কথায় বলে যার শেষ ভাল তার সব ভাল। আইপিএল আর মুম্বই সেটা করে দেখাল। আইপিএল প্রতিযোগিতা হিসাবে ফাইনালের মত একটা টানটান ফাইনাল উপহার দিল। আর মুম্বই শেষ বলে ম্যাচ জিতে খেলাই শুধু জিতলনা। ট্রফিও জিতে নিল। আর ধরে রাখল তাদের আইপিএল জয়ের পরম্পরা। এক বছর অন্তর আইপিএল জয়ের ধারা। মিডল অর্ডার বিপর্যয়ের বড় খেসারত দিতে হল ধোনিদের। এদিন চেন্নাইয়ের হিরো হয়েও হতে পারলেন না ওয়াটসন। একা লড়ে ম্যাচ যখন জয়ের দোরগোড়ায় নিয়ে যান তিনি ঠিক তখনই হার। শেষ বলে জয়ের জন্য ২ রান আর সুপার ওভারে খেলা নিয়ে যাওয়ার জন্য ১ রান দরকার ছিল। যা করতে ব্যর্থ হল চেন্নাই।
টস জিতে হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে রবিবার সন্ধ্যায় ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ব্যাট করতে নেমে শুরুটা খারাপ করেনি ডি কক, রোহিত শর্মা জুটি। ডি কক ১৭ বলে ২৯ রান করে ফেরেন। কিন্তু ৪টি ছক্কা হাঁকিয়ে যান। এরপর ফেরেন রোহিত শর্মা। ১৫ রান করে ফিরতে হয় তাঁকে। সূর্যকুমার যাদব ও ঈশান কিষাণ জুটি এরপর খেলা টানতে থাকেন। তবে রান তোলার গতি এ সময়ে অনেকটাই ধাক্কা খায়। সূর্যকুমার ১৭ বল খেলে ১৫ রান করে ফেরেন। এরপর খুব দ্রুত ফেরেন ক্রুণাল পাণ্ডিয়া। ৭ রান করে তাঁকে নিজের বলেই দুরন্ত ক্যাচ ধরে প্যাভিলিয়নমুখী করেন শার্দূল ঠাকুর।
পোলার্ড নামেন ব্যাট করতে। কিন্তু মুম্বইয়ের উইকেট পতন অব্যাহত থাকে। এবার ফেরেন ঈশান কিষাণ। ২৩ রান করলেও তিনি ২৬ বল নিয়ে নেন। এখান থেকে কিন্তু পোলার্ডের ব্যাট চলতে থাকে। হার্দিক নেমে বড় শট মারতে গিয়ে শুরুতেই ক্যাচ তুলে ফেলেন। কিন্তু সেই সহজ ক্যাচ ফেলে দেন সুরেশ রায়না। বড় উইকেট হাতছাড়া হলেও ১৬ রানের বেশি টিকতে পারেননি হার্দিক। ম্যাকক্লেনাঘান ও চাহর ০ করে ফেরেন। একাই মুম্বইয়ের রান অনেকটা টানেন পোলার্ড।
শেষ ওভারে স্বদেশীয় ব্রাভোর একটি বল ওয়াইড হলেও তা দেননি আম্পায়ার। তার পরের বলে সেই অসন্তুষ্টিকে ক্রিজে বেড়াতে বেড়াতে ব্যাট করা দিয়ে প্রকাশ করেন পোলার্ড। আম্পায়ার এগিয়ে যান অবস্থা সামাল দিতে। পরে অবশ্য শেষ ২ বলে ২টি চার মেরে মু্ম্বইয়ের রান আরও কিছুটা হলেও বাড়িয়ে দেন পোলার্ড। মুম্বই ২০ ওভার শেষ করে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৪৯ রান করে। পোলার্ড একাই অপরাজিত থেকে করেন ২৫ বলে ৪১ রান।
১৫০ রান করলে শুধু জয় নয়, আইপিএলের কাপও হাতে। এই অবস্থায় সহজ টোটাল তাড়া করতে নেমে শুরুতে সাবধানী ব্যাট করলেও কিছু বল খেলে মারতে শুরু করেন ডু প্লেসি। চেন্নাই সুপার কিংসের ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যান ডু প্লেসি ১৩ বল খেলে ২৬ রান করে বড় শট মারতে গিয়ে স্টাম্পড হন। ডু প্লেসি ফেরার পর মারতে শুরু করেন ওয়াটসন। অন্যদিকে রায়না যদিও নড়বড় করছিলেন। রায়না ফেরেন ৮ রান করে। ওয়াটসন-রাইডু জুটি বাঁধেন। যা কার্যত অল্প সময়ও টেকেনি।
রাইডু মাত্র ১ রান করে বুমরাহ-র বাউন্সার বুঝতে না পেরে উইকেট রক্ষকের হাতে ক্যাচ তুলে আউট হন। এই সময় খেলায় একটা উত্তেজনা তৈরি হয়। পুরো ম্যাচে চেন্নাই সবসময় মুম্বইকে চাপে রাখলেও এখানে চেন্নাই চাপে পড়ে যায়। ধোনি-ওয়াটসন ম্যাচের হাল ধরার লড়াই শুরু করেন। কিন্তু সে লড়াইও টেকেনি। ওভার থ্রো-তে ১ রান নিতে গিয়ে রান আউট হয়ে ফেরেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। আউট নিয়ে বিতর্ক থাকলেও চাপে পড়ে যায় চেন্নাই। সব দায়িত্ব গিয়ে পড়ে ওয়াটসনের কাঁধে।
ওয়াটসন একাই কার্যত ম্যাচ জেতানোর লড়াই শুরু করেন। ব্রাভোকে পাশে নিয়ে ম্যাচ তিনি প্রায় বারও করে আনেন। ব্রাভো ১৫ রান করে ফেরার পর জাদেজা ওয়াটসনকে সঙ্গত দেন। কিন্তু একাই ম্যাচ চেন্নাইয়ের প্রায় ঝুলিতে ভরে দেন ওয়াটসন। বুমরাহ মুম্বইয়ের হয়ে অসাধারণ বোলিং করলেও অন্য বোলাররা মার খাচ্ছিলেন। শেষ ওভারে দরকার ছিল ৯ রান। বল করতে আসেন মালিঙ্গা। শুরু করেন ইয়র্কার। তাতেই ২ রান করতে গিয়ে রান আউট হন ওয়াটসন। আর এখানেই ম্যাচ ঘুরে যায়। তারপরও ম্যাচ হয়তো বার হতেও পারত। কিন্তু শেষ বলে আউট হওয়া চেন্নাইয়ের সব আশা শেষ করে দেয়। ১ রানে জয় পেয়ে ট্রফি জিতে নেয় মুম্বই।