World

এপ্রিলের প্রথম রবিবার মানেই সারা দেশের এক আজব পুজোয় মেতে ওঠা

বেসিল হল চেম্বারলিনের রূপকথার এই মজার গল্পের উল্লেখ রয়েছে ‘দ্য আইল্যান্ড অফ ওমেন’ বইতে

সে অনেককাল আগের কথা। জাপানের এক ডানাকাটা সুন্দরী রাজকন্যার প্রেমে পড়ে যায় এক দুষ্টু দৈত্য। যেমন বিকট তাকে দেখতে, তেমনি তার ইয়া লম্বা তীক্ষ্ণ দাঁত। দৈত্যের মনে হিংসার জীবাণু একেবারে থিকথিক করত। তা একবার হল কি, সেই বদমাশ দৈত্য বিশেষ মতলবে রাজকন্যার যোনিপথ দিয়ে নিঃসাড়ে ঢুকে পড়ল তার শরীরের ভিতর। সুন্দরী রাজকন্যা সে কথা টেরও পেলেন না। আসলে রাজকন্যার বিয়ের ঠিক হয়েছিল এক সুপুরুষ রাজপুত্রের সঙ্গে। সেই খবর কানে এসে পৌঁছয় দৈত্যের। রাজকন্যার বিয়ের খবরে জ্বলে পুড়ে লুচির মত ফুলতে থাকে দৈত্য। মনে মনে রাজকন্যাকে জব্দ করতে ফন্দি আঁটে সে।

এদিকে যথারীতি নির্দিষ্ট দিনে ধুমধাম করে রাজকন্যার সঙ্গে বিয়ে হয়ে যায় রাজপুত্রের। ফুলশয্যার রাতে রাজপুত্রের সঙ্গে মিলনে লিপ্ত হন রাজকন্যা। হঠাৎ হৃদয়বিদারক শব্দে কেঁপে ওঠেন রাজপুত্র। তিনি ছিটকে পড়েন শয্যার নিচে। ভয়ে বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে যান রাজকন্যা। অবাক চোখে তিনি দেখেন, বিছানায় চাপ চাপ রক্তের মাঝখানে পড়ে স্বামীর কাটা পুরুষাঙ্গ। আর খাটের নিচে লুটিয়ে আছে রাজপুত্রের নিথর দেহটা। স্বামীর এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়েন রাজকন্যা।


কিন্তু কি করে এমন কাণ্ড ঘটল? কেউই কিছু ঠাওর করে উঠতে পারছে না! আসলে হয়েছিল কি, রাজকন্যাকে সুখে ঘর করতে দেবে না বলে রাজপুত্রের পুরুষাঙ্গে ধারালো কামড় বসিয়ে দেয় হিংসুটে দৈত্য। যার জেরে মৃত্যু হয় রাজপুত্রের। চোখের জলে স্বামীকে শেষ বিদায় জানান রাজকন্যা। তারপর স্বামীশোক ভুলে কিছুদিন পর আরেকজনের সঙ্গে আবার বিবাহবন্ধনে বাঁধা পড়েন তিনি। কিন্তু দ্বিতীয়বারেও সেই একই ঘটনা। একইভাবে পুরুষাঙ্গ হারিয়ে স্বামীকে চোখের সামনে ছটফট করতে করতে মারা যেতে দেখেন রাজকন্যা। এতেই তাঁর মনে সন্দেহ জাগে। বিষয়টি আন্দাজ করতে পারেন তিনি। এবার তিনি একটি মতলব আঁটেন।

একছুটে গিয়ে হাজির হন পরিচিত এক কামারের কাছে। বুদ্ধিমান কামার রাজকন্যার সমস্যার সমাধান বার করতে তৈরি করেন এক বজ্রকঠিন ধাতব লিঙ্গ। সেই লিঙ্গ রাজকন্যার যোনিপথে ঢুকতেই তাতে জোর কামড় বসায় দৈত্য। ব্যাস, আর যায় কোথায়! লোহায় কামড়ানোর ফল দৈত্য পায় হাতেনাতে। তার সবকটা করাল দাঁত ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। বিপদমুক্ত হয় রাজকন্যার যোনিপথ। সুরক্ষিত হয় যৌন মিলন। রক্ষা পায় উৎপাদন ক্ষমতা।


বেসিল হল চেম্বারলিনের রূপকথার এই মজার গল্পের উল্লেখ রয়েছে ‘দ্য আইল্যান্ড অফ ওমেন’ বইতে। সেই গল্প রূপকথার গণ্ডি পেরিয়ে আজ জাপানের টোকিওর অদূরবর্তী শহর কোয়াশাকির মানুষের সংস্কৃতির অন্যতম অংশ। কোয়াশাকিবাসীরা মনে করেন, পুরুষের লিঙ্গ উর্বরতার প্রতীক। আর নারীর যোনিপথ সৃষ্টির ধারক ও বাহক। এদের সুরক্ষিত করতে না পারলে বিলুপ্ত হবে মানব প্রজাতি।

দৈত্য অর্থাৎ অশুভ শক্তি, যেমন নানা যৌনরোগ, বন্ধ্যত্বজনিত সমস্যার কুপ্রভাব থেকে বাঁচাতে তাই লিঙ্গপুজো করা আবশ্যিক বলে মনে করেন কোয়াশাকির নাগরিকরা। তাঁদের সেই অলৌকিক বিশ্বাস ১৯৬৯ সালে জন্ম দেয় এক অদ্ভুত উৎসবের। যার নাম ‘পেনিস ফেস্টিভ্যাল’ বা ‘লিঙ্গ উৎসব’। জাপানি ভাষায় ‘শিনটো কানামারা মাৎসুরি’।

বসন্তের শেষে প্রকৃতি ফিরে পায় তার প্রাণচঞ্চল উর্বর শস্যশ্যামলা রূপ। প্রকৃতির এমন জেগে ওঠার লগ্নকে সাক্ষী রেখেই ইংরাজি বর্ষপঞ্জির এপ্রিল মাসের প্রথম রবিবার পালিত হয় ‘পেনিস ফেস্টিভ্যাল’। চলতি বছরের পয়লা এপ্রিলই রবিবার। এদিন কোয়াশাকির রাস্তা, দোকান নানা আকারের পুরুষাঙ্গে হয়ে ওঠে ছয়লাপ। বিশাল আকারের একটি নিকষ কালো এবং আরেকটি গোলাপি রঙের বিশালাকার শক্তিশালী কৃত্রিম পুরুষাঙ্গ রথে করে বয়ে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় কানায়ামা মন্দিরে। সেখানে ধুমধামসহকারে পুজো হয় লিঙ্গদেবতার।

এদিন উৎসবমুখর মানুষদের জন্য সারাদিন রাস্তার দুপাশে পুরোদমে বিক্রিবাটা চলে পুরুষাঙ্গের মত দেখতে লজেন্স, সবজি, পেনিস আইসক্রিম, মোমবাতি, চিকেন স্টিক এবং আরও কত কিছুর। বাচ্চাদের মনোরঞ্জনের জন্য থাকে পুরুষাঙ্গের মত দেখতে নানা রাইড। পুরুষাঙ্গ পোশাক গায়ে গলিয়ে সারাদিন ধরে চলে ছবি তোলার হুল্লোড়। এদিক-ওদিক এদিন দেখা মেলে নানা কাষ্ঠলিঙ্গের। প্রথমদিকে এই আজব উৎসব অবশ্য যৌনপল্লির নারীরাই কেবল পালন করতেন। এডস-এর মত যৌনমিলনে সংক্রমিত হওয়া রোগের হাত থেকে মুক্তি পেতে। কিন্তু এখন নিঃসন্তান দম্পতি বা নবদম্পতি, ব্যবসায়ী এমনকি সাধারণ মানুষও বছরভর সমৃদ্ধি ও উর্বর জীবনযাপনের আশায় আনন্দ ও উৎসাহ সহকারে মহানন্দে সামিল হন লিঙ্গ উৎসবে।

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button