চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগান, বেঙ্গালুরুকে হারিয়ে ভারতসেরা সবুজ মেরুন পেল জোড়া মুকুট
লিগ শিল্ড আগেই জেতা হয়ে গেছে। এবার ছিল কাপ জেতার চ্যালেঞ্জ। আর সেই চ্যালেঞ্জে বেঙ্গালুরুকে হারিয়ে আইএসএল চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগান। স্বপ্নের সন্ধেয় যুবভারতীর রং সবুজ মেরুন।

২০২২-২৩-এ যে বেঙ্গালুরুকে ফাইনালে টাইব্রেকারে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মোহনবাগান, সেই বেঙ্গালুরুকেই এবার ২-১ গোলে হারিয়ে আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হল মোহনবাগান। কলকাতার কোনও ক্লাব হিসাবে এই প্রথম মোহনবাগান আইএসএল-এ লিগ শিল্ড ও কাপ জিতল।
এদিন কিন্তু খেলা শুরুর পর প্রথম দিকটা মোহনবাগান নিজের দাপট দেখাতে পারলেও ক্রমে খেলার রাশ নিজেদের হাতে নিয়ে নেয় বেঙ্গালুরু। একের পর এক আক্রমণ হানাতে থাকে মোহনবাগান গোলে। জালে বল জড়ানো বাদ দিয়ে বেঙ্গালুরু দারুণ আক্রমণাত্মক ফুটবলই উপহার দেয় প্রথমার্ধে।
তুলনায় মোহনবাগানকে পরিকল্পনাহীন লেগেছে অনেকটাই। দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরুর পরও বেঙ্গালুরুর দাপট অব্যাহত ছিল। খেলার ৪৯ মিনিটে মোহনবাগানের গোলের দিকে বেঙ্গালুরুর শট ক্লিয়ার করতে যান অ্যালবার্তো রডরিগেজ।
কিন্তু ক্লিয়ার করার জায়গায় তাঁর পায়ে বল লেগে তা জড়িয়ে যায় মোহন জালে। সেমসাইড করে বসেন মোহনবাগান তারকা অ্যালবার্তো। বেঙ্গালুরু ১ গোলে এগিয়ে যায়।
১ গোলে পিছিয়ে পড়েও যে দারুণভাবে খেলায় ফিরতে পেরেছিল মোহনবাগান এমনটা নয়। তবে আক্রমণ বাড়াতে থাকে। খেলার ৭১ মিনিটে মোহনবাগানের ম্যাকলারেনের গোলমুখী শট পেনাল্টি বক্সের মধ্যে হাতে লাগিয়ে বেঙ্গালুরু চরম ভুলটা করে ফেলে।
পেনাল্টি কিক পায় মোহনবাগান। এটাই কার্যত ছিল খেলার টার্নিং পয়েন্ট। মোহনবাগানেরও ঘুরে দাঁড়ানো শুরু হয় এখান থেকে। পেনাল্টি নিতে এসে জেসন কামিন্স কোনও ভুল করেননি।
বেঙ্গালুরুর জালে বল জড়িয়ে খেলায় সমতা ফেরান জেসন। শব্দকল্পদ্রুমে ফেটে পড়ে যুবভারতী। মেরিনার্সরা যেন জয়ের স্বাদ পাওয়ার আশায় জেগে ওঠেন।
এরপর খেলায় আক্রমণ প্রতি আক্রমণ তৈরি হয়। কিন্তু জালে বল জড়ায়নি। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। আর সেই অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে গ্রেগ স্টুয়ার্টের দেওয়া নির্বিষ পাস পায়ে পেয়ে জ্বলে ওঠেন ম্যাকলারেন।
শরীরী মোচড়ে বেঙ্গালুরুর রক্ষণ এবং গোলকিপারকে কার্যত সময় না দিয়েই বেঙ্গালুরুর জালে এক অনবদ্য শটে বল পাঠিয়ে দেন অস্ট্রেলিয়ান তারকা। খেলার ৯৬ মিনিটের মাথায় ২-১ গোলে এগিয়ে যায় মোহনবাগান।
এরপর খেলা যত শেষের দিকে এগিয়েছে ততই যেন ছন্নছাড়া দেখিয়েছে বেঙ্গালুরুকে। শেষের দিকে তাদের খেলা দেখে মনে হচ্ছিল খেলায় সমতা ফেরানোর আশাও তারা ছেড়ে দিয়েছে।
এদিন অতিরিক্ত সময়ে খুব অল্প সময়ের জন্যই মাঠে নামেন মোহনবাগানকে এই পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার অন্যতম নায়ক দিমিত্রি পেট্রাটোস। এদিন কিন্তু মাঠে ৩টি গোল হয়েছে। আর সেই ৩টি গোলই এসেছে কার্যত মোহনবাগানের পা থেকে।
এদিকে শেষ বাঁশি বাজার পর যুবভারতী যেন সবুজ মেরুন রংয়ে মেতে ওঠে। আবিরে, রংমশালে সে এক স্বপ্নের রাত। শহর জুড়ে পুড়তে থাকে আতসবাজি।
লিগ শিল্ড এবার রেকর্ড পয়েন্ট করে জিতেছিল মোহনবাগান। এবার আইএসএল-এর কাপটাও জিতে নিল তারা। লিগ শিল্ড ও কাপ জেতার বিরল সম্মান অর্জন করল বাংলার শতাব্দী প্রাচীন গর্বের ক্লাব মোহনবাগান।