ডাকিনী যোগিনীর ভয়াল রূপে আজও চমকায় আট থেকে আশি
কুমোরপাড়ায় প্রবেশ করে প্রতিমার সাম্রাজ্যের মাঝেই খোঁজ পাওয়া যায় ডাকিনী যোগিনীর বিশাল সম্ভারের। আলাদা করেই বেশিরভাগ বারোয়ারি ডাকিনী যোগিনী কিনে নিয়ে যান।
শহর জুড়ে এখন কালীপুজো। প্রায় সব প্যান্ডেলই পুজোর আয়োজন সম্পূর্ণ। মা কালীর নানা রূপ চমকিত করছে সকলকে। কোথাও মায়ের রং কালো। কোথাও শ্যামা। কোথাও মুখে রুদ্র ভাব, কোথাও অপেক্ষাকৃত শান্ত। তবে বড়দের কাছে মায়ের মূর্তি নিয়ে কৌতূহল থাকলেও ছোটদের কাছে কিন্তু মাতৃ প্রতিমার চেয়েও বেশি কৌতূহল তাঁর দুপাশে বসানো ডাকিনী যোগিনী নিয়ে। অবশ্য সব মণ্ডপেই যে ডাকিনী যোগিনী বসানো হয়েছে, তেমন নয়। কিন্তু কোথাও দেখতে পেলে আর প্রশ্নবাণের শেষ নেই!
আর তাকেই বা বলি কেন! প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরেই শৈশবে কালীপুজোয় শিবের উপর পা দিয়ে জিভ বের করে দাঁড়িয়ে থাকা কালীমূর্তি ছাড়াও আরেকটি বিষয়ও কিন্তু ছিল আকর্ষণের মধ্যমণি। ছোট্ট মন মা কালীর দুপাশে রাখা ডাকিনী আর যোগিনীর বীভৎস মুখ ও ভঙ্গিমায় ক্ষণিকের জন্য হলেও আবিষ্ট হয়ে পড়ত। ছোটবেলার মনে দাগ কাটা সেই ২ চরিত্রের উৎস সন্ধানে বড়দের জন্য থাকত একগুচ্ছ প্রশ্ন। যত না কালী প্রতিমা নিয়ে প্রশ্ন, তার চেয়েও বেশি প্রশ্ন থাকত তাঁর দুপাশের ২ ভয়ংকর দর্শন ডাকিনী-যোগিনী নিয়ে। সে ভয়ও হতে পারে, আবার কৌতূহলও হতে পারে।
প্রতিমার সঙ্গেই আসে ডাকিনী যোগিনী মূর্তি। কুমোরটুলিতেই তৈরি হয় এসব মূর্তি। বারোয়ারির তরফে বায়না হয় একসঙ্গেই। আবার আলাদা করেও বিক্রি হয় ডাকিনী যোগিনী। যদি কোনও বারোয়ারির শখ হয় তবে তারা কালী প্রতিমা নিতে এসে বাজেটে কুলোলে ডাকিনী যোগিনীও কিনে নিয়ে যায়। কালী পুজোয় ডাকিনী যোগিনী থাকা বাধ্যতামূলক নয়। তবে কালী পুজোয় ডাকিনী যোগিনী থাকা মানে কিন্তু দর্শনার্থীদের জন্য অন্য মাত্রা যোগ হওয়া।
কুমোরপাড়ায় প্রবেশ করে প্রতিমার সাম্রাজ্যের মাঝেই খোঁজ পাওয়া যায় ডাকিনী যোগিনীর বিশাল সম্ভারের। আলাদা করেই বেশিরভাগ বারোয়ারি ডাকিনী যোগিনী কিনে নিয়ে যান। ডাকিনী যোগিনী মিলিয়ে দাম মোটামুটি হাজার টাকা থেকে শুরু। আইফোন আর ইন্টারনেট গেমের যুগেও কালী প্রতিমার পাশে ডাকিনী যোগিনীর মত কিছু চরিত্র বাস্তবিকভাবেই টিকিয়ে রেখেছে তাদের অস্তিত্ব।
এখনও যে মূর্তিগুলি প্যান্ডেলে চোখে পড়লে আট থেকে আশির চোখ একবারের জন্যও আটকে যায়। তথাকথিত বড়দের চোখের সামনে ফুটে ওঠে শৈশবের সেই তাক লাগানো ভয় মেশা সময়টার কথা। প্যান্ডেলে ঠাকুর এলে যার টানে পড়িমরি করে ছুটে যেতেন তাঁরা। সেই অবাক হওয়াটা কিন্তু আধুনিক সরঞ্জামের ভিড় কেড়ে নিতে পারেনি।
মনের মূলগত দিক তো বদলায় না। সময়, সুযোগ আর হাতের কাছে জীবনকে সহজ করার নানা উপায় তার আকর্ষণ বদলানোর চেষ্টা করে। কিন্তু শৈশবের চমকগুলো টিকে থাকে তার নিজের জায়গায়। নিজের মত করেই।