আইপিএলে এদিন এক রেকর্ডের অধিকারী হল আরসিবি। সবচেয়ে কম রানে অলআউট হল বিরাটের ছেলেরা। ৯ ওভার ৪ বলে গুটিয়ে গেল ডেভিলিয়ার্স, গেইল, বিরাটকে নিয়ে গড়া লাইনআপ। এক সময়ে রাজস্থান রয়্যালসকে ৫৮ রানে অলআউট করেছিল আরসিবি। আইপিএলে এখনও পর্যন্ত এটাই ছিল সবচেয়ে কম রানে হারের রেকর্ড। সেই আরসিবি-ই এদিন রেকর্ড ভেঙে দিল। মাত্র ৪৯ রানে সব উইকেট হারিয়ে।
এদিন বৃষ্টির জন্য আধঘণ্টা দেরিতে শুরু হওয়া ম্যাচে টস জিতে কলকাতাকে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিলেন বিরাট কোহলি। কিন্তু শুরুতেই যে সুনীল নারিনের ব্যাট আগুন ঝরাতে শুরু করে। পাওয়ার প্লে-তে তাঁর বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ভরসা করে কলকাতা ১০-এর ওপর রান রেট ধরে রাখে। প্রথম ৬ ওভারে যে হারে রান আসা উচিত ছিল তাও আসে। যদিও গৌতম গম্ভীর ও ষষ্ঠ ওভারে সুনীল নারিন আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। খেলায় যদিও তখন ভাল অবস্থায় কলকাতা। তখনও বিশাল ব্যাটিং লাইনআপ। ফলে চিন্তার তেমন কিছু ছিল না। কিন্তু এরপর শুরু হল কলকাতার দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিং। যার সুফল ঘরে তুলতে ভুল করেননি বেঙ্গালুরুর বোলাররা। পরপর উইকেট হারিয়ে ঝোড়ো শুরুর সবটুকু ধুয়েমুছে সাফ হয়ে যায়। জঘন্য ব্যাটিং যে কতটা জঘন্য ছিল তা শেষের দিকে আরও পরিস্কার হয়ে যায় যখন কলকাতার ২০ ওভার পর্যন্ত খেলতে পারবে কিনা তা নিয়েই সন্দেহ ছিল। ১৮ ওভারের মধ্যেই কলকাতা ৯ উইকেট হারায়। প্রথম ৬ ওভারে যে টিমের ৬৫ রান ছিল। সেই টিম পুরো ২০ ওভারও ইডেনের পিচে টিকতে পারল না। ১৯ ওভার ৩ বলে খেলা শেষ হয় কলকাতার। ১৩১ রানে গুটিয়ে যায় কলকাতার বড় রানের স্বপ্ন।
কলকাতার ব্যাট শেষ হওয়ার পর ইডেনে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছিল আক্ষেপ। সেইসঙ্গে প্রশ্ন কলকাতার একমাত্র ব্যাটিং ভরসা কী তাহলে এখন সুনীল নারিন! নারিন আউট হওয়া মানেই দল শেষ! কিন্তু এসব প্রলাপ, হাহাকার সবই ছিল কিছু মুহুর্তে। কারণ পিকচার তখনও বাকি ছিল! যে কেকেআর সমর্থকেরা হাহুতাস করছিলেন। বেশি রাত না করে অনেকে বাড়ি ফিরে যাওয়ারও প্ল্যান করছিলেন। সেই কেকেআর সমর্থকেরাই এদিন খেলা শেষ হওয়ার পরও পুরস্কার বিতরণী পর্যন্ত থেকে গেলেন। আর যে আরসিবি সমর্থকেরা কলকাতার ব্যাটিং লাইন আপের দুর্দশার পর সহজ জয়ের উল্লাসে আত্মহারা ছিলেন। তাঁদের চোখে দেখা গেল জল।
১৩১ রান কোনও বড় টোটাল নয়। ধরে ধরে রান উঠে যায়। এই অবস্থায় ব্যাট করতে নামে আরসিবি। কিন্তু প্রথম ওভারেই বিরাট কোহলি আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরার পর নামেন মনদীপ সিং। দ্বিতীয় ওভারে তিনিও আউট। এবার কিছুটা চাপে আরসিবি। তবে রান কম। ক্রিজে তখনও ডেভিলিয়ার্স, গেইল। ভয়ের কোনও কারণ নেই মনে হলেও তা মুহুর্তে আতঙ্কে পরিণত হল যখন দলের ১২ রানের মাথায় ক্যাচ তুলে প্যাভিলিয়নে ফেরেন ডেভিলিয়ার্সও। নামেন কেদার যাদব। কিন্তু ২৪ রানের মাথায় কেদারও আউট। এরপর শুধু এক এক করে ওভার এসেছে। আর এক এক করে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন আরসিবির ব্যাটসম্যানেরা। যে রাত কিছুক্ষণ আগেও উজ্জ্বল মনে হচ্ছিল বিরাটদের, সেই রাতই দুঃস্বপ্নের হয়ে উঠল কিছুক্ষণের ব্যবধানে। মাত্র ৪৯ রানের দলগত রানে অবশেষে থামল আতঙ্কের রাতে ব্যাট করা। কলকাতা জিতল ৮২ রানে।
এদিন ২ দলই কিন্তু ২০ ওভার পুরো ব্যাট করতে পারেনি। এদিন স্টাইলিশ প্লেয়ার অফ দ্যা ডে নির্বাচিত হয়েছেন সুনীল নারিন। যাঁকেই এদিন একমাত্র ব্যাটে রান পেতে দেখা গেছে। আর ম্যাচের সেরা নির্বাচিত হয়েছেন নাইল। যাঁর বিধ্বংসী স্পেল আরসিবি-র খেলোয়াড়দের এদিন রাতটাও ঘুমোতে দেবে
এই হার ভুলতে ভাল সময় লাগবে বিরাটদের। ৭ ম্যাচের শেষে কলকাতা এখন পয়েন্ট টেবিলের ২ নম্বরে। আর এদিনের হারের পর পয়েন্ট টেবিলে সবচেয়ে তলায় চলে গেল আরসিবি। কলকাতার পরের খেলা পুনের বিরুদ্ধে আগামী বুধবার।