এতদিনের লড়াই বৃথা গেল না। জনতার দাবির কাছে নতিস্বীকার করতে হল সরকারকে। দীর্ঘদিনের প্রচলিত গর্ভপাত বিরোধী আইনের ওপর থেকে কঠোর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বাধ্য হল আয়ারল্যান্ড। ২০১৮-র ২৭ মে থেকে দেশের স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে নিশ্চিন্তে গর্ভপাত করাতে পারবেন অন্তঃসত্ত্বা মহিলারা। আয়ারল্যান্ডে গর্ভপাত আইনত নিষিদ্ধ হয়ে যায় ১৯৮৩ সালে। সেবার গণভোটের মাধ্যমে গর্ভপাতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে অষ্টম সাংবিধানিক সংশোধনী বিল পাস হয়। সেই আইন অনুসারে, আয়ারল্যান্ডে গর্ভপাত করালে ১৪ বছর জেল এবং জরিমানা হওয়ার আইন ছিল। ফলে গর্ভপাত করাতে এতদিন সে দেশের গর্ভবতী মহিলাদের ছুটে যেতে হয়েছে বিদেশে।
সমীক্ষা বলছে, গত তিন দশকে প্রায় দেড় লক্ষ সন্তানসম্ভবা মহিলা বিদেশে গিয়ে গর্ভপাত করিয়ে এসেছেন। আর যাঁরা বিদেশ যেতে পারেননি তাঁদেরকে দিতে হয়েছে আইনি জটিলতার মাশুল। গর্ভবতী মহিলার ক্ষতি হবে জেনেও অনেকসময় গর্ভপাত করাতে রাজি হননি চিকিৎসকরা। সেক্ষেত্রে প্রাণহানি ঘটেছে হবু মায়ের। যেমনটা ঘটেছিল ২০১২ সালে। সেবার শারীরিক জটিলতার কারণে ভারতীয় বংশোদ্ভূত দন্ত চিকিৎসক সবিতা হলাপ্পনাবারের গর্ভেই মৃত্যু হয় ভ্রূণের। আইরিশ আইনে গর্ভপাতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাঁর গর্ভপাত করানোর ঝুঁকি নেয়নি আয়ারল্যান্ডের কোনও হাসপাতাল। ফলে ১৭ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা সবিতার শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। মৃত্যু হয় তাঁর। শুধু আয়ারল্যান্ড নয়, গোটা বিশ্বকেই সেই মর্মান্তিক ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল।
গর্ভপাত সংক্রান্ত অষ্টম সাংবিধানিক আইন বাতিলের দাবিতে এরপরই পথে নামেন গোঁড়া ক্যাথলিক দেশের নাগরিকদের একাংশ। ‘সেভ দ্য এইথ’ আন্দোলনের সমর্থকদের দাবি ছিল, ১২ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে গর্ভপাত করানোর অনুমতি দিক সরকার। এমনকী শরীর সুস্থ থাকলে ২৪ সপ্তাহ পর্যন্তও গর্ভপাত করানো দাবি তোলেন তাঁরা। এরপর চাপে পড়েই গণভোটের আয়োজন করে প্রশাসন। গত শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে শুরু হয় অনলাইন ভোটাভুটি। গণভোটে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে অংশগ্রহণ করেন দেশের প্রায় ৩২ লক্ষ মানুষ। শনিবার সকালে শুরু হয় ভোট গণনা পর্ব। আয়ারল্যান্ডের মানুষ আইন প্রত্যাহারের পক্ষে রায় দেন। এই ঘটনাকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে উল্লেখ করেছেন আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী লিও ভরদকর। গর্ভপাতের পক্ষে জনগণের রায় এক ঐতিহাসিক জয়। এই রায়ের ফলে তাঁদের মেয়ে বিচার পেল। অন্তত তাঁদের মত আর কাউকে অকালে তাঁদের সন্তানকে হারাবে হবে না। এইটুকু সান্ত্বনাই এখন সম্বল মৃত সবিতা হলাপ্পনাবারের পরিবারের।