চন্দননগরে ৪ দিনের জমজমাট জগদ্ধাত্রী আরাধনার পর দশমীতে মাকে বিদায়ের পালা। বিসর্জনের মুহুর্তে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় আলো ঝলমলে চন্দননগর। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কলকাতার প্রতিমা বিসর্জনকে কার্নিভালের মর্যাদা দিয়েছেন। চন্দননগরের রাজপথে সেখানকার জগদ্ধাত্রী প্রতিমা বিসর্জন সঠিক পরিভাষায় কার্নিভাল না হলেও রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অগণিত মানুষের উপস্থিতি বুঝিয়ে দেয় যে এই ভাসান পর্ব কার্নিভালের থেকে কোনও অংশেই কম নয়।
সোমবার বিকেল নামতেই প্রাক্তন ফরাসি উপনিবেশে বিসর্জনের শোভাযাত্রার মিছিল শুরু হয়ে যায়। রানিঘাট এবং রামেশ্বর মাড়োয়াড়ি ঘাটে মূলত প্রতিমা নিরঞ্জনগুলি হয়ে থাকে। প্রতিমা বিসর্জনটাও এখানে দেখার বিষয়। বিসর্জনের পর বিভিন্ন বারোয়ারি তাদের প্রতিমার কাঠামো জল থেকে তুলে নিয়ে যায়। রেখে দেয় পরের বছরের জন্য। তার আগে যে শোভাযাত্রা সহকারে প্রতিমা গঙ্গাবক্ষে বিসর্জনের উদ্দেশে এগিয়ে যায় সেই শোভাযাত্রা দেখার জন্য রাস্তার দু’ধারে দূরদূরান্ত থেকে মানুষের ঢল নামে।
শোভাযাত্রাতেও থাকে চমকের ছোঁয়া। এবার চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী বিসর্জনের শোভাযাত্রায় ধরা পড়ল নানা বিষয়। যেমন মানুষের মধ্যে মাছ ধরা বা বই পড়ার মতো শখগুলি যেমন ফুটে উঠেছে, ঠিক তেমনি কোনও শোভাযাত্রায় হাজির হয়েছেন বিনোদন সম্রাট চার্লি চ্যাপলিন। কেউ আবার শোভাযাত্রা সাজিয়েছেন রূপকথায়। রাস্তায় কোথাও দেখা মিলেছে সাঁওতাল নাচের তো কোথাও ধরা দিয়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। এমনই নানা ভাবনা বিসর্জনেও চন্দননগরকে তার নিজ বৈভবে উজ্জ্বল করে রাখল। প্রতিটি বারোয়ারির অন্তত ৪টি করে ট্রাক। এভাবেই সন্ধে আলোয় ভরে জমজমাট শোভাযাত্রার সারি এদিন এগোল গঙ্গার দিকে। বিসর্জনের ভিড়ে চলল খাওয়া দাওয়াও। রাস্তার পাশে ফাস্ট ফুডের দোকানেও এদিন সমানতালে চলছে বিকিকিনি।
বিসর্জন বিষাদে বিষণ্ণ ফরাসডাঙ্গার মন। চোখের নিমেষেই শেষ হয়ে গেল ৪ দিনের আনন্দ। তবুও নিয়মনীতি তো সকলকেই মানতে হয়। তাই বিসর্জনের আনন্দ শেষে আগামী বছরের প্রতীক্ষায় থাকা ফরাসডাঙ্গাবাসীর মনে সবশেষে একটা কবিতাই আসে। ‘দিন তো দিনের মতোই যায়, উৎসবের রাত বাড়ে দীর্ঘ হয় ছায়া, মানুষ তো আসলে স্বপ্নে বাঁচে, উৎসবের স্বপ্ন নিয়ে ফিরে আসে বিজয়া’।