
ইছাপুর ব্যারাকপুরের মধ্যে বসছে নতুন স্বয়ংক্রিয় সিগনালিং সিস্টেম। তার জেরে সোমবার বেলা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল নিয়ন্ত্রিত করেছে পূর্ব রেল। শুক্রবার থেকে সোমবার পর্যন্ত ১৫৮টি ট্রেন বাতিল করেছে তারা। যার প্রভাব শুক্রবারই টের পেয়েছেন যাত্রীরা। প্রবল ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে হাজার হাজার যাত্রীকে। শনিবারও কম রয়েছে ট্রেন। বাতিল হয়েছে অনেক গাড়ি। এই অবস্থায় সোদপুর স্টেশনে এদিন সকাল ১০টা নাগাদ একটি গ্যালোপিং ট্রেন থামবে বলে রেলের তরফে ঘোষণা করা হয় বলে দাবি যাত্রীদের। ফলে তাঁরা নিশ্চিত ছিলেন ওই গ্যালোপিং ট্রেনটি থামবে। তাঁরা উঠতে পারবেন। কিন্তু সেটি সোদপুর স্টেশনে না দাঁড়িয়েই চলে যায়। এরপরই উত্তেজনা চরমে ওঠে যাত্রীদের একাংশে। রেল লাইনে নেমে অবরোধ শুরু করেন তাঁরা।
মালপত্র নিয়ে যাওয়ার হাতে ঠেলা গাড়ি, বড় বড় টিন ট্রেনের লাইনের ওপর ফেলে দেন তাঁরা। নিজেরাও দাঁড়িয়ে পড়েন ট্রেনের সামনে। সে সময়ে বিপরীতমুখী ২টি ট্রেন সোদপুর স্টেশনে আটকে পড়ে। এদিকে ট্রেনে তখন বোঝাই যাত্রী। তাঁরা সমস্যায় পড়েন। তাঁরা কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর অবরোধকারীদের অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করতে থাকেন। কিন্তু অবরোধকারীরা নাছোড় মনোভাব দেখান। এমনকি সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সংবাদ মাধ্যমের ওপরও চড়াও হন কয়েকজন।
এই অবস্থায় সোদপুর স্টেশনে ভিড় বাড়তে থাকে। একে ট্রেন কম। তার ওপর ট্রেন অবরোধের জেরে অবস্থা ভয়ানক আকার নেয়। এরমধ্যে উত্তেজিত জনতার একাংশ সোদপুর স্টেশনের অফিস ভাঙচুর করেন। ভেঙে দেওয়া হয় ডিসপ্লে বোর্ড। প্রায় দেড় ঘণ্টা এমন এক স্তব্ধ অবস্থা চলার পর সেখানে হাজির হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। আসে র্যাফ। পুলিশ বুঝিয়ে অবরোধ সরানোর চেষ্টা শুরু করে। কিন্তু অবরোধকারীরা তখনও নাছোড় অবস্থান ধরে রাখেন।
এভাবে চলতে থাকার পর সওয়া ১২টা নাগাদ পুলিশের পাশাপাশি অবরোধকারীদের সরাতে নেমে আসেন ট্রেনের জন্য অপেক্ষারত মানুষ সহ দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনের যাত্রীরা। শুরু হয় দু’পক্ষে ধস্তাধস্তি। অপেক্ষমাণ যাত্রীরাই ট্রেনের লাইনের ওপর থেকে হাতে ঠেলা গাড়ি, টিনের পাত সরিয়ে দেন। যাতে ট্রেন চলাচল করতে পারে। পুলিশও দীর্ঘক্ষণ বোঝানোর চেষ্টার পর অবশেষে লাইন থেকে লোকজনকে সরিয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করতে তৎপর হয়।
দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ অবশেষে লাইন পরিস্কার হয়। পিছু হঠেন অবরোধকারীরা। যাত্রী বোঝাই ট্রেন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। এদিকে অবরোধের জেরে অন্যান্য স্টেশনেও আটকে পড়েছিল একের পর এক ট্রেন। সেগুলিও অবশেষে বোঝাই যাত্রী নিয়ে চলাচল শুরু করে। ক্রমশ স্বাভাবিক হতে থাকে সোদপুর স্টেশনের পরিস্থিতি।
এদিকে সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় অনেকেই গন্তব্যে পৌঁছতে সড়কপথ ব্যবহার করেন। যার জেরে বিটি রোডের ওপর প্রবল চাপ এসে পড়ে। যে বাসগুলি বিটি রোড ধরে নিত্য যাতায়াত করে সেগুলিতে বাদুড়ঝোলা ভিড় হয়ে যায়। ভিড়ের চাপে অনেক বিটি রোডের বাসিন্দাই বাসে চড়তে পারেননি। ফলে বিটি রোডের ওপর এই চাপও বহু মানুষকে সমস্যায় ফেলে। তাঁরা অনেকে দীর্ঘ অপেক্ষার পর কোনওক্রমে বাসে উঠেছেন। অনেকে ফিরে গেছেন বাড়িতে।