Sports

ক্রিকেট নয়, শাহরুখের সামনে রুদ্ধশ্বাস অ্যাকশন ফিল্ম দেখাল কেকেআর

আইপিএল শুধুই ক্রিকেট নয়। টোটাল বিনোদন। ২০ ওভারের ম্যাচে দর্শকদের সবরকম আনন্দ দেওয়া। এটাই লক্ষ্য। অনেকটা সিনেমার মত। আর সেই পয়সা উসুল খেলাই রবিবার সন্ধেয় ইডেনে উপহার দিল কেকেআর। তাও আবার দলের মালিককে সাক্ষী রেখে। একেবারে টানটান উত্তেজনার অ্যাকশন ফিল্ম দেখলেন দর্শকরা। আনন্দে ব্রেক নেওয়ারও সময় পাননি তাঁরা। হৈহৈ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠলেও দম নেওয়ার সময় জোটেনি। প্রতিটি বল চমকে দিয়েছে। আনন্দ দিয়েছে। মাঠে চার আর ছক্কার বন্যা বয়ে গেছে। কেকেআর তুলেছে ইডেনের মাঠে অদ্যাবধি সর্বোচ্চ স্কোর ২৩২ রান।

Shah Rukh Khan
ইডেনের গ্যালারিকে অভিবাদন শাহরুখ খানের, ছবি – আইএএনএস

তাও এখানে একটা হিসাবে দিয়ে রাখা ভাল। ২০ ওভারে এই রান উঠলেও তারমধ্যে ৩টি ওভার থেকে এসেছে মাত্র ৯ রান। তার মানে দাঁড়াল ১৭ ওভারে কলকাতা নাইট রাইডার্স তুলেছে ২২৩ রান। একে অবিশ্বাস্য বলা ছাড়া আর উপায়ই বা কি! ২৩২ রান করা কেকেআর-কে হারাতে মুম্বইয়ের দরকার ছিল ২৩৩ রান। আর রান তাড়া করতে নেমে এই অতি বিশাল স্কোর যে তোলা নেহাতই অসম্ভব তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখেনা। হয়ও তাই। এদিনের এই অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ের জেরে এখনও প্লে অফের আশা জিইয়ে রাখল কেকেআর। অন্যদিকে মুম্বইকে প্লে অফে জেতে এখনও একটা জয়ের জন্য অপেক্ষা করে থাকতে হবে।


টস জিতে ইডেনে এদিন প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন রোহিত শর্মা। তখন কী তিনি জানতেন যে তাঁর এই একটা সিদ্ধান্ত এদিন তাঁর দলের ভবিষ্যৎ লিখে দেবে! ব্যাট করতে নেমে এদিন শুরু থেকেই মারমুখী মেজাজে ছিলেন ক্রিস লিন ও শুভমান গিল। বিশেষত গিল। এদিন প্রথম ওভারেই ২টি চার ও ১টি ছক্কা হাঁকিয়ে তিনি বুঝিয়ে দেন এদিন তিনি বড় রান করতে নেমেছেন।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওভার থেকে মাত্র ৫ রান আসে কেকেআরের ঝুলিতে। আর তারপর থেকে শুরু হয় বেদম প্রহার। সে শুভমান গিলই হোন বা ক্রিস লিন। এই ২ ওপেনার এমন ঝোড়ো ইনিংস উপহার দেন যে কেকেআরের জন্য রানের পাহাড় গড়ার ভিতটা একদম পাকাপোক্ত‌ভাবে তৈরি হয়ে যায়। ৫৪ রান করে আউট হন ক্রিস লিন। তখন দলের স্কোর ৯৬। ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ধরা পড়ে যান তিনি। কিন্তু যদি সেটা চার বা ছয় হত তবে এঁদের শতরানের পার্টনারশিপটা হয়ে যেত।


লিন ফেরার পর শুভমান গিলের সঙ্গে জুটি বাঁধতে মাঠে নামেন আন্দ্রে রাসেল। যাঁকে দেখে কার্যত সকলেই চমকে যান। রাসেলকে কেন কেকেআর ৪ নম্বরে খেলাচ্ছে না তা নিয়ে ক্রিকেটবোদ্ধাদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে কলকাতার টিম ম্যানেজমেন্টকে। এদিন সব সমালোচনার জবাব দিতেই বোধহয় তাঁকে একেবারে ৩ নম্বরে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। নেমে থেকে কিন্তু খুব স্বচ্ছন্দ ছিলেন না রাসেল। বরং শুভমান গিল এদিন বিধ্বংসী মেজাজে ব্যাট চালাচ্ছিলেন।

Shubman Gill
নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখলেন তরুণ শুভমান গিল, ছবি – আইএএনএস

৭৬ রান করে ফেরা শুভমান এদিন ৪টি ছক্কা ও ৬টি চার মারেন। ৪৫ বল খেলে করেন ৭৬ রান। গিল ফেরার পর রাসেলের সঙ্গে জুটি বাঁধেন অধিনায়ক দীনেশ কার্তিক। রাসেলের ব্যাট ততক্ষণে বলতে শুরু করেছে। আর তারপর থেকে রাসেলের চেনা মেজাজ ধরা পড়ে মাঠে। রাসেল শো চলতে থাকে। ছক্কার বন্যা বইতে থাকে। মাঝেমধ্যে চারও আসে। তবে দীনেশকে তেমন কিছু করতে হয়নি। তাঁর একটাই কাজ ছিল, ব্যাটে বল ছুঁইয়ে রাসেলকে স্ট্রাইকে আনা।

শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে রাসেল করেন ৮০ রান। তাও মাত্র ৪০ বল খেলে। ৮০ রানের মধ্যে রয়েছে ৮টি ছক্কা ও ৬টি চার। কার্তিক করেন ১৫ রান। যারমধ্যে ১টি ছক্কা ও ১টি চার রয়েছে। খেলার যখন ৩ বল বাকি তখন পরপর চতুর্থ ও পঞ্চম বলে বল বাউন্ডারি পার করতে অসমর্থ হন রাসেল। উল্টোদিকে কার্তিক ছিলেন। তিনিও যথেষ্ট ভাল ব্যাটসম্যান। কিন্তু সেই অবস্থাতেও রান নেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই অতিমানবীয় তারকা। একেই হয়ত বলে নিজের প্রতি আস্থা। আর তা যে ভুল নয় তা শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে প্রমাণ করে দেন তিনি। ২০ ওভার খেলে ২ উইকেট হারিয়ে কেকেআর করে ২৩২ রান।

Andre Russell
বিধ্বংসী মেজাজে রাসেল, ছবি – আইএএনএস

পাহাড় প্রমাণ রান বললেও কম বলা হয়। এই রান প্রথমে ব্যাট করে করার কথা স্বপ্নে ভাবতে পারে যে কোনও দল। কিন্তু ওই রানকে তাড়া করে ছোঁয়ার কথা মনে হয়না কেউ ভাবতে পারেন। কারণ এর জন্য সঠিক রণনীতি তৈরি করাই কার্যত অসম্ভব। একটাই নীতি হতে পারে। শুরু থেকেই চালিয়ে খেলো। সেটাই করার চেষ্টা শুরু করেছিল মুম্বই। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয়নি। ৪ বল খেলে ০ রান করে ফেরেন কুইন্টন ডি কক। শুরু হয় মু্ম্বইয়ের উইকেট পতন।

এদিন অবশ্য ব্যাট করতে দিয়ে একটা রেকর্ড করেন রোহিত শর্মা। আইপিএল রেকর্ড বলছে রবিবারের আগে পর্যন্ত সুনীল নারিনকে রোহিত শর্মা কখনও চার মারতে পারেননি। সেটা এদিন করে দেখান রোহিত। শাপমুক্তি হয়। তবে টিকতে পারেননি তিনি। ১২ রান করে ফেরেন মুম্বই অধিনায়ক। ১৫ রান করে ফেরেন লিউইস। প্রথমার্ধে রাসেলের বিধ্বংসী ব্যাটিং দেখেছিলেন সকলে। দ্বিতীয়ার্ধে দেখলেন বোলিং দাপটও। স্বদেশীয় লিউইসকে ফেরান রাসেল। ২৬ রান করে রাসেলের বলে ফিরতে হয় সূর্যকুমার যাদবকেও।

এই অবস্থায় খাদের কিনারায় ঠেকে যাওয়া মুম্বইকে খেলায় ফিরিয়ে আনেন হার্দিক পাণ্ডিয়া। রাসেলের যে মেজাজটার জন্য পরিচিতি, সেই একই মেজাজ মাঠে দেখাতে শুরু করেন হার্দিক। একের পর এক ছক্কা হাঁকাতে থাকেন। সারাক্ষণ ঝিমিয়ে থাকা মুম্বই সমর্থকেরা কোথাও যেন আশার আলো দেখতে পান। জেগে ওঠেন তাঁরাও। পোলার্ড ২০ রান করে ফেরার পর হার্দিককে সঙ্গ দিতে নামেন তাঁর দাদা ক্রুণাল পাণ্ডিয়া। ২ ভাই মিলে খেলতে শুরু করেন। ম্যাচ কিন্তু জমে ওঠে।

গোটা ম্যাচে একতরফা কলকাতাকে চাপে ফেলতে সবরকম চেষ্টা চালাতে থাকেন এঁরা। চার, ছয় চলতে থাকে। বিশাল রানকেও যে এভাবে তাড়া করা যায় দেখিয়ে দেন হার্দিক পাণ্ডিয়া। দাদাকে সঙ্গে করে কার্যত একার কাঁধে দলকে টানতে থাকেন। ১৭ বল খেলে ৫০ করা হার্দিকের ব্যাট তারপরেও সমান তালে চলতে থাকে। এ সময়ে কলকাতার অতি বড় ফ্যানেরও একবারের জন্য অন্তত মনে হয়েছে হার্দিক যেভাবে খেলছেন তাতে ম্যাচ না জিতিয়ে দেন! কিন্তু এমন বিশাল স্কোরকে তাড়া করতে গিয়ে একাই পুরো লড়াইটা দিতে গেলে যা হয়, সেটাই হয় এদিন। গর্নির একটি বাউন্সারকে চালিয়ে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ধরা পড়ে যান আন্দ্রে রাসেলের হাতে। ৩৪ বলে ৯১ রান করে ফেরেন তিনি।

Hardik Pandya
ইডেনের দর্শকদের অভিবাদন গ্রহণ করে ডাগ আউটের পথে হার্দিক, ছবি – আইএএনএস

৯টি ছক্কা ও ৬টি চার হাঁকান। তাঁর এমন চোখ জুড়নো ব্যাটিংকে তারিফ করে তাঁর পিঠ চাপড়ে যান কেকেআর খেলোয়াড়েরাও। হার্দিক যাওয়ার পর এমনিতেই ম্যাচটায় আর কিছু ছিলনা। ক্রুণাল পীযূষ চাওলার বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। ২০ ওভারের শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে মুম্বই তোলে ১৯৮ রান। ৩৪ রানে ম্যাচ জেতে কলকাতা। এদিনের জয়ের সঙ্গে সঙ্গে আইপিএলে তাদের শততম জয়ও পূর্ণ করে কেকেআর। এদিনের ম্যাচে দুরন্ত ব্যাটিং ও বোলিংয়ের জন্য ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হন আন্দ্রে।

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button