নিউজিল্যান্ডের হ্যামিল্টনে হারা ম্যাচ জিতল ভারত। যে জয় এল পরতে পরতে নাটকীয় মুহুর্তের মধ্যে দিয়ে। রুদ্ধশ্বাস মুহুর্তের মধ্যে দিয়ে। শেষ বলে ২টি ছক্কা হাঁকিয়ে জয় এল ভারতের ঝুলিতে। রোহিত শর্মার ব্যাট টাই ম্যাচের সুপার ওভারের শেষ ২টি বলে ম্যাজিক দেখাল। নিউজিল্যান্ডের দুর্ভাগ্য ছাড়া এদিনের হার যেমন আর কিছুই নয়, ঠিক তেমনই ভারতের ভাগ্য ছাড়া এই জয়কে আর কিছুই বলা যায়না।
সুপার ওভারের শেষ ২ বলে ভারতের জয়ের জন্য দরকার ছিল ১০ রান। সেটা পরপর ২ বলে ২টি ছক্কা হাঁকিয়ে জিতে নেয় ভারত। ম্যাচের সেরা হন রোহিত শর্মা। এদিনের রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে জয় দিয়ে নিউজিল্যান্ডে ইতিহাস লিখল ভারত। এই প্রথম নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টি-২০ সিরিজ জিতল টিম ইন্ডিয়া।
৫ ম্যাচের টি-২০ সিরিজের প্রথম ২টি ম্যাচ হেরেছে নিউজিল্যান্ড। তাদের সিরিজ জিততে ৩টি ম্যাচই জিততে হত। অন্যদিকে ভারত এদিনই জয় দিয়ে সিরিজ পকেটে পুরতে চাইছিল। এই অবস্থায় হ্যামিল্টনে টস জিতে প্রথমে ভারতকে ব্যাট করতে পাঠায় নিউজিল্যান্ড। ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই এদিন ছন্দে ছিলেন রোহিত শর্মা ও কেএল রাহুল। ষষ্ঠ ওভারে বেনেটের প্রথম বলে ১ রান করেন রাহুল। ব্যাট হাতে দ্বিতীয় বলে ছক্কা হাঁকান রোহিত। তৃতীয় বলেও ছক্কা। চতুর্থ বলে ৪ মারেন হিটম্যান রোহিত। পঞ্চম বলেও ফের চার। ষষ্ঠ বলে ফের ছক্কা হাঁকান তিনি। ২৩ বলে ৫০ করেন। ষষ্ঠ ওভারে আসে ২৭ রান।
এক লাফে ভারত পৌঁছে যায় ৬ ওভারে ৬৯ রানে। এখান থেকে অবশ্য খেলায় ফেরে নিউজিল্যান্ড। রান অনেকটা রুখে দেয়। রাহুল ফেরেন ২৭ রান করে, রোহিত ৬৫ রান করে। ৩ রানে আউট হন শিবম দুবে। এখান থেকে শ্রেয়স আইয়ার ও বিরাট খেলা টানেন। শ্রেয়স ফেরেন ১৭ রান করে। বিরাট আউট হন ৩৮ রান করে। পাণ্ডে ১৪ ও জাদেজা ১০ রান করে অপরাজিত থাকেন। ভারত করে ১৭৯ রান। শেষ ওভারে আসে ১৪ রান।
১৮০ রান করলে জিতবে। এই টার্গেট তাড়া করতে নেমে নিউজিল্যান্ডও ছন্দে শুরু করে। এদিন ভারতের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বোলার যশপ্রীত বুমরাহ জঘন্য বোলিংয়ের স্বাক্ষর রাখেন। গাপটিল ৩১ রান করে ফেরেন। তারপরই পাঁজরে চোট পাওয়া মুনরো ফেরেন ১৪ রান করে। একাই দলের হাল ধরেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। ৯ রান করে স্যান্টনার ও ৫ রান করে গ্র্যান্ডহোম ফেরার পরও কেনের ব্যাট চলতে থাকে। আর সেটাই নিউজিল্যান্ডকে ক্রমশ জয়ের দিকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে।
১৭ তম ওভারে বুমরাহকে মেরে ম্যাচ হাতের প্রায় কব্জায় নিয়ে চলে আসেন একা উইলিয়ামসন। সঙ্গত দিচ্ছিলেন টেলর। শেষ ওভারে নিউজিল্যান্ডের জয়ের জন্য দরকার ছিল ৯ রান। সেখানে মহম্মদ সামির প্রথম বলেই ছক্কা ম্যাচকে কার্যত জয়ে নিয়ে চলে যায় কিউয়িদের জন্য। ৫ বলে ৩ রান করলে জিতবে এই অবস্থায় কেন উইলিয়ামসন ফেরেন। তখনও ম্যাচ জেতা যায়। শেষে ১ বলে ১ রান দরকার জয়ের জন্য। এই অবস্থায় রুদ্ধশ্বাস ম্যাচের শেষ বলে সামি বোল্ড করেত দেন টেলরকে। ম্যাচ টাই হয়।
টাই ম্যাচের ফয়সালা করার এখন নিয়ম হল সুপার ওভার। ২ দলই ১ ওভার করে খেলবে। নিউজিল্যান্ড প্রথমে ব্যাট করতে নামে। ৯৫ রান করে ফেরা কেন উইলিয়ামসনের মারকাটারি অতিমানবিক শট খেলার হাত তখনও তাজা। তিনি ও সঙ্গে গাপটিল নামেন। প্রথম ২ বলে ২ রান তুললেও পরের ৪ বলে ২টি ৪ ও ১টি ছক্কা হাঁকিয়ে মোট ১৭ রান করেন তাঁরা। ১৮ রান করতে হবে। ভারতের সামনে হারা ম্যাচ জেতার সুযোগ এলেও লক্ষ্য ছিল কঠিন। ব্যাট করতে নামেন রোহিত ও রাহুল।
রোহিত প্রথম বলে ২ রান, দ্বিতীয় বলে ১ রান করেন। রাহুল তৃতীয় বলে ৪ হাঁকান। পরের বলে ফের ১ রানই আসে। ৪ বল পরে ভারতের রান দাঁড়ায় ৮। জিততে গেলে করতে হবে ১৮। ১০ রান করতে হাতে ২টি মাত্র বল। চার, ছয় হাঁকানো ছাড়া রাস্তা নেই। এই অবস্থায় পঞ্চম বলে ছক্কা হাঁকান রোহিত শর্মা। শেষ বলে ৪ রান দরকার। এই অবস্থায় টিম সাউদিকে ফের সপাট শটে করে দেন বাউন্ডারি পার। পরপর ২ বলে ২টি স্বপ্নের ছক্কা হাঁকিয়ে এই রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে ভারতকে জয় এনে দেন রোহিত। এদিন ম্যাচের সেরাও হন তিনি। সিরিজ ভারতের পকেটে। এবার হোয়াইট ওয়াশের লক্ষ্যে ছুট। পরের ম্যাচ আগামী শুক্রবার।