রুদ্ধশ্বাস জয়, ভাঙা দল নিয়েও সিংহবিক্রমে সিরিজ জিতল ভারত
অস্ট্রেলিয়াকে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পরাস্ত করতে ভারতের ১ নম্বর দল না হলেও চলে। সেটা প্রমাণ করে দিলেন দলের তরুণ মুখেরা। অজিদের হারিয়ে টেস্ট সিরিজ জিতল ভারত।
ব্রিসবেন : ১৮ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতল ভারত। শুনে মনে হতেই পারে একদিনের বা টি-২০ ক্রিকেটের ফলাফল বলা হচ্ছে। কিন্তু এটা হল টেস্টে।
অবাক হওয়ার মত হলেও টেস্ট ম্যাচ যে এমন রুদ্ধশ্বাস টানটান পর্যায়ে পৌঁছতে পারে তা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন ছিল। অস্ট্রেলিয়াকে এদিন ১৮ বল বাকি থাকতেই ভারত হারিয়েই দিল না, এই টেস্ট জেতার সঙ্গে সঙ্গে টেস্ট সিরিজও ২-১ ব্যবধানে জিতে নিল তারা।
এই জয়ের জন্য ঋষভ পন্থ ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হলেও, দাবিদার ছিল একাধিক তরুণ মুখ। যাঁদের ডেবিউ হল এই টেস্টে।
এদিন ভারত আরও একটি রেকর্ড গড়ল। ব্রিসবেনে গাব্বার পিচে এই প্রথম ভারত কোনও টেস্ট জিতল। এর আগে কখনও এই পিচে টেস্ট জেতেনি ভারত।
প্রথম টেস্ট অস্ট্রেলিয়া জেতে। দ্বিতীয়টি ভারত। তৃতীয় টেস্টে অজিদের জয় প্রায় নিশ্চিত ছিল। কিন্তু সেই ম্যাচ ড্র হয়। তাই চতুর্থ টেস্টে যে জিতবে সিরিজ তার, এই অবস্থায় খেলতে নেমে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া ভাল অবস্থায় পৌঁছে যায়।
প্রথম ইনিংসে ৩৬৯ করে অজিরা। ভারত খেলতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায়। যে চাপ থেকে ভারতকে উদ্ধার করে ২ তরুণ মুখ ওয়াশিংটন সুন্দর ও শার্দূল ঠাকুর। অনেক লড়ে ভারত করে ৩৩৬ রান।
৩৩ রানের লিড নিয়ে ব্যাটিং শুরু করে অজিরা। এবার লাবুশেন বড় রান করতে না পারায় অজিরা করে ২৯৪ রান। আর ৩৩ রানের লিড তো ছিলই। ফলে ভারতের সামনে জয়ের জন্য টার্গেট দাঁড়ায় ৩২৮ রান। যা চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করে তোলা অত্যন্ত কঠিন কাজ ছিল। তাও যদি ভারতের প্রথমসারির দল বলতে যা বোঝায় তা থাকত।
কিন্তু ব্যাটিংয়ে বিরাট নেই, বড় ভরসা জাদেজার চোট, বুমরাহ বল করতে পারছেন না, সামি বল করতে পারছেন না। চোট ছিল ঋষভ ও মায়াঙ্ক আগরওয়ালের।
এই অবস্থায় ওয়াশিংটন সুন্দর, শার্দূল ঠাকুর, নভদীপ সাইনি, নটরাজন ও মহম্মদ সিরাজের হাতে ছিল বোলিং বিভাগের দায়িত্ব। সব বোলারই কার্যত নতুন ও অনভিজ্ঞ। কিন্তু তাঁদের পরাক্রমে কার্যত অজিদের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হয়ে যায়।
৩২৮ টার্গেট তাড়া করতে নেমে শুরুতেই রোহিত শর্মার মত হেভিওয়েট ব্যাটসম্যান আউট হয়ে ফেরেন। সেখানেও ব্যাটিংয়ের হাল ধরেন এক তরুণ মুখ। শুভমান গিল করেন ৯১ রান। যা ভারতকে জয়ের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করে। মাঝে রাহানে ২৪ ও পূজারা ৫৫ রানের ইনিংস খেলে সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করেন।
ফলে পরিস্থিতি পঞ্চম দিনে এসে ঠেকে একদম একদিনের ম্যাচের মত। বল বাকি ও রান বাকির গুনতি শুরু করে দেন সকলে। আর সেখানেই ক্রিজে ঝড় তোলেন ঋষভ পন্থ।
ঋষভের তাণ্ডবে ভারত দ্রুত পৌঁছতে থাকে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে। শেষে সুন্দরের ২২ রান ও ঋষভের শেষ পর্যন্ত টিকে থেকে অপরাজিত ৮৯ রানে ভর করে ভারত ১৮ বল বাকি থাকতেই এক স্বপ্নের জয় ছিনিয়ে নেয়।
প্রমাণ করে দেয় ভারতের ১ নম্বর দল বলে আসলে কিছু হয়না। দল গড়তে এখন ভারতের হাতে অনেক প্রতিভা। এ বলে আমায় দেখ তো ও বলে আমায় দেখ।
বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি ভারতের ঘরেই থেকে গেল এদিনের জয়ের পর। টেস্ট সিরিজের অবশ্য সেরা হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্যাট কামিন্স।