৪ ওভার। ২০ রান। ৪ উইকেট। তাও আবার রাহানে, বাটলার, স্টোকস ও বিনির উইকেট। কুলদীপ যাদবের এই স্পেলই এদিন খেলার সবচেয়ে বড় টার্নিং পয়েন্ট হয়ে রইল। চায়নাম্যানের এই স্পেলই এদিন কার্যত শেষ করে দিল রাজস্থানের সব আশা। ইডেনের পিচে আইপিএল রেকর্ড অক্ষুণ্ণ রেখে রাজস্থানকে হারাল কলকাতা। কিন্তু এদিন যাঁরাই প্রথম ৫ ওভার খেলা দেখেছেন, তাঁরা একবাক্যে মেনে নেবেন, এই খেলা রাজস্থান এমন গোহারান হারবে ভাবাই যায়না।
টস জিতে মঙ্গলবার ইডেনে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয় কলকাতা নাইট রাইডার্স। ব্যাট করতে নেমে বিধ্বংসী মেজাজে ইনিংস শুরু করে রাজস্থান রয়্যালস। জস বাটলার ও রাহুল ত্রিপাঠীর ব্যাট থেকে আগুন ঝরতে থাকে। চার আর ছক্কার মিছিল শুরু হয়। প্রায় প্রতিটি বলই বাউন্ডারি পার করতে থাকেন রাজস্থানের এই ২ ওপেনার। তৃতীয় ওভারে মাভির বাটলার ৬ বলে ৪টে চার ও ২টি ছক্কা হাঁকান। এক ওভারে আসে ২৮ রান। মাত্র ৪ ওভার ও ৪ বলেই রাজস্থান তোলে ৬৩ রান। এখানে দাঁড়িয়ে ২০০ রান কেন ২৫০ রানও টার্গেট করা যেত। কিন্তু এখান থেকেই শুরু হয় কলকাতার ঘুরে দাঁড়ানো। ক্রিকেট যে কতটা অনিশ্চয়তার খেলা তা কয়েক ওভারের মধ্যে কলকাতার কামব্যাক থেকেই পরিস্কার। প্রথম ৪ ওভার দেখে যাঁরা ধরে নিয়েছিলেন এদিন কলকাতা শেষ, তাঁরা নিজেদের ভুল ভাবনার জন্য কিছুক্ষণের মধ্যেই পস্তেছেন।
ত্রিপাঠীর উইকেট তুলে কলকাতার জন্য ম্যাজিক শুরু করেন রাসেল। আর সেখান থেকেই রাজস্থানের উইকেট পতনের মিছিল শুরু হয়। ১৫ বলে ২৭ রান করে ত্রিপাঠী আউট হওয়ার পর মাত্র ১১ রান করে কুলদীপের বলে আউট হন রাজস্থান অধিনায়ক রাহানে। কুলদীপের বল ঘুরতে থাকে। আর প্রমাদ গোনা শুরু হয় রাজস্থানের। বাটলার এই মুহুর্তে রাজস্থানের ব্যাটিং স্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। প্রায় সব ম্যাচেই তিনিই ত্রাতার ভূমিকা নিচ্ছেন। তাঁকে আউট করতে পারলে সব দলই কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছে। এই অবস্থায় কুলদীপ সেই স্বস্তির বন্দোবস্ত করে দেন কলকাতাকে। ২২ বলে ৩৯ রান করে ফিরতে হয় বাটলারকে। এরপর এক এক করে সঞ্জু স্যামসন (১২), স্টুয়ার্ট বিনি (১), কে গোথম (৩) এবং বেন স্টোকস (১১)-এর উইকেট পতন রাজস্থানকে কার্যত খাদের কিনারায় ঠেলে দেয়। পরে জয়দেব উনাদকাট কিছু ভাল শট খেলে ম্যাচ বাঁচানোর চেষ্টা করেন। ১৮ বল খেলে গুরুত্বপূর্ণ ২৬ রান দলের খাতায় যোগ করেন জয়দেব। যা রাজস্থানকে কলকাতার জন্য একটা চ্যালেঞ্জ খাড়া করার মত রানে পৌঁছে দেয়। ১৪২ রানে সব উইকেট পড়ে যায় রাজস্থানের। ১৯ ওভারই খেলতে পারে গোটা দল। তাও ১৮ তম ওভারেই সব উইকেট পড়ে যেত, যদি না কৃষ্ণা একটা সহজ ক্যাচ ফেলে দিতেন।
১৪৩ রান করলে জিতবে। এই অবস্থায় খেলতে নেমে শুরুতেই নারিন ঝড় শুরু হয়। প্রথম ৪ বল খেলে ২টি চার ও ২টি ছক্কা হাঁকান তিনি। প্রথম ওভারেই ওঠে ২১ রান। কিন্তু দ্বিতীয় ওভারেই নারিনের উইকেট পড়া রানের গতিতে লাগাম দেয়। এরপর উত্থাপ্পাও ৬ বলে ৪ রান করে প্যাভিলিয়নমুখো হন। ক্রিস লিন ও নীতীশ রাণা রানের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে খেলতে থাকেন। রান তোলার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো নয়, বরং দায়িত্বপূর্ণ মানসিকতার পরিচয় দিতে থাকেন তাঁরা। কিন্তু দলের ৬৯ ও ব্যক্তিগত ২১ রানের মাথায় ফিরতে হয় রাণাকে। ক্রিস লিনের সঙ্গে জুটি বাঁধেন অধিনায়ক কার্তিক। রান বিশাল না হলেও তখন উইকেট পতন জয়ের লক্ষ্য ছুঁতে ভোগাবে। একথা ২ ব্যাটসম্যানই জানতেন। তাই সাবধানী খেলা খেলে টুকটুক করে রান তুলতে থাকেন তাঁরা। জয়ের জন্য ২৬ রান দরকার, এই অবস্থায় ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে আউট হন লিন। ৪২ বল খেলে ৪৫ রানের দুরন্ত ইনিংস খেলেন তিনি। মাঠে নামেন রাসেল। আর রাসেল মানে মাঠে কিছু তো ধামাকা হবেই। হয়ও তাই। জেতার আগে মাত্র ৫ বল খেলার সুযোগ পান তিনি। আর তারমধ্যে ২টো বল পৌঁছে দেন বাউন্ডারির পারে। এদিন ১৯ তম ওভারের শেষ বলে খেলা শেষ হয়েছিল রাজস্থানের। কলকাতাও শেষ করল ১৯ তম ওভারের শেষ বলেই। শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে শেষ করেন কার্তিক। কার্তিক করেন ৩১ বলে ৪১ রান। কলকাতা জেতে ৬ উইকেটে। ম্যাচের সেরা হন কুলদীপ যাদব। কলকাতার শেষ ম্যাচ আগামী ১৯ মে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে হায়দরাবাদে। এই ম্যাচ জিততে পারলে প্রথম চারের টিকিট নিশ্চিন্ত হয়ে যাবে তাদের।