ইন্ডিয়ান সুপার লিগের প্রথম বছরই তাদের ক্ষমতা বুঝিয়ে দিয়েছিল কলকাতার দল এটিকে। সেবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা। তৃতীয় বারেও তারাই চ্যাম্পিয়ন হয়। তারপর কয়েক বছর অধরা ছিল ট্রফি। তারপর ফের শনিবার কলকাতার ঘরে তৃতীয়বারের জন্য আইএসএল-এর ট্রফি এনে দিলেন রয় কৃষ্ণা, জাভি, উইলিয়ামস, গার্সিয়া-রা। করোনা ভাইরাসের জেরে গোয়ার ফাঁকা স্টেডিয়ামে হয় ফাইনাল ম্যাচ। সেখানে চেন্নাইয়ান এফসি-কে ৩-১ গোলে হারিয়ে দেয় কলকাতা।
শনিবার খেলা শুরুর ৫ মিনিটের মাথায় চেন্নাই প্রবল আক্রমণে ঢোকে। তাদের জোড়াল শট কলকাতার গোলপোস্টের ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। মাথা চাপড়ে ওঠেন চেন্নাইয়ের কোচ থেকে খেলোয়াড় সকলেই। এর ৫ মিনিট পর খেলার ১০ মিনিটের মাথায় রয় কৃষ্ণার ফ্ল্যাঙ্ক থেকে তোলা ক্রস পৌঁছয় জাভির পায়ে। ভুল করেননি জাভি। বাঁ পায়ের মাপা শটে বলকে চেন্নাইয়ের জালে জড়িয়ে দেন। এই আইএসএল-এ ফাইনালে এসেই প্রথম গোল পেলেন জাভি হার্নান্ডেজ। কলকাতা এগিয়ে যায় ১-০ গোলে। প্রথমার্ধে এরপর চেন্নাই ও কলকাতা, ২ দলই প্রতিপক্ষের গোলের মুখে একবার করে প্রায় নিশ্চিত গোলের সুযোগ হাতছাড়া করে। তবে কলকাতার জন্য প্রথমার্ধে সবচেয়ে খারাপ খবর ছিল রয় কৃষ্ণার চোট পেয়ে মাঠ ছাড়া।
দ্বিতীয়ার্ধে এটিকে কোচ হাবাস যে কোনও একটা তাস খেলবেন তা জানা ছিল। কী হবে সেটাই ছিল দেখার। দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরুর ৩ মিনিটের মাথায় সেটাই দেখা গেল। একটা বাড়ানো শট চেন্নাইয়ের গোলের মুখে পেয়ে যান গার্সিয়া। ভুল করেননি। জোড়াল শটে গোলকিপারকে পরাস্ত করে বল গিয়ে লাগে গোল পোস্টে। কিন্তু পোস্টের ভিতরের কোণায় লাগায় বল জড়িয়ে যায় জালে। কলকাতা এগিয়ে যায় ২-০ গোলে।
২ গোলে পিছিয়ে পড়ে খোঁচা খাওয়া বাঘের মত পাল্টা আক্রমণ শানাতে থাকে চেন্নাই। একের পর এক আক্রমণ হতে থাকে কলকাতার বক্সে। এটিকে-র তখন প্রায় সব খেলোয়াড়ই স্টপার আর ডিফেন্সে কাজ করছেন। এভাবে বেশিক্ষণ অবশ্য চেন্নাইকে ঠেকানো যায়নি। খেলার ৬৯ মিনিটে কলকাতার গোলকিপার অরিন্দম ভট্টাচার্যকে পরাস্ত করে গোল পোস্টের ধার ঘেঁষে বালকিসের সপাট শট জালে জড়িয়ে যায়। ব্যবধান কমায় চেন্নাই। ২-১ ব্যবধান হতেই চেন্নাই আরও কড়া আক্রমণ শুরু করে। কিন্তু কলকাতার রক্ষণ সামলাতে থাকে। ৯০ মিনিটের খেলা শেষেও স্কোর ছিল ২-১। ইনজুরি টাইম দেওয়া হয় ৪ মিনিট। তার ৩ মিনিট পর চেন্নাইয়ের গোলে কাউন্টার হানা দেয় কলকাতা। গতিতে বাকিদের পরাস্ত করে প্রথম গোল করা জাভি ফের মাপা জোড়াল শটে চেন্নাইয়ের জালে বল জড়িয়ে দেন। কলকাতা এগিয়ে যায় ৩-১ ব্যবধানে।
৩-১ ব্যবধান। খেলা বাকি আর ১ মিনিট। এখান থেকে আর কামব্যাক করা যায়না। চেন্নাইও পারেনি। খেলা ফের শুরু হলেও কলকাতার কোচ হাবাস থেকে বাকিরা অপেক্ষা করছিলেন কখন শেষ বাঁশি বাজবে আর তাঁরা হৈহৈ শুরু করবেন। শেষ বাঁশি বাজতে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন এটিকে অফিসিয়াল থেকে খেলোয়াড়েরা। হাবাসকে শূন্যে তুলে আনন্দে মেতে ওঠেন তাঁরা। ট্রফি হাতে নিয়েও উচ্ছ্বাসে খামতি ছিলনা রয় কৃষ্ণা, জাভিদের। এমন একটা মুহুর্তের অপেক্ষায় সেই কবে থেকে তাঁরা লড়াই চালিয়ে গেছেন। সেই স্বপ্নের মুহুর্তকে হাতে পেয়ে চুটিয়ে তা উপভোগ করেছেন সকলে।