১৯৮৯ সাল থেকে জম্মু কাশ্মীরে জঙ্গি কার্যকলাপ মাথাচাড়া দেয়। সেই থেকে এখনও পর্যন্ত নানা সময়ে জঙ্গিহানার ঘটনা ঘটেছে উপত্যকায়। কিন্তু এত বড় জঙ্গি হামলার ঘটনা কখনও ঘটেনি। সেই অর্থে এক রক্তাক্ত ইতিহাস গড়ল বৃহস্পতিবারে সিআরপিএফ কনভয়ে জঙ্গি হামলা।
বৃহস্পতিবার জম্মু শ্রীনগর হাইওয়ের ওপর সিআরপিএফ কনভয়ে যে হামলা জঙ্গিরা ঘটাল তা কার্যতই ভয়ংকর। জম্মু কাশ্মীর পুলিশের সূত্র ধরে সংবাদ সংস্থা আইএএনএস জানাচ্ছে, এদিন ২ হাজার ৫৪৭ জন সিআরপিএফ জওয়ানকে নিয়ে ৭৮টি বাসের একটি কনভয় জম্মু-শ্রীনগর হাইওয়ে ধরে শ্রীনগরের দিকে আসছিল। শ্রীনগর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে লেথপোরার কাছে হাইওয়েতে আচমকাই কনভয়ে ঢুকে পড়ে একটি এসইউভি। বিস্ফোরক বোঝাই সেই গাড়িটি কনভয়ের একটি বাসে এসে ধাক্কা মারে। সেখানেই বিস্ফোরণ হয়। গাড়িটিতে ২০০ কেজি আরডিএক্স ছিল বলে মনে করছে পুলিশ। বাসটি প্রায় পুরোটাই ধ্বংস হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে উড়ে যায় বিস্ফোরক বোঝাই গাড়িটিও। ফলে একে আত্মঘাতী হামলা বলেই ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। বিস্ফোরণের জেরে দ্বিতীয় একটি বাসেরও আংশিক ক্ষতি হয়। ভয়ংকর বিস্ফোরণের জেরে সিআরপিএফ জওয়ানদের অনেকের কোমরের নিচ থেকে উড়ে যায়। অনেকের হাত, পা ছিন্ন হয়ে শরীর থেকে আলাদা হয়ে যায়।
এই বিস্ফোরণ ঘটানোর পর সিআরপিএফ জওয়ানদের কিংকর্তব্যবিমূঢ় পরিস্থিতি থেকে বার হওয়ার আগেই শুরু হয় জঙ্গিদের গুলিবর্ষণ। সিআরপিএফ কনভয় লক্ষ্য করে লাগাতার গুলি বর্ষণের পর সেখান থেকে চলে যায় জঙ্গিরা। এমনকি গ্রেনেড হামলা হয় বলেও খবর। এভাবে সিআরপিএফ-কে কার্যত অসহায় করে এমন পরিকল্পনামাফিক হামলায় রীতিমত হতবাক সিআরপিএফ আধিকারিকরা। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৪২ জন সিআরপিএফ জওয়ান শহিদ হয়েছেন। এখনও বেশ কয়েকজন সিআরপিএফ জওয়ান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তেই পারে।
ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার বিকেল সওয়া ৩টেয়। দ্রুত সেখানে হাজির হন সেনা আধিকারিকরা। সিআরপিএফ-এর আইজি হাজির হন। গোটা এলাকা ঘিরে শুরু হয় উদ্ধারকাজ। রক্তে ভেসে যাওয়া এলাকা থেকে আহত জওয়ানদের হাসপাতালে পাঠানো হয়। রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাজপথ তখন এক ধ্বংসস্তূপের চেহারা নিয়েছে। চারদিকে চাবড়া চাবড়া রক্ত আর ধ্বংসাবশেষ।
ঘটনার পরই ঘটনার দায় স্বীকার করে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ। ঘটনার পর তারা একটি ভিডিও প্রকাশ করে। যেখানে বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি নিয়ে কনভয়ে ঢুকে পড়া সুইসাইড বম্বার আদিল আহমেদ দার-কে সামনে আনা হয়। তাকে জইশ কমান্ডার বলে দাবি করা হয়। গাড়িটি বিস্ফোরণের পর যার মৃত্যু হয়েছে।
এমনিতেই প্রতিকূল আবহাওয়া। এই হাইওয়েও বরফের কারণে বন্ধ থাকার পর বুধবার থেকে ফের চালু হয়েছে। রাস্তার পাশে এখনও বরফ পড়ে। রাস্তা ভিজে। ঝাপসা চারধার। আকাশ মেঘলা। দৃশ্যমানতাও তলানিতে। তারওপর হাড় কাঁপানো ঠান্ডা। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এমন হামলা রীতিমত নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা দেশকে। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা