ডেভিড ওয়ার্নারের চওড়া ব্যাট আর ভুবনেশ্বর কুমার, মুস্তাফিজুরের বোলিংকে হাতিয়ার করে নবম আইপিএল চ্যাম্পিয়নের শিরোপা ঘরে তুলল হায়দরাবাদ। গেইলের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বিরাটরা কিন্তু বিনা যুদ্ধে হার মানেনি। লড়াই ছিল টক্করে টক্করে। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে কখনও পাল্লা ভারী হয়েছে বিরাটদের তো কখনও ওয়ার্নারদের। কিন্তু কথায় বলে যার শেষ ভাল তার সব ভাল। আর শেষই ভালোটা এদিন লেখা ছিল হায়দরাবাদের নামে। বিরাট কোহলিদের ৮ রানে হারিয়ে নবম আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হল হায়দরাবাদ। দোরগোড়ায় পৌঁছেও আপিএলের ট্রফি সেই অধরাই থেকে গেল বেঙ্গালুরুর জন্য।
টস জিতে এদিন প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় হায়দরাবাদ। ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই রানের গতি বাড়ানোর দিকে নজর দেন দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও শিখর ধাওয়ান। পাওয়ার প্লে কে কাজে লাগিয়ে শুরুতেই উইকেট না হারিয়ে বড় রান তুলে রাখা টি-২০তে যে কোনও দলের কাছে স্বপ্ন। এদিন ফাইনালের মত চাপের খেলায় ঠিক সেই স্বপ্নের ইনিংসটাই খেলে দিলেন হায়দরাবাদের ক্যাপ্টেন তথা প্রধান ভরসা ডেভিড ওয়ার্নার। অবশ্যই ফর্মে না থাকলেও এদিন ওয়ার্নারকে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছেন শিখর। ষষ্ঠ ওভারে চহলের বলে ক্যাচ দিয়ে শিখর প্যাভিলিয়নে ফেরার পরও কিন্তু রানের গতি কমেনি। চার, ছয়ের বন্যায় ওভার পিছু গড়ে প্রায় ১০ রানের ইনিংস বজায় রাখেন একা ওয়ার্নারই। ১০ ওভার পর্যন্ত রানের গতি বজায় থাকলেও হেনরিকেজ আউট হওয়ার পর যুবরাজ মাঠে নামলেও রানের গতি কিছুটা হলেও ঝিমিয়ে পড়ে। ১৪ তম ওভারে অরবিন্দের বলে ৬৯ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন ডেঞ্জারম্যান ওয়ার্নার। ক্রিজে তখন যুবরাজ ও হুডা। ব্যাট হাতে ওয়ার্নারের অভাব পূরণও করে দেন যুবরাজ। তবে সেই জুটিও স্থায়ী হয়নি। মাত্র তিন রান করে ১৬ তম ওভারেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন হুডা। আর ১৭ তম ওভারের শুরুতেই যুবরাজকে আউট করেন জর্ডন। ফলে একসময়ে ২০০ রানের লক্ষ্য ছোঁয়া হায়দরাবাদের জন্য সহজ কাজ হবে বলে মনে হলেও তা স্লগ ওভারে পরপর উইকেট হারিয়ে প্রায় অসম্ভবে গিয়ে ঠেকে।
গোটা চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম তখন হায়দরাবাদকে কম রানের মধ্যে বেঁধে ফেলার স্বপ্নে বিভোর। আর ঠিক সেই সময়েই সাক্ষাৎ আতঙ্কের মত সামনে এল বেন কাটিংয়ের চওড়া ব্যাট। একের পর এক বলে শুরু হল চার আর ছয়ের মিছিল। শেষ ওভারে ওয়াটসনের বলে তিনটে ছয়, একটা চারের হাত ধরে মোট ২৪ রান স্কোরের খাতায় যোগ করেন কাটিং। ২০ ওভারের শেষে হায়দরাবাদের স্কোর দাঁড়ায় ২০৮ রান। ২০৯ রানের পাহাড় প্রমাণ রানের চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে ফাইনাল ম্যাচে ঘরের মাঠে ব্যাট করতে নামে বেঙ্গালুরু। ব্যাট করতে নেমে গেইল তাঁর নিজের খেলা খেলতে শুরু করেন। শুরু থেকই রানের গতি বাড়াতে থাকেন গেইল। অন্যদিকে ঝুঁকির রাস্তায় না হেঁটে একরান করে নিয়ে গেইলকে ঝোড়ো ইনিংস খেলার সুযোগ দিতে থাকেন বিরাট। রানের পাহাড়কে তাড়া করতে গেলে যে ঝোড়ো শুরুটা বেঙ্গালুরুর জন্য দরকার ছিল সেই লক্ষ্যে সম্পূর্ণ সফল হয় তারা। গেইলের কাঁধে ভর করে চিন্নাস্বামীতে যখন চার, ছয়ের বন্যা বইছে, গোটা স্টেডিয়ামটা যখন বেঙ্গালুরুর জন্য গলা ফাটাচ্ছে, ঠিক তখনই রানের অশ্বমেধে কিছুটা লাগাম দেয় মুস্তাফিজুরের দুরন্ত বোলিং। তবে তা নামমাত্রই। পরের ওভার থেকে ফের স্বরূপে ফিরে আসেন গেইল। অষ্টম ওভারে বিরাটের তোলা শক্ত ক্যাচ হাতছাড়া করেন ক্যাপ্টেন ওয়ার্নার। বড় উইকেট। তাই ক্যাচ ফস্কানোটা বড় ধাক্কা হয় হায়দরাবাদের কাছে। অবশেষে একাদশ ওভারে গিয়ে প্রথম সাফল্য আসে হায়দরাবাদের জন্য। গেইলকে প্যাভিলিয়নে পাঠান বেন কাটিং। তার ঠিক ২ ওভার পরেই প্লেড অন হয়ে ফিরে যান বিরাটও।
৫৩ রানের মাথায় আউট হাওয়াই শুধু নয় এবারের আইপিএলে ১ হাজার রান সম্পূর্ণ করার রেকর্ডও কান ঘেঁষে হাতছাড়া হয় বিরাটের। এর পরের ওভারে ফের ধাক্কা। এই খেলাকে যিনি একার চেষ্টায় জিতে নিয়ে যেতে পারতেন সেই ডেভিলিয়ার্সকে ব্যাক্তিগত মাত্র ৫ রানের মাথায় প্যাভিলিয়নে পাঠায় বিপুল শর্মার ঘূর্ণি। এরপর এক এক করে উইকেট পড়েছে। আর খেলা ফের মুখ ফিরিয়েছে হায়দরাবাদের দিকে। শেষ লড়াই দেওয়ায় কসুর না করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। অবশেষে ৮ রানে হায়দরাবাদের কাছে হারতে হয় বেঙ্গালুরুকে।