কলকাতার কালীপুজো বললে হাতে গোনা ফাটাকেষ্ট, সোমেন মিত্র, জানবাজার বা বউবাজারের কালী পুজোগুলোর কথা মনে পড়ে। এখন আরও বেশ কিছু পুজোর নামডাক হয়েছে। আর রয়েছে মন্দির। ঠনঠনিয়া থেকে শুরু করে দক্ষিণেশ্বর অথবা কালীঘাট। কালীঘাটে আবার এদিন হয় মহালক্ষ্মীর আরাধনা। এছাড়াও কলকাতা জুড়ে কালী মন্দিরের সংখ্যা নেহাত কম নয়। সেখানেও পুজো হয় রীতি মেনে। কিন্তু দুর্গাপুজোর জাঁকজমক নিয়ে যদি কালীপুজোতে কোনও শহর সেজে ওঠে তবে তা বারাসত, মধ্যমগ্রাম বা নৈহাটি। বারাসত মধ্যমগ্রামের আবার একটা ঠান্ডা টক্কর চলে বলেও মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এই বছর ওড়িশার কোনারকের সূর্য মন্দিরের দর্শন পেতে চাইলে চলে আসুন কেএনসি-র পুজোয়। বাঙালির পুরী ভ্রমণ নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। আর যাঁরা পুরী ঘুরতে গেছেন তাঁরা একবার অন্তত কোনারক ঘুরতে গেছেনই। ফলে কোনারকের মন্দির সামনে দেখলে চেনা শক্ত নয়। বারাসতের কেএনসি-র পুজোয় এবার সেই কোনারক মন্দিরই উঠে এসেছে হুবহু। বিশাল মাঠ। মাঝে কোনারক মন্দির মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে। সন্ধে নামলে আলোর ছটায় সেই মন্দির ও আশপাশ হয়ে উঠছে ঝলমলে,মোহময়। ছড়ানো জায়গা জুড়ে আলোর কাজ তাক লাগিয়ে দেয়। এমনই এক সুন্দর আবহ ও নিখুঁত প্যান্ডেলে এবার তাদের পুজো সাজিয়ে তুলেছেন কেএনসির পুজো উদ্যোক্তারা। এখানে কালী প্রতিমা সাবেকি। চারপাশে পুজোকে কেন্দ্র করে একটা মেলার আবহ দর্শকদের জন্য বাড়তি পাওনা।
বারাসতের অন্যতম কালীপুজোর একটি অবশ্যই শতদল। মন্দিরের আদলে প্যান্ডেল তৈরি করেছে এই পুজো। প্লাস্টিক, থার্মোকল, প্লাই দিয়ে তৈরি এই প্যান্ডেল। প্যান্ডেলে প্রবেশ করলে কালীর মূর্তির আশপাশে শিবের বিভিন্ন রূপের দর্শন মিলবে। যারমধ্যে বেশ একটা নতুনত্ব আছে।
এবার কলকাতার দুর্গাপুজোয় হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল বাহুবলী টু-য়ের মাহিষ্মতির রাজপ্রাসাদের আদলে প্যান্ডেল। পিছিয়ে নেই বারাসতও। এবার নবপল্লীর পুজোয় উঠে এল বাহুবলী ওয়ান। বাহুবলী পার্ট ওয়ান-এ সেলুলয়েডের পর্দায় একবার ভেসে উঠেছিল এক কালী প্রতিমা। সেই কালী মূর্তির কথা যদি না মনে থাকে তবে বারাসাতের নবপল্লীর প্যান্ডেলে এলে তা মনে পড়ে যাবে। চমকে দেওয়ার মত জাঁকজমকে সাজানো প্যান্ডেলে প্রতিমার আশপাশে জায়গা হয়েছে বাহুবলীর বেশ কয়েকটি প্রধান চরিত্রের। তাছাড়া ছবি দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বাহুবলীর বিভিন্ন মুহুর্ত। সঙ্গে রয়েছে থিম সং। যা তৈরি হয়েছে প্রধানত বাহুবলীর বিভিন্ন ডায়লগ ও সুর দিয়ে। ৩৬ বছরে পা দেওয়া নবপল্লীর পুজো এবার বাহুবলী করে চমকে দিয়েছে দর্শকদের।
বৌদ্ধ মন্দিরের আদলে থিম পূজা এবার কলকাতেও হয়েছে। এবছর দেশপ্রিয় পার্ক ও নেতাজী কলোনি লোল্যান্ড বৌদ্ধ মন্দিরের আদলে প্যান্ডেল সাজিয়েছিল। পিছিয়ে নেই বারাসতও। বারাসতের পাইওনিয়ার ক্লাব কালী প্রতিমাকে আনছে মায়ানমারের ভাসমান বৌদ্ধ মন্দিরে। এই পুজো কমিটির বৈশিষ্ট্য হল জলকে কাজে লাগিয়ে চমক দেওয়া। জলের ওপর বিভিন্ন প্যান্ডেল বানিয়ে তারা বারবার চমকে দিয়েছে দর্শকদের। এবারও তার অন্যথা হল না। প্রতিবছরের মত এইবারেও জলকে কেন্দ্র করেই সেজেছে পাইওনিয়ার ক্লাবের পুজো।
দুর্গাপুজোয় এই বছর বরানগরের বন্ধুদল স্পোর্টিং ক্লাব কানাডার স্বামী নারায়ণ মন্দির করেছিল। যারা সেই মণ্ডপ দেখতে পারেননি তারা এই বছর মধ্যমগ্রামে ইয়ং রিক্রিয়েশনে দেখার সুযোগ পেয়ে যাবেন স্বামী নারায়ণ মন্দির। বারাসতের বিদ্রোহী আবার সাজিয়েছে গুজরাটের স্বামী নারায়ণ মন্দির। মধ্যমগ্রামের ইয়ং রিক্রিয়েশন সাজিয়েছে কানাডার স্বামী নারায়ণ মন্দিরের আদলে। যা সম্পূর্ণ কাচ কেটে তৈরি।
মধ্যমগ্রামের বালক কিশোর সঙ্ঘের পুজো এবার কেদারনাথের মন্দিরের আদলে সাজছে। এই পুজোতেও দর্শকদের ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতন। আবার জঙ্গল বুকের পাতা থেকে তুলে আনা হয়েছে মোগলিকে। মোগলি আসছে মধ্যমগ্রামের চণ্ডীগড় ইউনাইটেড ক্লাবে।
অন্যদিকে নৈহাটির সুখ্যাতি কালী প্রতিমার বিশালত্ব নিয়ে। বিশাল আকারের কালী প্রতিমার জন্য নৈহাটির খ্যাতি সর্বত্র। নৈহাটিতেও কালী প্রতিমা দর্শনে ভিড় জমে চোখে পড়ার মত। কালী পুজোকে কেন্দ্র করে বারাসত, মধ্যমগ্রামের রীতিমত সুখ্যাতি আছে। অবশ্যই তা এখানকার কিছু বারোয়ারি পুজোর জাঁকজমকের কারণেই। সেই ঐতিহ্য এবারও অটুট। বারাসত, মধ্যমগ্রামের মানুষ দুর্গাপুজোয় ট্রেনে-বাসে হাজির হন কলকাতার ঠাকুর দেখতে। আর কলকাতা ট্রেনে বা বাসে চেপে বসে কালী পুজোর দিন। গন্তব্য হয় বারাসত, মধ্যমগ্রাম।
besh guchano lekha hoyeche….