বুড়ো দল হিসাবে প্রতিযোগিতার শুরু থেকেই সমালোচিত হচ্ছিল ধোনির চেন্নাই। একে নির্বাসন শেষে এবার ফের আইপিএলে ফেরত এসেছে তারা। তারওপর এমন রাজ্য শুদ্ধ বুড়ো ঘোড়াদের নিয়ে দল গঠন। ফলে টি-২০-র মত গতির খেলায় একটা সন্দেহ তো টিম নিয়ে ছিলই। কিন্তু অভিজ্ঞতা আর ঠান্ডা মাথার খেলোয়াড় নিয়ে তৈরি একটা দল যে কী ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে তা পরিস্কার করে দিলেন ধোনির এক এক জন সদস্য। রবিবার ফাইনালে তাঁরা দেখিয়ে দিলেন হায়দরাবাদের মত শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কীভাবে ম্যাচকে একতরফা করে নিতে হয়। সৌজন্যে শেন ওয়াটসন। কোনও উচ্ছ্বাস নেই, তাড়াহুড়ো নেই, হঠকারী শট নেই। মাপা ব্যাটিংয়ে যে কী ভয়ংকর দানবীয় চেহারা ধারণ করা যায় তা কিন্তু দেখিয়ে দিলেন তিনি। আর ফাইনালে তাঁর একার কাঁধে ভর করে ট্রফি ঘরে তুলল চেন্নাই।
ভারতের ক্রিকেট মহাযজ্ঞের রবিবার ছিল ফাইনাল। বিগত ৭ সপ্তাহ যাবত গোটা দেশ মেতে ছিল ৮ দলের এই আইপিএল লড়াই নিয়ে। রবিবার তারই শেষ পর্যায়ে ফাইনালে মুখোমুখি হয় চেন্নাই সুপার কিংস ও সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। দীর্ঘ সময় লিগ টেবিলে ১ ও ২ নম্বরে টিকে থাকা এই ২টি দলই ছিল এবারের যোগ্যতম ফাইনালিস্ট। হয়েছেও তাই। ফলে লড়াইটা যে হাড্ডাহাড্ডি হবে তা নিয়ে কোনও প্রশ্ন ছিলনা। কিন্তু হল কই! এদিন মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন চেন্নাই অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। শুরুতে দুরন্ত বোলিংও করে চেন্নাই। ধীর গতির শুরু এখন হায়দরাবাদের স্ট্র্যাটেজি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিনও প্রথম ৪ ওভারের শেষে শ্রীবৎস গোস্বামীর উইকেট হারিয়ে হায়দরাবাদের স্কোর ছিল ১৭ রান। যার মধ্যে আবার একটা মেডেন ওভার পান লুঙ্গি। এরপর থেকে অবশ্য খেলার মোড় ঘুরিয়ে মারমুখী মেজাজে ব্যাটিং শুরু করেন হায়দরাবাদ অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ও শিখর ধাওয়ান। এই দুজনের জুটি রানের চাকা ঘোরানোর পর ২৬ রান করে ফেরেন ধাওয়ান। ৪৭ রান করে যখন উইলিয়ামসন ফেরেন তখন রানের চাকা গতি পেয়ে গেছে। সাকিব আল হাসানও ২৩ রানের একটা দুরন্ত ইনিংস খেলে আউট হন। দারুণ ব্যাটিং শুরু করেন ইউসুফ পাঠান। এদিন ইউসুফ এতটাই ভাল ব্যাট করছিলেন যে এক সময়ে মনে হচ্ছিল ২০০ রান ছুঁয়ে ফেলবে হায়দরাবাদ। কিন্তু চেন্নাই শেষ ২ ওভারে তেমন বড় রান করতে দেয়নি হায়দরাবাদকে। যার ফলে ৬ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারের শেষে হায়দরাবাদকে থামতে হয় ১৭৮ রানে।
১৭৯ রান করলে আইপিএল চ্যাম্পিয়ন। এই লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে চেন্নাইয়ের ডু প্লেসি (১০) দ্রুত ফেরেন। শুরুতে ভুবনেশ্বর কুমার একটা ওভার মেডেনও পান। ব্যাট হাতে তাঁকে সেই মেডেন উপহার দেন ওয়াটসন। প্রথম ১০ বল খেলে কোনও রান পাননি ওয়াটসন। হয়তো সে সময়ে চেন্নাইয়ের ভক্তকুল তাঁকে কিঞ্চিত ভর্ৎসনাই করছিলেন। এদিন খেলার শেষে হয়তো তাঁরা তাঁদের সেই আচরণের জন্য চরম লজ্জিতও। হাত সেট হওয়ার পরই ভয়ংকর হয়ে ওঠেন ওয়াটসন। বুড়ো হাড়ে ভেল্কি বোধহয় একেই বলে। পাওয়ার প্লে-কে কাজে লাগিয়ে চলতে থাকে তাঁর ব্যাট। উল্টোদিকে তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দিতে শুরু করেন রায়না। অন্যদিকে হায়দরাবাদের আফগান ব্রহ্মাস্ত্র রশিদ খান বোলিং করতে আসতেই কিন্তু রানে কিছুটা লাগাম পড়ে। কিন্তু একা রশিদকে কিছুটা সমঝে খেলে বাকিদের প্রবল প্রহার করাই ছিল চেন্নাইয়ের গেমপ্ল্যান। এমনিতেই রায়নাকে তেমন কিছু করতে হচ্ছিলনা। যা করার একা ওয়াটসনই করছিলেন। তার ওপর ১৩ তম ওভারে সন্দীপ শর্মার একটা ওভারই খেলার ফলাফল প্রায় স্থির করে দেয়। সন্দীপের ওই ওভারে আসে ২৭ রান। ওয়াটসনের ব্যাট থেকে আসে ৩টি ছক্কা ও ২টি চার। এমন এক বিধ্বংসী ওভার এদিন শুধু চেন্নাইয়ের জেতার রাস্তাই পরিস্কার করেনি। আইপিএল চ্যাম্পিয়ন করাও নিশ্চিত করে দেয়। এরপরও কিন্তু কোনও সময়ে থেমে থাকেনি ওয়াটসনের ব্যাট। একার কাঁধে সব দায়িত্ব নিয়ে কীভাবে যে একটা দলকে ফাইনালে জেতানো যায়। কীভাবে একটা ম্যাটকে একাই একতরফা খেলায় পরিণত করা যায়, তা এদিন দেখিয়ে দিলেন শীতল মাথার ওয়াটসন। ৫১ বলে শতরান পূর্ণ করেন তিনি। ততক্ষণে চেন্নাইয়ের জয় প্রায় নিশ্চিত। ওদিকে মাঝে রায়না আউট হয়ে আসেন রাইডু। শেষ পর্যন্ত মাত্র ৫৭ বল খেলে অপরাজিত থেকে ১১৭ রান করেন ওয়াটসন। জেতান ম্যাচ। চেন্নাই আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয় ৮ উইকেটে হায়দরাবাদকে হারিয়ে। খেলার ৯ বল বাকি থাকতেই জেতার লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে ধোনির চেন্নাই। ম্যাচের সেরা হন ওয়াটসন।