একেই বোধহয় বলে রাখে হরি মারে কে! সে মানুষই হোক বা অন্য কোনও জীব। সিনেমার পর্দায় অনেকেই এমন এক দৃশ্য দেখে অভ্যস্ত যে একটি ট্রেন ছুটে আসছে। আর লাইনের ওপর কেউ আটকা পড়েছেন বা আত্মহত্যা করতে যাচ্ছেন। ট্রেনের চালক লাইনে কাউকে দেখামাত্র আপ্রাণ চেষ্টা করছেন ট্রেনটিকে দাঁড় করাতে। অবশেষে টানটান দৃশ্যের শেষে ট্রেন সশব্দে দাঁড়ায়।
চাকা থেকে ঠিকরে বার হয় আগুন। ট্রেনের সামনের অংশ প্রায় ঠেকে যায় কারও দেহে বা চোখের সামনে। নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান তিনি। এ তো সিনেমার দৃশ্য, কিন্তু ভাবুন ঠিক এটাই যদি বাস্তবে হয়! তাও আবার মধ্যরাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঘন জঙ্গলের মাঝখানে! অবাক হচ্ছেন! না অবাক হওয়ার কিছু নেই। হুবহু এমন এক ঘটনা ঘটেছে অসমের জঙ্গলে।
অসমের বোগিনাড়ি ও গোগামুখ রেল স্টেশনের মাঝে রয়েছে বিশাল জঙ্গল। এখানে ট্রেন লাইন গেছে জঙ্গলের বুক চিরে। ফলে ট্রেনের লাইনের ওপর দিয়ে নিত্য বন্যপ্রাণির যাতায়াত। তাই রেল কর্তৃপক্ষ এখানে চালকদের ট্রেন ধীরে চালানোর নির্দেশ দিয়েছে। সতর্ক থাকতে বলেছে। বলা তো এমন কতই থাকে! তাতে ট্রেনের ধাক্কায় হাতি মৃত্যুতে লাগাম পরানো গেছে কী? উত্তরটা সহজ। যায়নি। কিন্তু এক্ষেত্রে অসমের ওই ২ স্টেশনের মাঝে মধ্যরাতে ট্রেন যাচ্ছিল নিয়ম মেনে একটু আস্তেই। আর চালকের কড়া নজর ছিল লাইনে।
এক সময়ে চালকের নজরে আসে যে রাতের অন্ধকারেই একটি পূর্ণবয়স্ক হাতি লাইন পার হচ্ছে। দেখা মাত্র চালক ট্রেন দাঁড় করানোর জন্য ব্রেক কষেন। কিন্তু ট্রেনে ব্রেক কষলেই তা দাঁড়িয়ে পড়েনা। থামতে সময় নেয়। আর সেই সময় নেওয়ার সময় ট্রেনটি ক্রমশ লাইনের সঙ্গে ঘষটে এগোতে থাকে হাতিটির দিকে। যখন ট্রেনটি থামে তখন হাতির সঙ্গে ট্রেনের কোনও দূরত্বই নেই। ট্রেন থামার মুহুর্তে হাতির গায়ে ট্রেনের সামনের অংশের হাল্কা ছোঁয়াও লাগে। আর সেই ছোঁয়া লাগতেই সতর্ক হয়ে যায় হাতি।
ট্রেন থেকে নেমে গার্ড দ্রুত এগোন হাতির কী অবস্থা তা দেখতে। আর তখনই তাঁর নজরে পড়ে একটি হাতি জঙ্গলের মধ্যে দ্রুত মিলিয়ে যাচ্ছে। হাতি যে ভয় পেয়েই ওই ছুট লাগিয়েছে তা পরিস্কার হয়ে যায়। ফের ট্রেন তার গন্তব্যে যাত্রা করে। এদিন শুধুমাত্র চালকের আপ্রাণ চেষ্টায় অন্তত একটি হাতি ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফিরল। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা