একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে ছাত্রছাত্রীদের হাত থেকে ছাড়িয়ে আনতে হাজির হতে হল রাজ্যপালকে। রাজ্যপাল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যও। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে বার করে আনতে তাঁকে ভর সন্ধেবেলা হাজির হতে হল। প্রবল ছাত্র আন্দোলনের মুখে পড়তে হল। গাড়িতে আটকে বসে থাকতে হল। দীর্ঘক্ষণের চেষ্টায় রাজ্যপালের গাড়ি নড়ল। তাঁর গাড়িতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে বার করে আনতে হল। এমন ঘটনা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে বেনজির।
এবিভিপি-র নবীনবরণ উপলক্ষে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে ৩টে নাগাদ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হাজির হন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। সঙ্গে ছিলেন তাঁর দেহরক্ষীরা। যাদবপুরে ঢুকে এগোতে গিয়ে এসএফআই-এর ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় তাঁকে। গো ব্যাক ধ্বনি, কালো পতাকা দেখানো হয় তাঁকে। বাবুল সুপ্রিয় ভিড় ঠেলে জোর করে অডিটোরিয়ামের দিকে এগোনোর চেষ্টা করলে শুরু হয় ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি। এ সময় বাবুল সুপ্রিয় ছাত্রদের হাতে নিগ্রহের শিকার হন। তাঁর চুলের মুঠি ধরে টানা হয়। জামা ধরে ছিঁড়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়। কিল, ঘুষিও পড়ে। তারমধ্যেই উপাচার্য হাজির হয়ে তাঁকে অডিটোরিয়ামে নিয়ে চলে যান। সেখানে অনুষ্ঠান শেষ করে বাবুল জানান তাঁকে বেরিয়ে যেতে গেলেও কঠিন বাধার মুখে পড়তে হবে। তাই তিনি উপাচার্যকে পুলিশ ডেকে তাঁকে বার করে নিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু উপাচার্য তাঁকে জানিয়ে দেন তিনি ক্যাম্পাসে পুলিশ ডাকতে পারবেন না। তার বদলে তিনি ইস্তফা দিতেও রাজি।
এই পরিস্থিতিতে বাবুল সুপ্রিয় জোর করে বার হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ফল হয়নি। বিক্ষোভরত ছাত্রছাত্রীরা জানিয়ে দেন তাঁদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন বাবুল। ক্যাম্পাসের মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঢোকার অভিযোগও করেন তাঁরা। সেইসঙ্গে একটি ম্যাগাজিন পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল চত্বরে। পুরো গুলি ভরা। তা নিয়েও তাঁদের আপত্তি ছিল। সব মিলিয়ে বাবুল সুপ্রিয়কে তাঁদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে বলে জানিয়ে দেন বিক্ষোভকারী ছাত্রছাত্রীরা। জানিয়ে দেন ক্ষমা না চাইলে বাবুলকে বার হতে দেবেন না তাঁরা।
এই পরিস্থিতিতে একটি ওবি ভ্যানের বনেটের ওপর উঠে বসেন বাবুল। সন্ধের ক্যাম্পাসে তখনও আন্দোলন এতটুকুও স্তিমিত হয়নি। বাবুল অবশ্য সেখান থেকেই রাজ্যপালকে ফোন করেন। রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করেন। তারপর সন্ধে ৭টা নাগাদ নিজেই বাবুলকে উদ্ধার করতে হাজির হন যাদবপুর ক্যাম্পাসে। রাজ্যপাল ঢুকে গাড়ি থেকে নেমে বাবুলের দিকে এগোতে গেল তাঁর পথ আটকান ছাত্রছাত্রীরা। কিছুক্ষণ চেষ্টা করে এগোতে না পেরে রাজ্যপাল ফেরত আসেন ফের নিজের গাড়িতে। সেখানে বসে অপেক্ষা করেন পুলিশ কতক্ষণে তাঁর জন্য রাস্তা তৈরি করতে পারছে।
অন্তত ১০ মিনিট বসে থাকার পর ফের তিনি বেরিয়ে বাবুল পর্যন্ত পৌঁছতে সক্ষম হন। মন্ত্রীকে সঙ্গে করে তিনি ফিরে আসেন গাড়িতে। তাঁর সঙ্গে তাঁরই গাড়িতে চড়েন বাবুল সুপ্রিয়। কিন্তু রাজ্যপালের গাড়িও ঘেরাও হয়ে যায়। গাড়ির ওপর চড়, থাপ্পড় পড়তে থাকে। এরপর পুলিশের তরফে চেষ্টা হয় ছাত্রছাত্রীদের বোঝানোর। কিন্তু তাঁরা অনড় অবস্থান নিয়ে গাড়ির সামনে বসে পড়েন। পরে তাঁরা একটি চিঠি রাজ্যপালকে দেন। পুলিশও অনুরোধ করে যে তখনই রাজ্যপালের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের একটি প্রতিনিধিদল রাজভবনে যেতে পারে। তারা সেখানে তাদের অভাব অভিযোগ জানাতে পারে। কিন্তু ঘেরাও তোলা হোক। রাত ৮টা ২০ নাগাদ অবশেষে ঘেরাও সরিয়ে সেখান থেকে মন্ত্রীকে নিয়ে বেরিয়ে যান রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। রাজ্যপাল বেরিয়ে যাওয়ার পর দ্রুত পরিস্থিতি শান্ত হয়। এমন বেনজির ঘটনা কিন্তু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় আগে দেখেনি।