আগের ৪টে ম্যাচের সবকটাই হেরেছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। সেই দলটার জয়ে ফেরার সবরকম পরিস্থিতি তৈরি ছিল। ভাল রান ছিল। কেকেআরের ব্যাটিংয়ে ধসও নামানো হয়ে গিয়েছিল। বাকি ছিল শেষ ৪টে ওভার গুছিয়ে করা। আর সেখানেই রাসেলের তাণ্ডব শুরু হল। সেই তাণ্ডবলীলা থামল বিরাটবাহিনীকে হারিয়ে। টিনটিনের ক্যাপ্টেন হ্যাডক থাকলে হয়তো বলতে থাকতেন ঝড়, টাইফুন, টর্নেডো, তুফান, সাইক্লোন। এমনই ব্যাটিং দেখালেন রাসেল। যেখানে শেষ ৪ ওভারে কেকেআরের দরকার ছিল প্রায় ৭৫ রান। তখনও ম্যাচ ছিল বিরাটদের পকেটে। অন্যদিকে কেকেআরের একটাই ভরসা বেঁচে ছিল। নাম আন্দ্রে রাসেল। সেই রাসেল ১৯ তম ওভারের ৪টে ছক্কা ও ১টি চার মেরে তুলে নিলেন ২৮ রান। তাও আবার সাউদিকে। বেঙ্গালুরুর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বোলারকে।
পুরো ম্যাচ মিলিয়ে মোট ৭টি ছক্কা হাঁকান রাসেল। ডাহা হারা ম্যাচ খাদের কিনারা থেকে তুলে এনে কেকেআরকে জয় এনে দিলেন একা রাসেল। ৫ বল বাকি থাকতেই ২০৬ রান তুলে নেয় কেকেআর। এ ম্যাচ বহুদিন মনে থাকবে কেকেআর সমর্থকদের। বহুদিন মনে থাকবে বেঙ্গালুরুর সমর্থকদেরও। এদিন চিন্নাস্বামীতে পুরো ম্যাচটা উল্লাস করেছে গোটা স্টেডিয়াম। কেবল শেষ চার ওভারে স্তব্ধ হয়ে যায় তাদের সেই সব আনন্দ।
বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে শুক্রবার টস জিতে প্রথমে বিরাটদের ব্যাট করতে পাঠান কলকাতা নাইট রাইডার্স অধিনায়ক দীনেশ কার্তিক। শুরুতেই ভাল ব্যাট করা শুরু করেন বিরাট কোহলি ও পার্থিব প্যাটেল। পার্থিব ২৫ রান করে ফেরার পর ম্যাচের হাল ধরেন বিরাট কোহলি ও ডেভিলিয়ার্স। আইপিএলের শুরু থেকে ৪টি ম্যাচে কেবল হারেরই মুখ দেখতে হয়েছে বিরাটদের। ফলে এদিন জিতে খাতা খোলার একটা মরিয়া চেষ্টা যে বিরাটদের মধ্যে দেখা যাবে তা পরিস্কার ছিল। সেইমত এদিন দুরন্ত ব্যাটিং শুরু করেন বিরাট ও ডেভিলিয়ার্স। উইকেট ধরে থাকার পাশাপাশি ২ জনেই দুদিক থেকে রান তুলতে থাকেন। ওভার যত গড়াতে থাকে ২ জনের ব্যাট ততই আগুন ঝরাতে শুরু করে।
এঁদের ২ জনের কাঁধে ভর করেই ১৭২ রানে পৌঁছে যায় আরসিবি। তখনও ৩ ওভার বাকি। এই অবস্থায় কুলদীপের বলে ক্যাচ তুলে দেন বিরাট। কুলদীপই ক্যাচ ধরেন। মাত্র ৪৯ বলে ৮৪ রান করে বিরাট ফেরার পর নামেন স্টোইনিস। তবে রানের গতি কমে। পরের ওভারে ডেভিলিয়ার্সের উইকেট তুলে নেন সুনীল নারিন। ডেভিলিয়ার্স করেন ৩২ বলে ৬৩ রান। শেষ পর্যন্ত টিকে থেকে মইন আলি ও স্টোইনিস দলের রানকে ২০৫ রানে টেনে নিয়ে যান।
৪টে টানা হারের পর এই ম্যাচে যে রান বেঙ্গালুরু তোলে তা জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল। যদিও রান তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারে ক্রিস লিনের ক্যাচ ফেলে বেঙ্গালুরু। প্রথম ওভারেই আসে ১৭ রান। তার পরের ওভারেও কেকেআরের মার বজায় ছিল। তৃতীয় ওভারে নারিনের ক্যাচ ধরে তাঁকে প্যাভিলিয়নে ফিরিয়ে ধাক্কা দেন বিরাটের ছেলেরা। এরপর যদিও উত্থাপ্পা ও লিন ভাল ব্যাট করতে থাকেন। রানও উঠতে থাকে। এরমধ্যে আবার লিনের ক্যাচ ফেলেন সিরাজ। সব মিলিয়ে কেকেআর খেলায় বেশ ভালই ফিরছিল, এমন সময় নেগির বলে ফেরেন উত্থাপ্পা (৩৩)। পরের ওভারে লিন (৪৩) কেও ফেরান সেই নেগি। পিছিয়ে পড়ে কেকেআর। রানের গতি কমে যায়। ধরে ব্যাট করতে থাকেন কার্তিক ও রাণা। জয়ের গন্ধ পেয়ে বেঙ্গালুরুর বোলাররাও কেমন যেন ভাল বল করতে থাকেন।
রান ও বলের ফারাক যত বড় হতে থাকে ততই চাপ বাড়তে থাকে কেকেআরের ওপর। অবশেষে জোর করে মারতে গিয়ে আউট হন রাণা (৩৭)। কার্তিকের সঙ্গে ব্যাট করতে নামেন রাসেল। এখানে আবার কার্তিক একটি ছক্কা হাঁকানোর পর একই জায়গায় দ্বিতীয় ছক্কাটি মারতে গিয়ে ধরা পড়ে যান চাহলের হাতে। ফিরতে হয় তাঁকে। রাসেলকে সঙ্গত দিতে নামেন শুভমান গিল। আর সেখান থেকেই শুরু হয় রাসেল ম্যাজিক।
অতিমানবীয় খেলোয়াড় কাকে বলে তা এদিন রাসেল দেখিয়ে দিলেন। যেভাবে হারা ম্যাচে তিনি তুফান তুললেন। যেভাবে একটা হারা ম্যাচকে খাদের কিনারা থেকে তুলে এনে জয়ে ফেরালেন তাকে অবিশ্বাস্য বলা ছাড়া উপায় নেই। মাত্র ১৩ বল খেলে ৪৮ রান করেন তিনি। হয়তো আরও ১ বল খেলতে পারলে সবচেয়ে দ্রুত অর্ধশতরানের রেকর্ড গড়ে ফেলতেন এই জামাইকান দানব। ১২ বলে দরকার ছিল ৩০ রান। সেখানে ১৯ তম ওভারে রাসেল ৫ বলে করেন ২৮ রান। শুভমান ১ রান। ২৯ রান উঠে আসে। আর এখানেই জয় নিশ্চিত হয়ে যায়।
রাসেল এদিন ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ তো বটেই সেই সঙ্গে সুপার স্ট্রাইকারের পুরস্কারও জিতে নেন। বিরাট ও ডেভিলিয়ার্সের দুরন্ত ইনিংস এদিন ধুয়ে মুছে গেল সকলের মন থেকে। রয়ে গেল শুধুই রাসেলের ব্যাট। খেলার শেষেও যাঁকে ঘিরে সতীর্থদের আনন্দ থামতেই চাইছিলনা। ৫ ম্যাচ খেলে ৫টা হেরে আরসিবি রয়ে গেল পয়েন্ট টেবিলের শেষে। জিতে কলকাতা এখন টেবিলের ২ নম্বরে উঠে এল।