Sports

রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে আইএসএল ২০১৬–র কাপ ঘরে তুলল কলকাতা

রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ বলতে যা বোঝায় তাই। আইএসএলের ৩টি পর্বের মধ্যে ২টি পর্বেই কাপ ঘরে তুলল কলকাতা। ২০১৪, ২০১৬। ২০১৪-তেও কেরালাকে হারিয়েই কাপ জিতেছিল কলকাতা। ২০১৬-তেও ঠিক তাই হল। প্রথমবার শ্রেয় গিয়েছিল কোচ হাবাসের ঝুলিতে। আর এবার কলকাতার এই জয়ের অনেকটা শ্রেয় যাচ্ছে কোচ মলিনার পকেটে। এদিন সকাল থেকই কোচির মাঠ হলুদে হলুদে ছয়লাপ। কলকাতায় সমর্থক দূরবীন দিয়ে খুঁজতে হচ্ছে। কেরালার মালিক শচীন তেন্ডুলকরের পাশে ঠায় বসে রইলেন আইএসএলের চেয়ারম্যান নীতা আম্বানি। কিন্তু খেলা তো মাঠে। আর তা খুব ভাল করে জানতেন কলকাতার অন্যতম মালিক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। আলাদা বসে অপেক্ষা করেছেন সেই মাহেন্দ্রক্ষণের। আর টাইব্রেকারে দেবজিতের শেষ রক্ষার পর জুয়েলের গোলে যখন কলকাতা আইএসএল চ্যাম্পিয়ন। যখন মাঠে আনন্দে লাফাচ্ছেন মলিনার সঙ্গে ডাগআউট। যখন খেলোয়াড়েরা বুঝে উঠতে পারছেন না এই আনন্দ প্রকাশ করবেন কীভাবে। ঠিক তখন বিজয়ের হাসি দেখা গেছে সৌরভের মুখে। এদিন খেলার শুরুতে কিন্তু কিছুটা অগোছালো লাগছিল কলকাতাকে।

৪-২-৩-১ ছকে খেলতে নামা কলকাতার পায়ে বল তেমন থাকছিল না। বরং বল দখলের লড়াইয়ে শুরুতেই নিজেদের দাপট দেখাতে শুরু করে কেরালা। পরপর বেশ কয়েকটা সুযোগও তৈরি করে নেয়। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয়নি। মিনিট দশেক পর থেকে খেলায় ফিরতে শুরু করেন কলকাতার খেলোয়াড়েরা। মাঝমাঠ থেকে নিজেদের মধ্যে পাশ খেলে কেরালার গোলের মুখে যাওয়ার পথ খুঁজে বার করে নিতে শুরু করেন হিউম, পস্টিগা, দিদিকারা। শুধু তাই নয়, একের পর এক সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হতে থাকে কেরালার গোল মুখে। কলকাতার মার্কি ফুটবলার হয়েও সেসব সুযোগ কিন্তু কাজে লাগাতে পারেননি পস্টিগা। নিশ্চিত কয়েকটা গোল তাঁর পা থেকে মিস হয়ে যায়। কিন্তু খেলায় দাপট তৈরি করে কেরালাকে মানসিকভাবে চাপে ফেলে দেয় কলকাতা। তারমধ্যেই চোটের জন্য ভাল খেলতে না পারা কেরালার মার্কি ফুটবলার অ্যারন হাগেসকে তুলে নামানো হয় সেনেগালের ফুটবলার এনডোয়েকে। আর ঠিক তার পরেই ম্যাজিক। দাপটে থাকা কলকাতার বিরুদ্ধে একটা কর্নার আদায় করে নেয় কেরালা। কর্নার করতে আসেন মেহতাব। আর সেই কর্নার থেকে অব্যর্থ হেডে কলকাতার জালে বল জড়িয়ে দেন মহম্মদ রফি। দুরন্ত হেড। দুরন্ত গোল। যার হাত ধরে কেরালা ১-০-তে এগিয়ে যায় ফাইনালে। গোল করার সুফলও পায় তারা। চাপে পড়ে যাওয়া কেরালা হঠাৎ খেলায় ফিরতে শুরু করে।


কলকাতার গোলমুখ খোলার চেষ্টার তীব্রতা বাড়ায়। পাল্টা আক্রমণ করতে থাকে কলকাতাও। কিন্তু কোথাও যেন পস্টিগা-হিউমের সমীকরণটা এদিন খাপে খাপে পড়ছিলনা। ৪৩ মিনিটে খেলোয়াড় পরিবর্তন করে কলকাতাও। পেরেইরাকে তুলে নিয়ে সেখানে নামানো হয় দারুণ ফর্মে থাকা প্রবীর দাসকে। খেলোয়াড় পরিবর্তনের পর সাফল্য পেয়েছিল কেরালা। কলকাতার সাফল্যও এল খেলোয়াড় পরিবর্তনের ঠিক পরেই। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার ঠিক আগে। ৪৪ মিনিটের মাথায় এবার কলকাতা কর্নার পায়। দ্যুতির করা মাপা কর্নারে সব প্রতিরোধকে হার মানিয়ে সঠিক হেডটি করে দেন সেরেনো। বল জড়িয়ে যায় কেরালার গোলে। সমতা ফেরে খেলায়। ফলাফল হয় ১-১। প্রথমার্ধে আক্রমণ শানানোর ক্ষেত্রে দুটো দলকে যতটা ছন্দবদ্ধ মনে হয়েছিল, দ্বিতীয়ার্ধে কিন্তু তা হয়নি। সেটা আরব সাগরের ধারের শহর কোচির ভয়ংকর আর্দ্রতার কারণেও হতে পারে। কারণ অনেক সময়ে খেলোয়াড়দের হাত থেকে বল পিছলে পড়া দেখেও তা বোঝা যাচ্ছিল। সম্ভবত প্রচণ্ড ঘামে কিছুটা হলেও নিজেদের খেলাটা খেলতে পারছিলেন না দু’পক্ষের ফুটবলাররা। তবে এদিন খেটে খেলা কাকে বলে তা সেরেনো দেখিয়ে দিয়েছেন। মাথাও ফাটে তাঁর। ব্যান্ডেজ জড়িয়ে মাঠে নেমেছেন। ব্যান্ডেজ চুইয়ে রক্ত ঝরেছে। তবু খেলে গেছেন দলের জন্য। তবে কোনও কিছুই কাজে আসেনি দ্বিতীয়ার্ধে। গোল আসেনি। ফলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

৩০ মিনিটের এই খেলায় দু’পক্ষই যে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে তা বারবার ফুটে উঠেছে। খেলায় স্নায়ুর চাপ এতটাই বেশি ছিল যে অতিরিক্ত সময়ে একবার কলকাতার কোচ মলিনাকে সতর্ক করতেও দেখা যায় ইরানের রেফারিকে। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে কলকাতার প্রাপ্তি একগুচ্ছ কর্নার। যে কর্নার সবসময়েই ফুটবলের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। কিন্তু নির্বিষ কর্নারে তেমন কোনও সম্ভাবনা কলকাতা তৈরি করতে পারেনি। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধও শেষ হয় গোল শূন্যভাবে। দ্বিতীয়ার্ধেও সেই একই কাহিনির পুনরাবৃত্তি। তবে দ্বিতীয়ার্ধে অনেকগুলো সুযোগ দু’পক্ষের জন্যই তৈরি হয়েছিল। কিন্তু মিস পাস আর একে অপরের পা থেকে বল কাড়ার ঘটনা এত বেশি হয়েছে যে খেলায় পজিশন তৈরি করেও গোল হয়নি। খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। সেই টাইব্রেকারেই রুদ্ধশ্বাস জয় ছিনিয়ে নিল কলকাতা। প্রথমে কিন্তু পিছিয়ে পড়েছিল কলকাতা। হিউমের মিস স্বপ্ন ভঙ্গের পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেরালার শেষ টাইব্রেকারের শট দেবজিতের পায়ে শেভ হওয়ার পর জুয়েল রাজা ভুল করেননি। কেরালার গোলে বল জড়াতেই আনন্দের লাফ দেয় মলিনা সহ কলকাতার ডাগ আউট। ২০১৬-র আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হল অ্যাটলেটিকো দে কলকাতা।


Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button