সোমবারই শেষ হল বইমেলা। যাঁরা বইমেলার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত, তাঁরা জানেন বইমেলা শেষ হয় সাধারণত রবিবার। বইমেলার শুরুটাও থাকে প্রথা মাফিক বার ধরে। কিন্তু তা বদলেছে। এবার বইমেলার উদ্বোধন হয় বৃহস্পতিবার। মানুষের ঢল নামে শুক্রবার থেকে। তারপরের সপ্তাহ পুরোটা কাটিয়ে এদিন সোমবার শেষ হল বইমেলা। এক চত্বরে এত বই দেখার সুযোগ আবার ফিরবে আগামী বছর।
সেন্ট্রাল পার্ক চত্বরে বইমেলা গতবছর থেকেই জমে উঠেছে। এবারও তার অন্যথা হয়নি। বইমেলার শুরু থেকেই এবার বইমেলায় ভিড় জমতে শুরু করে। সেই চেনা ছবিও ধরা পড়ে। বইয়ের স্টল তো আছেই, সেই সঙ্গে খাবার দোকানগুলোতেও উপচে পড়া ভিড়। নানা খাবারে ভোজন রসিক বাঙালির মেতে উঠতে সময় লাগেনি।
এবার ৪৩ তম বইমেলার থিম কান্ট্রি ছিল গুয়াতেমালা। গুয়াতেমালার স্টলে কিন্তু উৎসাহী মানুষ ভিড় জমিয়েছেন। এই দেশের সাহিত্য, সংস্কৃতিকে জানতে উৎসুক মানুষের সংখ্যা নেহাত কম ছিলনা। বিদেশি স্টলগুলোতেও ছিল অন্যান্য বারের মত মানুষের ঢল। এছাড়া বিভিন্ন পড়াশোনার বইয়ের বিক্রির পাশাপাশি, বাংলার আদিঅনন্ত কিছু চরিত্র, হাঁদাভোঁদা, বাঁটুল দি গ্রেট, নন্টে-ফন্টে দেদার বিকিয়েছে। বিক্রি হয়েছে হ্যারি পটার থেকে ঠাকুরমার ঝুলি। ছোটদের বই কেনার ধুম এবার বইমেলায় কিন্তু নজর কেড়েছে।
যথারীতি এবার বইমেলায় জাগো বাংলার স্টলের সাজসজ্জা অনেকের চোখ আটকে দিয়েছে। মাটির বাংলাকে তুলে আনার চেষ্টা হয়েছে জাগো বাংলার স্টলে। এখানে অন্য বারের এবারও দিনভর চলেছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সংস্কৃতির অনুষ্ঠান হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের স্টলের সামনেও। এর বাইরে গিটার হাতে তরুণের দল ইতি উতি বসে পড়েছে নিজের মত। বেজে উঠেছে গিটার। সুর তুলেছে নব্য প্রজন্ম। তাতে কখনও প্রতিবাদ, কখনও বিপ্লব তো কখনও ভালবাসা শব্দ ও সুরে মিশে ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশে। বহু মানুষ কিছুক্ষণের জন্য দাঁড়িয়ে পড়েছেন এঁদের সামনে।
লিটল ম্যাগাজিন যেমন বাজার পেয়ে থাকে এবারও তেমনই। কোনও নতুনত্ব নেই। তবে নতুনত্ব একটাই। যা প্রতিবছর নতুন করে ধরা পড়ে। তা হল নতুন কিছু মুখ। একদম ঝকঝকে তরুণ-তরুণী। আর ধরা পড়ে কিছু নতুন বই। পাতলা চটি বই জুড়ে স্বপ্ন তার জাল বোনে। মানুষের মনকে তারা নিজেদের মত করে নাড়া দিতে চায়। অনেক কিছু বলতে চায় তাদের কলম।
এখন তো হাত বাড়ালেই বই। বিভিন্ন সাইটে বিক্রি হচ্ছে বইয়ের সম্ভার। বইমেলার চেয়ে দামেও অনেকটা সস্তা হয় পছন্দের বই। সেইসঙ্গে এখন হুহু করে বাড়ছে সাইবার কিডদের জন্য কিন্ডল এডিশনে বই। এসব কিছুর মধ্যেও বইমেলা তার মাটির গন্ধ আর মানুষের বইয়ের পাতা ওল্টানোর অভ্যাসকে সযত্নে বাঁচিয়ে রেখেছে। বাঁচিয়ে রেখেছে নতুন বইয়ের গন্ধকে। বাঙালির মননকে। বছরের এই সময়টায় অন্তত কটা দিনের জন্য বাঙালি তার অন্তরের গভীরে লুকিয়ে থাকা বইপোকাটাকে উপভোগ করার সুযোগ পায়। প্রবল চাপের কর্মজীবনের দাপটে হারিয়ে যাওয়া বইপ্রেমী মনটাকে একটু অক্সিজেন দেওয়ার সুযোগ পায়। এটাই বা কম কী!