এমন কালীপুজো আগে দেখেনি এ শহর
এ কোন কালীপুজো? বড় অচেনা এ পরিবেশ। অচেনা এ পরিস্থিতি। পুজো যেখানে যা হত হচ্ছে বটে, কিন্তু পুজো হলেও পুজোয় প্রাণটাই উধাও।
কলকাতা : আকাশ ঝলমল করছে সোনালি রোদে। নভেম্বরের মাঝামাঝি। তাই হাওয়ায় একটা টান সুস্পষ্ট। তবে উৎসবের জন্য আদর্শ পরিবেশ।
শহরজুড়ে যেখানে যে কালীপুজো হত তাও হচ্ছে নিয়ম মেনে। আলোও কতক লাগানো হয়েছে। মাইকও বাজছে সকাল থেকে। কিন্তু কি যেন নেই!
আসলে যেটা নেই সেটা হল উৎসবের প্রাণ। সেটাই উধাও। কালীপুজোকে কেন্দ্র করে যে আলোর উৎসবটা বাঙালিকে প্রতি বছর মাতিয়ে তোলে, তা সেই উৎসবটাই এবার আর নেই। করোনা সেই উৎসবটাকেই সকলের জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছে।
এবার আদালতের নির্দেশে বাজি এ রাজ্যে নিষিদ্ধ। করোনা রোগীদের কথা মাথায় রেখে দূষণ রোধে বাজি নিষিদ্ধ করেছে আদালত। চিকিৎসকেরাও বারবার বাজি পোড়ানোয় এ বছর নিষেধাজ্ঞার দাবি তুলেছিলেন। করোনা পরিস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত অবশ্যই বুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করে মেনে নেওয়া আবশ্যিক।
সমাজের সার্বিক ভালোর কথা মাথায় রেখে তাই সাধারণ মানুষও অনেকে মেনে নিয়েছেন সিদ্ধান্ত সঠিক। কিন্তু কোথাও তবু মন মানছে না অনেকের। কালীপুজোয় বাজির গন্ধটাও এবার নাকে এল না!
বাজি তো না হয় নিষিদ্ধ। তাছাড়া করোনা রোগীদের কথা মাথায় রেখে তা পোড়ানোও সঠিক কাজ নয়। একটা বছর বাজি থেকে দূরে থাকা যায়। কিন্তু আলো কী দোষ করল? এবার আলো তো দেওয়া যেত। কিন্তু সেটাও সেভাবে নজর কাড়ছে না।
আলোর উৎসবে আলোর রমরমা অন্যান্য বছরের মত একেবারেই নয়। আসলে মানুষের উৎসব পালনের ইচ্ছাটাই কেমন যেন উধাও হয়ে গেছে।
সকলে একসঙ্গে মিলিত না হয়েও তো উৎসব পালন করা যায়। পরিবারের সঙ্গে মিলেও পালন করা যায়। ভাগাভাগি করে নেওয়া যায় খুশি। কিন্তু সেটাও এবার অনেকটা ম্রিয়মাণ।
কালীপুজোয় কালী মন্দিরগুলিতে ভিড় জমে ভক্তদের। এবার সেটাও সকাল থেকে সেভাবে নজর কাড়েনি। অধিকাংশ মন্দিরেই ভক্ত সমাগম কম।
দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে মা ভবতারিণীর পুজো দিতে কালীপুজোর সকাল থেকেই ভক্তের ঢল নামে। এবার ভক্তরা এলেও সেই ভিড় নেই। ভিড় নেই শহরের অন্য মন্দিরগুলিতেও।
আসলে নিউ নর্মাল জীবনে মানুষ কাজ করছেন বটে, তবে করোনাকালে উৎসব পালনের উৎসাহ তাঁদের মন থেকে হারিয়ে গিয়েছে।