এই আইপিএলে সবচেয়ে জঘন্য অধিনায়ক হিসাবে যদি কেউ ছাপ রেখে থাকেন তবে তিনি দীনেশ কার্তিক। যিনি উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে বুঝতে পারেন না এলবিডব্লিউ কিনা। আবার ব্যাটসম্যানের ব্যাটে লেগে আসা বল ক্যাচ ধরেও আউটের জন্য আর্জি জানান না। যে বোলার মার খাচ্ছেন তাঁকে দিয়েই বল করাতে থাকেন। কেমন যেন একটা ছক তাঁর মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। রোবটের মত সেভাবে চলা। আর সেই জঘন্য অধিনায়কত্বের মূল্য দিতে হল কলকাতাকে। লজ্জার হার হারতে হল বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে।
একই দিনে ব্যাটিং করে যখন দলকে জয়ের অবস্থায় নিয়ে গেলেন বিরাট, তখন জঘন্য অধিনায়কত্ব করে দলকে খাদের কিনারায় পৌঁছে দিলেন দীনেশ। কেন যে তাঁকে বিশ্বকাপে ভারতীয় দলে নেওয়া নিয়ে এত সমালোচনার ঝড় উঠেছে তা কিন্তু আমজনতার কাছে পরিস্কার। হয়ত আগামী দিনে কেকেআর-এর মালিক শাহরুখ খানকেও ভেবে দেখতে হবে দীনেশ কার্তিকের মত খেলোয়াড়কে কলকাতার অধিনায়ক করে রাখবেন কিনা।
ইডেনের সহজ পিচে জঘন্য ব্যাট করলেন কলকাতার লিন, উত্থাপ্পা, শুভমান গিলরা। কারণ এঁরা যদি দলের খাতায় ১০-১২ রানও আর দিয়ে যেতেন তবে কেকেআর এদিন জিততে পারত। কারণ রাণা আর রাসেল মিলে যে বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন তাতে ইডেনের এদিন পয়সা উসুল হয়ে গেছে।
টস জিতে এদিন প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের অধিনায়ক দীনেশ কার্তিক। ইডেনের পিচে রান তাড়া করার ঝুঁকি তিনি কেন নিলেন তা স্পষ্ট নয়। ব্যাট করতে নামেন বিরাট কোহলি ও পার্থিব প্যাটেল। রাসেলের চোট থাকায় তিনি নামবেন কিনা তা নিয়ে চাপে ছিল কলকাতা। রাসেল নামেন। কিন্তু বেঙ্গালুরুর জন্য দলে থাকতে পারেননি ডেভিলিয়ার্সের মত বড় ভরসা। ফলে এদিন প্রায় পুরো দায়িত্বটাই ছিল বিরাট কোহলি ও মইন আলির ঘাড়ে। আর দায়িত্ব পড়লে তিনি যে কতটা দায়িত্বশীল অধিনায়ক তা বুঝিয়ে দিলেন বিরাট কোহলি।
এখানেই দক্ষতা, প্রতিভার ফারাক হয়ে যায় কলকাতার অধিনায়ক দীনেশ কার্তিকের সঙ্গে। যিনি বাইরে যাওয়া বল না বুঝতে পেরে রিভিউ নষ্ট করেন। আবার মইন আলির ব্যাটে লেগে তাঁর হাতে ধরা পড়া বলে হাউ ইজ দ্যাট বলে চেঁচিয়ে ওঠেন না। বুঝতেই অক্ষম যে বল ব্যাটসম্যানের ব্যাটে লেগেছে। এটা ধোনি থাকলে তিনি হতে দিতেন না।
এদিন পার্থিব ১১ ও নাথ ১৩ রানে ফেরার পর বিরাট ও মইন আলি যেভাবে ম্যাচের হাল ধরেন এবং কলকাতার বোলারদের প্রহার শুরু করেন তাতে বোঝাই যাচ্ছিল বড় রানের ইনিংস গড়তে চলেছেন তাঁরা। মইন আলি ৬৬ রান করে ফেরেন। আর খেলার শেষ বলে ১০০ রান করে ফেরেন বিরাট কোহলি। ২০ ওভারের শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে ২১৩ রানের পাহাড় প্রমাণ স্কোর খাড়া করে বেঙ্গালুরু।
বিশাল রান তাড়া করতে হলে যে কলকাতা তাল হারায় তা আগেও দেখা গেছে। বড় রান তাড়া করতে হলে অঙ্ক সঠিক হওয়া দরকার। কিন্তু সেখানে কলকাতার খেলোয়াড়েরা আগেই হেরে মাঠে নামেন। ফলে পরপর উইকেট পতন। তারপর হার। এদিনও ইডেনে ক্রিস লিন প্রথম বলেই ক্যাচ দেন। সেই ক্যাচ ফেলে দেন স্টোইনিস। কিন্তু শেষ বলে ফের ক্যাচ দেন লিন। এটা অবশ্য হাতছাড়া হয়নি। এরপর নারিন ১৬ রান করে এবং শুভমান গিল ৯ রান করে আউট হন। জুটি বাঁধেন উত্থাপ্পা ও নীতীশ রাণা। তবে রান রেট একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকে। ফলে এটা পরিস্কার হয়ে যায় হেরেই ব্যাট করতে নামা কেকেআর চাইছে ২০ ওভার ব্যাট করতে। জিততে নয়।
উত্থাপ্পা ২০ বল নষ্ট করে ৯ রান করেন। এরপর নীতীশ রাণা ও রাসেল যে লড়াই এদিন দিলেন তা ক্রিকেটমোদীদের মনে থাকবে বহুদিন। ডাহা হারা ম্যাচকে যে রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতিতে টেনে নিয়ে যাওয়া যায় তা এই ২ ব্যাটসম্যান মিলে তাঁদের সবটুকু দিয়ে লড়ে বুঝিয়ে দিলেন। চার, ছয়ের বন্যা বইল ইডেনে। মাটি কামড়ে লড়াই দিলেন ২ জনে। তবু ১০টা রান পিছনে থেকে গেলেন শেষ পর্যন্ত। রাণা ৪৬ বল খেলে ৮৫ রান করেন। ৫টি ছক্কা ও ৯টি চার হাঁকান তিনি। আর রাসেল মাত্র ২৫ বল খেলে করেন ৬৫ রান। ৯টি ছক্কা ও ২টি চার মারেন তিনি।
২ জনে মিলে মোট ১৪টি ছক্কা হাঁকান। তারপরও কেকেআর যদি হেরে থাকে তবে তার দায়ভার অবশ্যই এঁদের আগে ব্যাট করতে আসা ব্যাটসম্যানদের নিতে হবে। নিতে হবে অধিনায়ককে। যিনি বোলার পরিবর্তন কীভাবে হবে বুঝতেই পারলেন না। ফলে বেঙ্গালুরু রানের পাহাড় গড়ল। আর বুঝতে পারলেন না তাঁর হাতে ধরা পড়া ক্যাচ। যা মইন আলিকে ফেরাতে পারত।
কলকাতা লিগ টেবিলের ৬ নম্বরে থেকে গেল। ৯টা ম্যাচ খেলে তারা ৫টা হেরেছে। আর পরপর ৪টি হারের রেকর্ড করল কলকাতা। ফলে লিগে টেবিলের প্রথম ৪-এ থাকার আশা অনেকটাই কমল কলকাতার।