২৬ বছর পর পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে পালিত বিশেষ রীতি
২৬ বছরে এই রীতি পালিত হয়নি। আবার হল শুক্রবার। তবে করোনার জন্য এই বিশেষ রীতি পালন দেখা থেকে বঞ্চিত হলেন ভক্তরা।
ভুবনেশ্বর : পুরাণে আছে কার্তবীর্য অর্জুন নামে এক রাজার কথা। তিনি ঋষি দত্তাত্রেয়-র বর লাভ করেন। তিনি বর পান যুদ্ধক্ষেত্রে আরও দক্ষতার সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য তাঁর ১ হাজার হাত তৈরি হয়ে যাবে। যেগুলি কাজে লাগিয়ে তিনি যুদ্ধ করতে পারবেন। তাই তাঁকে সহস্রবাহুও বলা হয়।
মহাভারত এবং রামায়ণে এই সহস্রবাহু-র উল্লেখ পাওয়া যায়। রামায়ণে রাবণের সঙ্গে সহস্রবাহু-র যুদ্ধের কথা পাওয়া যায়। আবার মহাভারতের বন পর্বে সহস্রবাহুর কথা পাওয়া যায়।
সহস্রবাহু নিজের ক্ষমতায় এতটাই অন্ধ ছিলেন যে তিনি অযথাই দেবতা ও ঋষিদের নির্যাতন করতে শুরু করেন। দেবরাজ ইন্দ্রকেও নানাভাবে নির্যাতন করার চেষ্টা করেন হৈহেয়-র রাজা কার্তবীর্য অর্জুন বা সহস্রবাহু।
এমনভাবে সহস্রবাহু একদিন পরশুরামের আশ্রমে হাজির হলেন। সেখানে হাজির হয়ে যথাযথ সেবা সত্ত্বেও তিনি আশ্রমের হোমধেনু বা গাভীর শাবককে সেখান থেরে হরণ করে নিয়ে যান।
তখন পরশুরাম সেখানে ছিলেননা। তিনি ফিরে একথা শুনে ক্রুদ্ধ হয়ে সহস্রবাহুর সঙ্গে যুদ্ধ করতে বেরিয়ে যান। সহস্রবাহুর সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হয়। সেই যুদ্ধে সহস্রবাহুকে শেষ পর্যন্ত জব্দ করেন পরশুরাম।
পরশুরাম তাঁর কুঠার দিয়ে সহস্রবাহুর ১ হাজার হাত কেটে দেন। এই কাহিনি অনেকের জানা। সেই কাহিনির সঙ্গে পুরীর মন্দিরের একটি রীতিরও যোগ রয়েছে।
পুরীর মন্দিরে ‘নাগার্জুন বেশ’ বলে একটি বিশেষ রীতি পালিত হয়। এর আগে এই রীতি শেষবার পালিত হয়েছিল ১৯৯৪ সালে। তারপর ফের হল শুক্রবার।
এই রীতি মত প্রভু জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে যোদ্ধা বেশে সাজানো হয়। তারপর তাঁদের কাছে দেওয়া হয় ১৬টি প্রাচীন অস্ত্র ও বর্ম। এই সনাতন রীতি পালন দেখতে এদিন বহু মানুষের ভিড় জমতে পারত বলে আগে থেকেই সতর্ক ছিল পুরীর প্রশাসন।
পুরীর মন্দিরে যাতে ভক্তদের ভিড় না জমে সেজন্য এদিন পুরী শহরের একটা অংশে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। ২৫ প্লাটুন পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছিল বিভিন্ন কোণায়। মন্দিরের সামনে কোনও জমায়েত হতেই দেওয়া হয়নি। মন্দিরে মন্দিরের সেবায়েত, ট্রাস্টের সদস্য ও আধিকারিকরা এদিন এই রীতি পালনের সময় উপস্থিত ছিলেন।
এদিনের রীতি পালনে ভক্ত সমাগম না হলেও রীতি পালিত হয়েছে যথাযোগ্য মর্যাদায়। প্রভু জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে যে যোদ্ধার পোশাক পরানো হয়েছিল তাতে ছিল সোনার কাজ। আর ছিল যুদ্ধাস্ত্র ও বর্ম। সেই বেশেই পূজিত হন তাঁরা।
যেহেতু এই রীতি ফের ২৬ বছর পর পালিত হল তাই মানুষের মধ্যে উৎসাহ ছিল। কিন্তু প্রশাসন শক্ত হাতে নেওয়ায় ভক্তরা আর মন্দিরে আসতে পারেননি। করোনা রুখতেই এই পদক্ষেপ করে প্রশাসন। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা