ম্যাচ জিতলে মুম্বই লিগের মাথায় চলে যাচ্ছে। ফলে তারা প্লে অফে প্রথম ম্যাচ হারলেও ফিরে আসার জন্য দ্বিতীয় ম্যাচ পাবে। তাই তারা চাইছিল প্রথম দুইয়ে জায়গা করে রাখতে। অন্যদিকে কেকেআরের প্লে অফে যাওয়ার জন্য এই ম্যাচ জিততেই হত। কারণ হায়দরাবাদের চেয়ে তাদের রান রেট অনেক কম। এমনই পরিস্থিতিতে খেলতে নেমে মুম্বইয়ের কাছে গোহারান হারল কেকেআর।
খেলার শুরু থেকেই মনে হয়েছে কেকেআর যেন হেরেই খেলতে নেমেছিল। খেলাটা ছিল উপলক্ষ মাত্র। টস হারা থেকে ম্যাচ হারা। কোথাও এক মুহুর্তের জন্যও কোনও ছাপ রাখতে পারলনা শাহরুখের ছেলেরা। অধিনায়ক হিসাবে সম্পূর্ণ ব্যর্থ দিনেশ কার্তিক। এদিন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেও তাঁর ব্যাট কোনও রান দিতে পারেনি। যেখানে অধিনায়ক হিসাবে এই দায়িত্ব পালন করা তাঁর উচিত ছিল।
এই দীনেশকেই কিন্তু বিশ্বকাপে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ভারতীয় নির্বাচকরা। বাদ দিয়েছেন তরুণ প্রতিভা ঋষভ পন্থকে। এই আইপিএলেই প্রথম এমন হল যে কোনও দল ১২ পয়েন্ট নিয়েও প্লে অফে জায়গা করে নিল। এদিনের হারের ফলে কলকাতা, হায়দরাবাদ ও পঞ্জাব একই পয়েন্টে অবস্থান করছিল। সেখানে নেট রান রেটে হায়দরাবাদ প্লে অফে যায়।
ওয়াংখেড়েতে আইপিএলের লিগ পর্যায়ের শেষ ম্যাচে টস জিতে প্রথমে কেকেআরকে ব্যাট করতে পাঠায় মুম্বই। ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই কেমন যেন গুটিয়ে খেলতে থাকে কলকাতা। ওয়াংখেড়ে বড় রানের ইনিংসের জন্য বিখ্যাত। সেখানে প্রথম ২ ওভারে ওঠে ৫ রান।
এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে এমন একটা শুরু অশনি সংকেত বলেই মনে করছিলেন কেকেআর ফ্যানেরা। এরপর ক্রিস লিন বেশ কিছু দারুণ শট মেরে রানের চাকা কিছুটা ঘোরান। কিন্তু শুভমান গিল একেবারেই খেলতে পারছিলেন না। ১৬ বল খেলে ৯ রান করে ফেরেন তিনি।
এরপর উত্থাপ্পা নামেন। ক্রিস লিনের সঙ্গে তাঁর সঙ্গত কিছুক্ষণ স্থায়ী হওয়ার পর লিন ৪১ রান করে ফেরেন। ব্যাট করতে নেমে এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেও ব্যর্থ কেকেআর অধিনায়ক দীনেশ কার্তিক। ৯ বল খেলে ৩ রান করে আউট হন বিশ্বকাপে অনেককে পিছনে ফেলে ভারতীয় দলে জায়গা পাওয়া দীনেশ।
যে রাসেলের ভরসায় কেকেআর থাকে সেই রাসেল এদিন প্রথম বলেই আউট হয়ে ফেরেন। এরপর কার্যত খেলা মুম্বইয়ের দিকে ঢলে যায়। রান উঠতে থাকে শম্বুক গতিতে। যা টি-২০-তে চলে না। রাণা ও উত্থাপ্পা মিলে দলের রান একটা জায়গায় নিয়ে যাওয়ার লড়াই শুরু করেন। লড়াই কাজেও আসে। কিছুটা রান তোলেন ২ জনে।
তবে উত্থাপ্পা পেসারদের করা ধীরে বল বা স্লোয়ার বল একেবারেই বুঝে উঠতে পারছিলেন না। ফলে একের পর এক বল মিস করতে থাকেন। তবে রাণা ১৩ বলে ২৬ রানের একটা ভাল ইনিংস খেলেন। দলের দুরবস্থায় এই রানটাও যথেষ্ট হয়ে দাঁড়ায়। এরপর রিঙ্কু সিংকে নিয়ে খেলে উত্থাপ্পা করেন ৪৭ বল খেলে ৪০ রান।
নারিনের মত হার্ড হিটারকে কেকেআর নামায় খেলা শেষ হতে ১ বল বাকি থাকতে। তিনি একটাও বল খেলার সুযোগ পাননি। রিঙ্কু আউট হন শেষ বলে। ২০ ওভারে মাত্র ১৩৩ রান করেন কলকাতা। এখানে খতিয়ান বলছে কেকেআর এদিন ২০ ওভারের ম্যাচে আসলে খেলেছে ১০ ওভার। যা রান উঠেছে তা ১০ ওভারে অর্থাৎ ৬০ বলে উঠেছে। বাকি ১০ ওভারে অর্থাৎ ৬০ বলে তারা কোনও রান নিতে পারেনি।
অত্যন্ত সহজ রান তাড়া করতে নেমে জেতার জন্য যেমন শুরুর দরকার পড়ে তেমনই করেন রোহিত শর্মা ও ডি কক। ডি কক ৩০ রানে ফেরার পর রোহিত ও সূর্যকুমার যাদব জুটি বাঁধেন। সেই জুটিই খেলা শেষ করে। রোহিত করেন ৫৫ রান। সূর্যকুমার যাদব ৪৬ রান করেন।
খেলার ২৩ বল বাকি থাকতেই ৯ উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয় মুম্বই। এদিন পুরো খেলায় এমন একটা সময়ও আসেনি যেখানে মনে হতে পারে কলকাতা জিতলেও জিততে পারে। জঘন্য অধিনায়কত্ব আর টিমের পুরো শক্তিকে সঠিকভাবে ব্যাবহার না করতে পারার খেসারত কলকাতাকে দিতে হয়। ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হন হার্দিক পাণ্ডিয়া।
এদিন জিতে লিগের ১ নম্বর দল হিসাবে জায়গা করে নিল মুম্বই। ২ নম্বরে নেমে গেল চেন্নাই। ৩ নম্বরে নেমে গেল দিল্লি। আর চতুর্থ দল হিসাবে তালিকায় শেষ করল হায়দরাবাদ। যে ৪টি দল ছিটকে গেল তার মধ্যে রয়েছে কলকাতা ৫ নম্বরে। কিংস ইলেভেন পঞ্জাব ৬ নম্বরে। রাজস্থান রয়্যালস ৭ নম্বরে ও বেঙ্গালুরু ৮ নম্বরে।