খেলা যে কতটা টানটান হতে পারে তা বুধবার দেখিয়ে দিল দিল্লি ও হায়দরাবাদ। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়েরও উদাহরণ হয়ে রইল এই ম্যাচ। সৌরভের পরামর্শে চলা দিল্লির তারুণ্য যেমন ভেল্কি দেখাল, তেমনি একটা চিন্তাও দলের ম্যানেজমেন্টের কাছে রেখে গেল। তা হল ম্যাচ জেতার জন্য সঠিক সময়ে সঠিক অভিজ্ঞতার প্রতিফলন রাখা আর হুটোপাটি থেকে দূরে থাকা। যা এদিন দিল্লির হাত থেকে কার্যত ম্যাচটা বার করে দিয়েছিল। শেষ বলে কিমো চার হাঁকাতে না পারলে দিল্লির জন্য কঠিন হত জয়। এদিনের জয়ের ফলে চেন্নাইয়ের সঙ্গে খেলতে চলে গেল দিল্লি। আর এবারের আইপিএল থেকে বিদায় নিল হায়দরাবাদ।
বিশাখাপত্তনমের মাঠে টস জিতে প্রথমে হায়দরাবাদকে ব্যাট করতে পাঠায় দিল্লি। হায়দরাবাদের ২ প্রধান ব্যাটিং ভরসা ওয়ার্নার ও বেয়ারস্টো বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য নিজের নিজের দেশে ফিরে গেছেন। ঋদ্ধিমান সাহা ও গুপতিল ব্যাট করতে নামেন। ঋদ্ধিমান ৮ রান করে দ্রুত ফেরেন। গুপতিল চালিয়েই খেলছিলেন। তিনি করেন ১৯ বলে ৩৬ রান। ৩৬ করে গুপতিল ফেরার পর ম্যাচের হাল ধরেন মণীশ পাণ্ডে ও অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। মণীশ ফর্মে রয়েছেন। কিন্তু এদিন দিল্লির বোলিংয়ের সামনে হাত খুলে খেলতে পারছিলেন না। ৩০ রান করতে ৩৬ বল নষ্ট করেন তিনি। মণীশ ফেরার পর উইলিয়ামসনও গুটিয়ে খেলছিলেন। কিন্তু বিজয় শঙ্কর চালিয়ে খেলার চেষ্টা করেন। কেন আউট হন ২৮ রানে। বিজয় ১১ বলে ২৫ রান করে আউট হন। মহম্মদ নবি করেন ২০ রান। রশিদ খান ফেরেন ০ রানে। হুডা ফেরেন ৪ রান করে। হায়দরাবাদ ২০ ওভার খেলে করে ১৬২ রান। রান বিশাল নয়। তবে ফেলে দেওয়ার মতও নয়। হেলায় জেতা মুশকিল।
১৬৩ লক্ষ্য করে ছুটতে নেমে দুরন্ত শুরু করে দিল্লি। যে শুরু পৃথ্বী শ ও শিখর ধাওয়ান করেন তাতে অনেকেরই মনে হয়েছিল এই ম্যাচ দিল্লি অনেক আগেই জিতে যাবে। হায়দরাবাদ দাঁড়াতেই পারবে না। ধাওয়ান ১৭ রান করে আউট হলেও পৃথ্বীর ব্যাট চলতে থাকে। তবে অতটাও ভয়ংকরভাবে নয়। বরং কিছুটা গুটিয়ে যান তিনি। সঙ্গে অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ারও এঁটে উঠতে পারছিলেন না। ৮ রান করে ফেরেন শ্রেয়স। নামেন ঋষভ পন্থ। আর তারপরেই দ্রুত ফেরেন পৃথ্বী। ৩৮ বলে ৫৬ রান করে আউট হন তিনি। মুনরোকে সঙ্গে নিয়ে রান তোলার কাজ শুরু করেন ঋষভ। কিন্তু ছন্দে না থাকা মুনরোকে ফেরান রশিদ খান। ১৪ রান করা মুনরো রিভিউ নিলেও তিনি আউট ছিলেন। ওই ওভারেই অক্ষর প্যাটেলের আউট বিতর্কের জন্ম দিলেও রিভিউ হাতে ছিল না। অক্ষর ফেরেন ০ রানে। আর রশিদের এই মেডেন ও ২ উইকেটের ওভারটা ম্যাচের ভোল পাল্টে দেয়। যে দিল্লি হেলায় জিততে চলেছিল, সেই দলটার জয় নিয়েই আশঙ্কা তৈরি হয়ে যায় তাদের সমর্থকদের মধ্যে।
অক্ষর ফেরার পর ১৭ তম ওভার করতে আসেন থাম্পি। হায়দরাবাদের বোলিং স্কোয়াডের সবচেয়ে দুর্বল হাতিয়ার। ঋষভ বুঝতে পারেন এই ওভারে যদি রান না তুলে রাখা যায় তবে জয় অনিশ্চিত। তাই শুরু হয় চালিয়ে খেলা। আর তা কাজেও লাগে। থাম্পির প্রথম ৪টি বলে ২টি ছক্কা ও ২টি চার হাঁকিয়ে খেলার মোড় ফের নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে দেন ঋষভ। এদিকে অক্ষর ফেরার পর রাদারফোর্ড নেমেছিলেন। কিন্তু তিনিও ছন্দে ছিলেন না। ১২ বল খেলে ৯ রান করে ফেরেন তিনি। তবে খেলা দিল্লির হাতে তখন। যত বল তত রান করতে হবে। এখানেও একটি ছক্কা পেয়ে যান ঋষভ। কিন্তু যখন দলের ৭ বলে ৫ রান দরকার তখনই হঠকারিতাটা করে ফেলেন তিনি। ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচে নাটকীয় জয় আনতে গিয়ে ভুল করে ফেলেন। ক্যাচ তুলে ফেলেন। যা ধরতে ভুল করেননি নবি। নতুন করে চাপ। শেষ ওভারে কিমো পলকে মারতেই দিচ্ছিলেন না খলিল। দারুণ বল করে রান রুখে খেলার মোড় ঘোরাতে থাকেন।
এই অবস্থায় অমিত মিশ্র আবার রান করতে গিয়ে একটি ভুল করে ফেলেন। ক্রিজকে আড়াআড়িভাবে পার করে বল উইকেটে ছুঁড়তে বাধা সৃষ্টি করেন তিনি। যা ক্রিকেটের নিয়মে আউট। আর সেটাই হয়। এধরণের আউট সারা বছরে হাতে গুণে হয়। যা এদিন দেখা গেছে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে। অমিত ফেরার পর শেষ বলে দিল্লির জয়ের জন্য দরকার ছিল ১ বলে ২ রান। আর খলিলের সেই বলেই ব্যাটে বলে করে দেন কিমো। বল চলে যায় বাউন্ডারির ওপারে। চার রান। আর সেই সঙ্গে শেষ বলে ম্যাচ জিতে দিল্লি চলে গেল চেন্নাইয়ের সঙ্গে ফাইনালে পৌঁছনোর লড়াই লড়তে। আর এবারের মত বিদায় নিল হায়দরাবাদ। ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হন ঋষভ পন্থ।