কাকে ছেড়ে কার কথা দিয়ে শুরু করা উচিত বুঝে ওঠা যাচ্ছে না। চাহাল, রায়না, ধোনি নাকি যুবির একটা ওভারের কামাল। ভারত বেঙ্গালুরুতে আসলে যেটা দেখাল সেটাকেই হয়তো টিম গেম বলে। সবাই তার কাজটা মন দিয়ে করলে জয়টা আপনিই হাতে চলে আসে। যার ফল হাতেগরম মিলেছে। ৭৫ রানে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে টি-২০ সিরিজও ইংল্যান্ডের হাত থেকে কেড়ে নিলেন বিরাট কোহলি।
ভারতের ২০৩ রানের ইনিংসকে তাড়া করতে নেমে ঠিকঠাক ব্যাট করছিল ইংল্যান্ড। ১২ তম ওভারে বিরাট ফাটকা খেলার মত রায়নার হাতে বল তুলে দেন। আর সেই ওভারেই ইংল্যান্ড ২৩ রান তুলে নিয়ে জয়ের লক্ষ্যে রানরেট হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়। যেখানে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল ইংল্যান্ড ম্যাচ জিতে সিরিজ পকেটে পুরেই নেবে। কিন্তু ১৪ তম ওভারের ম্যাজিক তখনও অপেক্ষায়। ১৪ তম ওভারে চাহাল পরপর দু বলে রুট আর মর্গানকে প্যাভিলিয়নে ফেরানো খেলার মোড় নিমেষে ঘুরিয়ে দেয়। এই ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি ইংল্যান্ড। এরপর মাত্র ১৮ বলের মধ্যে গোটা ইংল্যান্ড দলটা তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ে।
চাহালের ঝুলিতে আসে ৬টি উইকেট। ১৬.৩ ওভারে গোটা ইংল্যান্ড দল আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরে। এদিন ম্যাজিক শুরু হয় হয় রায়নাকে দিয়ে।
সেকথায় পরে আসছি। তার আগে ১৮ তম ওভারে তখন জর্ডনের হাতে বল। ব্যাটে ধোনি। প্রথম বলে ১ রান। স্ট্রাইকে যুবরাজ। দ্বিতীয় বল দাঁড়িয়ে প্যাভিলিয়নে পাঠিয়ে দিলেন যুবি। তৃতীয় বল আবার ৬। এবার কিন্তু গোটা মাঠ গরম হয়ে উঠেছে। গলা ফাটিয়ে যুবরাজের জয়ধ্বনি চলছে। চতুর্থ বল। ফের ছয় মারার শট। কিন্তু ৪। কম কী! মাঠ তখন আনন্দে উদ্বেল। পঞ্চম বলে একটু ফ্ল্যাট শট। কিন্তু যুবির শট তো! ৬ না হয়ে যায় কোথায়! ফের ৬। ষষ্ঠ বলে একটু ইয়র্কার ধাঁচে করে শেষ রক্ষার চেষ্টা করলেন বিধ্বস্ত জর্ডন। কাজও হল। শেষ বলে ১ রান। কিন্তু এই রুদ্ধশ্বাস ওভার ম্যাচের মোড়ই ঘুরিয়ে দিল। ভারতকে ২০০ রানের লক্ষ্যমাত্রা কার্যত নিশ্চিত করে দিলেন যুবি। সঙ্গে জয়ের জল্পনাও। এরপরের ২ ওভারে ধোনি, ঋষভ, হার্দিক পাণ্ডিয়ারা মিলে ভারতকে ২০২ রানে পৌঁছে দেন। যা প্রশ্নাতীতভাবেই ইংল্যান্ডের জন্য কঠিন লক্ষ্য স্থির করে দেয়।
এদিনও টস জিতে বল করার সিদ্ধান্ত নেয় ইংল্যান্ড। ব্যাট করতে নেমে দ্রুত বিরাটের উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ভারত। কিন্তু সেই চাপ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। রায়নার বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে বিরাটের উইকেট হারানোর দুঃখ ভুলে যায় ভারত। রাহুলের সঙ্গে জুটি বেঁধে ভারতের স্কোর বোর্ডকে তরতরিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন রায়না। এরপর রাহুলের উইকেট পড়ার পর ধোনির সঙ্গে তাঁর জুটি ইংল্যান্ডের ঘুম উড়িয়ে দেয়। স্কোর বোর্ডে রানের চাকা দ্রুত গতিতে ঘুরতে থাকে। ৫টা ছয় ও ২টো চার মেরে ব্যক্তিগত ৬৩ রানের মাথায় রায়না প্যাভিলিয়নে ফেরার পর ধোনি রানের গতি বজায় রাখেন। সমান বিধ্বংসী চেহারা নিয়ে ৫টা চার ও ২টি ছয় মেরে ৫৩ রানে ম্যাচের শেষ প্রান্তে এসে আউট হন তিনি।
২০৩ রানের বিশাল টার্গেট তাড়া করতে নেমে শুরুতেই বিলিংসের উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। ওই ওভারেই একটি নিশ্চিত রান আউটের সহজ সুযোগ নষ্ট করেন ভারতীয় স্পিনার চাহাল। ঠান্ডা মাথার ধোনিও যা দেখে মাঠেই চরম বিরক্তি প্রকাশ করে ফেলেন। কিন্তু সেই চাহালই পরে দলকে জেতানোয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাটা নিলেন। আর হাসতে হাসতে চাহালের পিঠ চাপড়ে দিলেন ধোনি। ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ ও ম্যান অফ দ্যা সিরিজ হলেন চাহাল।
এদিনের ম্যাচে প্লেয়ার অফ দ্যা ম্যাচ হয়েছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। আর প্লেয়ার অফ দ্যা সিরিজের ট্রফি গেছে যশপ্রীত বুমরাহর হাতে। অর্থাৎ টি-২০ সিরিজে ভারতের জয়ের ইতিহাস লিখলেন বোলাররাই। এদিনের সিরিজ হেরে ইংল্যান্ড ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট, ওয়ান ডে ও টি-২০ সিরিজ হেরে বাড়ি ফিরছে। খালি হাতে এসেছিল ভারতে। খালি হাতেই দেশে ফিরতে হল মর্গান, মইন, স্টোকসদের।