বেঙ্গালুরুকে ফিরতি ম্যাচেও হারাল কলকাতা। তবে বেঙ্গালুরু যদি হেরে থাকে তবে তা তাদের খারাপ ফিল্ডিংয়ের জন্য। না হলে কলকাতার এদিনের জয় মোটেও সহজ হত না। বরং হারার সুযোগও ছিল যথেষ্ট। টস জিতে এদিন চিন্নাস্বামীতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের অধিনায়ক দীনেশ কার্তিক। কিছুটা অবাক করে খেলা শুরু হয় পীযূষ চাওলার স্পিন দিয়ে। প্রথম ৬ ওভারে পীযূষ, নারিন, মাভি, জনসনরা বোলিং করে কিছুটা বেঁধেও রাখেন ম্যাককালাম ও ডি কক জুটিকে। পাওয়ার প্লে-র প্রথম ৬ ওভারে বেঙ্গালুরু তোলে ৪০ রান। তারপরেও যে বড় একটা রান উঠছিল তা নয়। ডি কক (২৯) আউট হওয়ার পর অল্প সময়ের ব্যবধানে আউট হন ম্যাককালাম (৩৮)। আর ম্যাককালাম ফেরার পরপরই প্রথম বলে আউট হয়ে ফেরেন ভোরা। এদিন ভাইরাল জ্বরের জন্য খেলতে পারেননি বেঙ্গালুরুর অন্যতম ভরসা ডেভিলিয়ার্স। যা অবশ্যই বেঙ্গালুরুর জন্য বড় ধাক্কা ছিল। এদিকে ভোরা ফেরার পর বিরাট কোহলির সঙ্গে জুটি বাঁধতে মাঠে নামেন মনদীপ সিং। এসময়ে টিমের রানে যখন ভাটার টান তখনই জ্বলে ওঠে বিরাটের ব্যাট। কার্যত এদিন একার কাঁধেই দলকে টেনে নিয়ে যান তিনি। যেখানে এক সময়ে আরসিবি ১৫০ রান পার করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছিলেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা, সেখানে ২০ ওভারের শেষে একা বিরাটই দলকে ১৭৫ রানে টেনে নিয়ে যান। নিজে ৪৪ বলে ৬৮ রান করে অপরাজিত থাকেন। মাঝে অবশ্য মনদীপ (১৯) আউট হয়ে ফেরেন। তাঁর জায়গায় ব্যাট করতে নামেন গ্র্যান্ডহোম। ২০ ওভারের শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে বেঙ্গালুরু তোলে ১৭৫ রান।
১৭৬ রান তাড়া করতে নেমে কলকাতা বেশ ভালই শুরু করে। ক্রিস লিন এবং সুনীল নারিনের জুটি দায়িত্বপূর্ণ ব্যাটিংয়ের পরিচয় দিয়ে রানের গতি বজায় রাখেন। ফলে ৬ ওভারে ৫০ রান পার করতে পারে কলকাতা। তাও কোনও উইকেট না হারিয়ে। যখন কলকাতার ২ সেট ব্যাটসম্যান ভাল রান তুলছেন, ঠিক সেই সময়েই ছন্দপতন ঘটায় বৃষ্টি। প্রবল বৃষ্টির জেরে বন্ধ হয়ে যায় খেলা। তবে বৃষ্টি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ফলে ওভারও কমেনি। ফের খেলতে নেমে কিন্তু সেট ব্যাটসম্যান নারিনকে ফেরান ওয়াশিংটন সুন্দরের জায়গায় আসা স্পিনার এম অশ্বিন। নারিন (২৭) আউট হওয়ার পর হাল ধরে লিন-উত্থাপ্পা জুটি। এরপর উত্থাপ্পা (৩৬) আউট হয়ে ফেরার পর নামেন নীতীশ রাণা। রাণা-লিন জুটি খেলা অনেকটা টানলেও বল ও রানের ফারাক কিন্তু এসময়ে বাড়তেই থাকে। ফলে খেলা ঝুঁকতে থাকে বেঙ্গালুরুর দিকে। ঠিক এই সময়ে বেঙ্গালুরুর জয়ের জন্য যে মানের ফিল্ডিং জরুরি ছিল তা কিন্তু একেবারেই দেখতে পাওয়া যায়নি। বরং সেট ব্যাটসম্যান ক্রিস লিনের ক্যাচ ফেলে দলকে অনেকটা চাপে ফেলে দেন এম অশ্বিন। এছাড়াও গোটা ম্যাচে কখনও রান আউট হাতছাড়া তো কখনও ১ রানের বলকে আটকাতে না পেরে বল বাউন্ডারি পার হওয়া। একের পর এক ফিল্ডিং ব্যর্থতার ফল ভুগতে হয় বেঙ্গালুরুকে। অন্যদিকে নীতীশ রাণা পায়ে টান ধরায় মাঠের বাইরে যান। আসেন রাসেল। গোটা কলকাতা আশা করে বসেছিল রাসেল এখানে চার, ছয় হাঁকিয়ে ম্যাচ বার করে দেবেন। কিন্তু সব আশায় জল ঢেলে প্রথম বলেই ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন রাসেল। ব্যাট করতে নামেন দীনেশ কার্তিক। দীনেশ কার্তিক ও লিনের যুগলবন্দি কিন্তু খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেয়। দুজনের ব্যাট থেকে পরপর আসা চার খেলা দ্রুত কলকাতার দিকে নিয়ে চলে আসে। দীনেশ কার্তিককে যখন একটা দুরন্ত ক্যাচ ধরে বিরাট প্যাভিলিয়নমুখো করেন তখন কলকাতার দরকার আর ৫ রান। ১৯ তম ওভারের শেষ বলে আসে ১ রান। আর শুভমান গিল শেষ ওভারের প্রথম বলেই চার হাঁকিয়ে তুলে দেন বাকি রান। কলকাতা জেতে ৬ উইকেটে।
বিরাট এদিন হারলেন বটে কিন্তু তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৬৮ রান। দুর্দান্ত ফিল্ডিং করেন তিনি। হয়তো তখন বিরাটের মনে হচ্ছিল তবে কী বোলিংটাও করে দিলে ভাল হয়! তবেই দল জিতবে! ম্যাচের পর ক্ষুব্ধ বিরাট সাফ জানান এটাই তাঁদের পাওয়ার কথা। হারের জন্য জঘন্য ফিল্ডিংকে দায়ী করেন তিনি। জানান, এই ফিল্ডিংয়ে এর চেয়ে বেশি কিছু পাওয়ার ছিল না। ৫২ বলে ৬২ রান ও শেষ পর্যন্ত একদিক ধরে রেখে কলকাতাকে জেতানোর জন্য প্লেয়ার অফ দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হন ক্রিস লিন।