বাংলায় একটা আপ্তবাক্য প্রচলিত। ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি! এদিন কলকাতার দুই ওপেনার ক্রিস লিন ও সুনীল নারিনের পাশবিক ব্যাটিংয়ের চোটে মাঠে সেই দশাই হয়েছিল বিরাটদের। বিশেষত সুনীল নারিন ১৫ বলে ৫০ রান করার পর মাঠে মুখ লুকোনোর জায়গা পাচ্ছিল না বেঙ্গালুরু। ঘরের মাঠে এমন ছেলেখেলার খোরাক হয়ে মাঠে বেঙ্গালুরুর এত দর্শকের সামনে খেলাটা যে বেশ অস্বস্তির তা বাইরে থেকেও বোঝা কঠিন নয়। এদিন চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে টস জিতে বল করার সিদ্ধান্ত নেন গৌতম গম্ভীর। প্রথমে ব্যাট করতে নেমেই বিপর্যয়। প্রথম বলেই ক্যাচ তুলে ফিরতে হয় রান মেশিন ক্রিস গেইলকে। ব্যাট হাতে মনদীপ সিংকে সঙ্গ দিতে মাঠে নামেন বিরাট কোহলি। বিরাটের তোলা সহজ ক্যাচ ফস্কান পীযূষ চাওলা। কলকাতার জন্য বড় ধাক্কা। বিরাটের মত ব্যাটসম্যান জীবন ফিরে পাওয়া মানে হয়তো ম্যাচ বার করে নিয়ে যাওয়া। কমেন্ট্রি বক্সে এমন কথাবার্তার মধ্যেই পরের বল করেন উমেশ যাদব। এলবিডব্লিউ হয়ে আউট বিরাট। প্রাণ ফিরে পাওয়ার পরের বলেই মাঠ ছাড়তে হওয়ায় তখন বোধহয় সবচেয়ে খুশি পীযূষ চাওলা। এরপর এবি ডেভিলিয়ার্স নামলেও নারিনের বলে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয় তাঁকে। দলগত ৩৪ রানে টিমের ৩ ব্যাটিং স্তম্ভকে হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বেঙ্গালুরু। এই অবস্থা থেকে আরসিবি-কে সম্মানজনক অবস্থায় নিয়ে যেতে থাকেন মনদীপ সিং ও ট্রেভিস হিড। ৫২ রান করে মনদীপ আউট হওয়ার পরও হিডের ব্যাট চলতেই থাকে। আর উমেশ যাদবের বিশতম ওভারে ২১ রান তুলে ১৫৮ রানের লড়াই করার মত স্কোর খাড়া করে আরসিবি। ৭৫ রানে অপরাজিত থাকেন হিড। চ্যালেঞ্জিং টোটাল। পিচও বোলার সহায়ক। ফলে ১৫৯ রান তোলাটা নেহাত সহজ কাজ নয়। এই অবস্থায় কলকাতার হয়ে ওপেন করতে নামেন ক্রিস লিন ও সুনীল নারিন। এখান থেকেই শুরু মনোরঞ্জনে ভরপুর পাশবিক ব্যাটিংয়ের। যা প্রথম ৬ ওভার স্থায়ী হয়। এমন ৬টা ওভার যা আইপিএলের ইতিহাসে এযাবৎ সবচেয়ে মারমুখী ইনিংস হয়ে রইল। নারিন-লিনের এই ভয়ংকর ব্যাটিং বেঙ্গালুরুর কাছে বিভীষিকার চেয়ে কম নয়। বল যাই হোক তা হয় পৌঁছে যাচ্ছে গ্যালারিতে, নয়তো তীব্র গতিতে পার করছে বাউন্ডারি লাইন। আরসিবির বোলারদের নিয়ে কার্যত পুতুলখেলায় মেতে ওঠেন লিন-নারিন। মাত্র ১৫ বলে ৫০ রানের চোখ জুড়নো ইনিংস খেলেন নারিন। পার করে যান ক্রিস লিনের গড়া মাইলস্টোন। ১৯ বলে ৫০ রান করে আইপিএলের প্রথম ম্যাচেই কামাল দেখিয়েছিলেন ক্রিস। আর এদিন নারিন যে খেলাটা খেললেন তা চক্ষু ছানাবড়া করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। আইপিএলে ২০১৪ সালে চেন্নাই সুপার কিংস প্রথম ৬ ওভারে ১০০ রান করে ছিল। এদিন সেই মারকাটারি রেকর্ডও গুঁড়িয়ে দেয় কেকেআর। লিন-নারিন জুটি করে ৬ ওভারে ১০৫ রান। যা আপাতত নয়া রেকর্ড হয়ে রইল। এদিন আরসিবির সব অঙ্ক, হিসেবনিকেশ ওলটপালট করে দেয় প্রথম ৬ ওভারের ব্যাটিং সুনামি। এরপর জয়টা ছিল সময়ের অপেক্ষা। যা ১৫ ওভার ১ বল নিয়ে সম্পূর্ণ করে কেকেআর। তবে এমন এক দুরন্ত ইনিংস খেলার পরও একটা খিঁচ কিন্তু ছেড়ে গেলেন আগের ২টো ম্যাচ হারা শাহরুখের ছেলেরা। আত্মবিশ্বাসকে তাঁরা দ্রুত অতি আত্মবিশ্বাসে পরিণত করে ফেলছেন। যা এদিন এই একতরফা ম্যাচেও তাঁদের ৪ উইকেট কেড়ে নিয়েছে। ফিল্ডিংয়েও দুর্বলতা ধরা পড়েছে। সামনের ২টো ম্যাচ জিতে কেকেআর যদি পয়েন্ট তালিকার ২ নম্বর জায়গাটা পেতে চায় তবে তাদের সব বিভাগে আরও সতর্ক হতে হবে। মনে রাখতে হবে সবদিন কিন্তু এদিনের মত নাও হতে পারে। এদিন বেঙ্গালুরুকে ৬ উইকেটে হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলে ফের ২ নম্বরে উঠে এল কেকেআর। ব্যাটিং তাণ্ডবের জন্য ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছেন সুনীল নারিন।