বইমেলা বেলায় খুলে গেলেও ভিড় জমতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায়। তাও সেটা উপচে পড়া ভিড়ের চেহারা নেয় ছুটিছাটার দিনগুলোতেই। অন্য দিনগুলোয় ভিড় হলেও ঠাসাঠাসি অবস্থাটা থাকেনা। ফলে বইমেলার দরজা খুলে গেলেও বই বিক্রেতাদের অপেক্ষা করতে হয়। স্টলে ভিড় জমার অপেক্ষায় কেটে যায় কয়েকঘণ্টা। কিন্তু বইমেলা খুলতেই একটা জায়গায় ভিড়ের খামতি হচ্ছেনা মিলনমেলায়। তার আগে বলে নিই, সায়েন্স সিটির উল্টোদিক দিয়ে মেলায় ঢুকে একের পর এক প্যাভিলিয়ন। সেখানে বহু পাবলিশার্সের স্টল। সবই কার্যত ফাঁকা। সে পরিচিত অক্সফোর্ড হোক বা অনামী নানা স্টল। চেহারায় ফারাক বড় একটা নেই। এভাবে হাঁটতে হাঁটতে ৫ নম্বর প্যাভিলিয়ন ছাড়িয়ে এগোতেই আরও একটি প্যাভিলিয়ন। তার কাছাকাছি ঘেঁষতেই খাঁখাঁ রোদ্দুরে টুংটাং হাতা, খুন্তির আওয়াজ। এটা বইমেলার ফুড কোর্ট। অতিকায় প্যাভিলিয়নের দুধার জুড়ে সারি সারি অস্থায়ী খাবারের দোকান। বিরিয়ানি থেকে চাট, চাইনিজ থেকে রোল। কী নেই! আর সেইসব স্টলে দেখার মত ভিড়! স্টলের পাশেই চেয়ার পাতা। সেখানে দিনদুপুরেই তিল ধারণের জায়গা নেই। তারমধ্যেই বিশাল চাটু বা হাঁড়িতে হাতাখুন্তি পিটিয়ে দোকানিরা গ্রাহক আকর্ষণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। চূড়ান্ত তৎপরতা। গ্রাহক সামলাতে দম ফেলার সময় নেই! খেতে আসা মানুষজনও রসনা তৃপ্তির নেশায় ঘুরে দেখে নিচ্ছেন কোথায় পছন্দের খাবারটি পাওয়া যাচ্ছে! দাম একটু চড়াই। তবু মেলা প্রাঙ্গণে এমন চুটিয়ে ভোজ কম কী! বছরে তো বইমেলা বারবার আসবে না! তাই এমন স্টলও মিলবে না! অগত্যা ছাড়া নেই! দাম যাই হোক বইমেলায় খাওয়ার মজাটাই আলাদা! কোথাও বন্ধুদের জটলায় খাওয়া ঘিরে হৈহৈ। কোথাও পরিবার নিয়ে বইমেলায় এসে খাওয়াটা আগেই সেরে নিচ্ছেন মধ্যবয়সী মানুষজন। তবে ফুড কোর্টে নতুন প্রজন্মের দাপট আর উন্মাদনা দুটোই বেশি। তুলনায় বইয়ের স্টলে ভিড় তো নস্যি! অনেক স্টলই মাছি তাড়াচ্ছে। বই সাজিয়ে দোকানিদের হাই তুলতেও দেখা গেল। ফাঁকা স্টলে চুপচাপ বসে থাকতে থাকতে একটু ঘুম ঘুম আসাটা অপরাধও নয়। যদিও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আনন্দ, মিত্র ঘোষ, পাত্র’জ, মিত্রের মত কিছু পাবলিশার। তবে সে তো সামান্যই। বিশাল মিলনমেলায় হাজার খানেক স্টলের অধিকাংশের চেহারাই এই রকম। এমন করে বিকেল নামলে মেলা প্রাঙ্গণে ভিড় আরও বাড়ে। আর মানুষের পায়ে পায়ে স্টলে কিছুটা হলেও তৎপরতা বাড়ে। তবে বই কেনার ভিড়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে ফুড কোর্টের ভিড়ও। যা কখনই হাতে গোনা কয়েকটা বইয়ের স্টল বাদ দিয়ে অন্য কোনও স্টলকে ছাপিয়ে যাওয়ার বিন্দুমাত্র সুযোগ দেয়নি।