেতে থাকে। মাঝেমধ্যেই চার মেরে রান ও বলের ফারাক কমাতে শুরু করেন ২ জনেই। কিন্তু যখন ৩০ বলে ২৩ রান দরকার, এই অবস্থায় বিরাট বোল্ড হয়ে ফেরেন। ফের চাপ তৈরি হওয়ার কথা। কিন্তু শার্দূল ঠাকুর নেমেই চার মেরে চাপ কমাতে শুরু করেন। এরপর শার্দূল ঠাকুর একটি ছক্কা ও একটি ৪ হাঁকিয়ে খেলা সহজ করে দেন। ৪ মেরে শেষ পেরেকটা মেরে দেন জাদেজা। ৮ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতে যায় ভারত। ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হন বিরাট কোহলি। ভারত প্রথম ম্যাচ হেরেও ৩ ম্যাচের সিরিজ জেতে ২-১ ব্যবধানে। সিরিজের সেরা হন রোহিত শর্মা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর এবার ভারত মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কার। নতুন বছরের ৫ জানুয়ারি প্রথম টি-২০-তে মুখোমুখি হচ্ছে ভারত ও শ্রীলঙ্কা।