টানটান উত্তেজনা। পরতে পরতে ম্যাজিক। রবীন্দ্র সরোবরের মাঠ এ খেলার সঙ্গে বড় একটা পরিচিত নয়। এ ফুটবলের ঘরানাই আলাদা। কলকাতা ফুটবলের মক্কা হতে পারে, কিন্তু এত গতির ম্যাচ এ শহরে বড় একটা খেলা হয়না। হল শনিবার সন্ধেবেলা।
আইএসএলের সেমিফাইনালের প্রথম ম্যাচ। যুযুধান দুই পক্ষ কলকাতা ও মুম্বই। ধারে ভারে মুম্বই সবসময়েই ছিল এগিয়ে। কলকাতাই আন্ডারডগ। দিয়েগো ফোরলানের মত তারকা ফুটবলার নিয়ে তৈরি মুম্বই লিগের ম্যাচগুলোতেই নিজের জাত চিনিয়ে দিয়েছিল। বরং মলিনার কলকাতা লিগের সব ম্যাচেই কিছুটা রক্ষণাত্মক খেলা উপহার দিয়েছে। কিন্তু এদিন কিক অফের সঙ্গে সঙ্গেই বোঝা গেল এদিন কলকাতার অন্য রূপ দেখতে চলেছে সকলে।
তুরুপের তাসটা সেমিফাইনালের জন্য বাঁচিয়ে রেখেছিলেন মলিনা। খেলা শুরুর মাত্র ২১ সেকেন্ডের মাথায়ই মুম্বইয়ের জালে বল ঢোকাচ্ছিল কলকাতা। কিন্তু অফ সাইড হওয়ায় গোল হয়নি। তাতে কী! শুরু থেকেই মুম্বইয়ের গোলে আক্রমণ শানানো কলকাতা খেলার ২ মিনিট ২২ সেকেন্ডের মাথায় দিদিকার অদ্ভুত হেডে গোল পেয়ে এগিয়ে যায়। শুধু বল নয়, বল রুখতে গিয়ে গোলকিপার অমরিন্দর পর্যন্ত জালে জড়িয়ে যান।
শুরুতেই ঝটকা খেয়ে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে মুম্বই। তাদের ছন্দবদ্ধ প্রতি আক্রমণে ক্রমশ খেই হারাতে থাকে কলকাতার ফুটবল। অন্যদিকে মুম্বইয়ের আক্রমণ, ফোরলানের মাপা শটগুলো মুম্বইকে চেনাতে শুরু করে। আক্রমণ ফলও দেয়। খেলার ৯ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের মাথায় আনমার্কড লিও কোস্তার জোড়াল শট ঢুকে পড়ে কলকাতার গোলে। খেলার দশ মিনিট হওয়ার আগেই দু’দুটো গোল। খেলায় সমতা ফেরায় মুম্বই। সমতা ফেরানোর পর যেন আরও গতি পেয়ে যায় মুম্বই। মুম্বইয়ের হিসেবি ফুটবলের সামনে বেশ খানিকটা ছন্নছাড়া লাগতে শুরু করে হিউমদের। একসময়ে মনে হচ্ছিল কলকাতাকে এদিন এক ডজন গোল দিলেও বলার কিছু নেই। মুম্বইয়ের দুরন্ত ফুটবলের মাঝেই খেলার ১৮ মিনিটের মাথায় কলকাতার গোললাইনের পাশ থেকে ফ্রি কিক পায় তারা। ফ্রি কিক নিতে আসেন স্বয়ং ফোরলান। ফলে যা হওয়ার তাই হল। ফোরলানের ইঞ্চি মাপা শটে শুধু মাথাটা ঠেকিয়ে দেওয়ার অপেক্ষা। সেটা ঠিকঠাকই করেন ব্রাজিলের ফুটবলার গারসন। ফের কলকাতার জালে বল। এক গোলে এগিয়ে মুম্বই।
এক গোলে এগিয়ে থেকেও পিছিয়ে গিয়ে এবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেন পস্টিগা, দ্যুতিরা। আস্তে আস্তে ক্রমশ খেলায় ফিরতে থাকে কলকাতা। মুম্বইয়ের গোলে আক্রমণ আছড়ে পড়তে থাকে। খেলার ৩৯ মিনিটের মাথায় দ্যুতির টাচ ফুটবলে বাড়ানো পাসে ডান পায়ের জোড়াল শট হিউমের। আর বুলেটের গতিতে বল মুম্বইয়ের জালে। সমতায় ফেরে কলকাতা। খেলার প্রথমার্ধের ৪৫ মিনিটের শেষে ইনজুরি টাইমের জন্য ২ মিনিট ধার্য হয়। আর ৪৬ মিনিটের মাথায় পস্টিগাকে মুম্বইয়ের গোললাইনের মধ্যে রাফ ট্যাকল কলকাতার ভাগ্য খুলে দেয়। পেনাল্টি পায় কলকাতা। শট নিতে আসেন হিউম। অব্যর্থ শট। ফের গোল। প্রথমার্ধের শেষ মুহুর্তে ৩-২ গোলে এগিয়ে যায় কলকাতা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ফের গোল করার পরপর দুটি সুযোগ পান হিউম। কিন্তু কাজে লাগেনি। এদিকে ফোরলানকে সারাক্ষণ ঘিরে রাখায় তিনিও মেজাজ হারাতে শুরু করেন। কাজে লাগে মলিনার পলিসি। মাথা গরম করে একটি বাজে ফাউল করে ফেলেন ফোরলান। হলুদ কার্ড দেখতে হয়।
এদিকে ফোরলানকে ঘেরা বন্ধ হয়না। খেলার ৭৩ মিনিটের মাথায় ফের কলকাতার জুয়েল রাজাকে ফাউল করেই হাতে লাগানো ক্যাপ্টেন ব্যান্ডটা খুলে ফেলেন ফোরলান। বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম তারকা এই ফাউলে বেশ বুঝতে পারেন তাঁকে আবার হলুদ কার্ড দেখতে হবে। আর দুবার হলুদ কার্ড মানে লাল কার্ড। লাল কার্ড দেখে ফোরলানের মত খোলোয়াড়ের মাঠ ছাড়াটা অবশ্যই গোটা প্রতিযোগিতার এক অন্যতম মুহুর্ত। ফিরতি হোম ম্যাচেও ফোরলান খেলতে পারবেন না। এটা কলকাতার জন্য অবশ্যই সুখবর। এদিকে ১০ জনে মাঠে থাকা মুম্বইয়ের জালে আরও বল জড়িয়ে গোল ব্যবধান বাড়িয়ে রাখার জন্য শেষ পর্যন্ত হাবি লারা, বেলেনকোসো, রুইদাস, প্রায় সব পরিবর্ত খেলোয়াড় দিয়েই চেষ্টা চালিয়ে যান মলিনা। কিন্তু ফল হয়নি। খেলা শেষ হয় ৩-২ ফলেই। কলকাতা এগিয়ে রইল ১ গোলে। ফিরতি ম্যাচে ড্র করতে পারলেই ফাইনালে পৌঁছে যাবে কলকাতা। আগামী মঙ্গলবার মুম্বইয়ের মাঠে ফিরতি সেমিফাইনাল।