‘বৃদ্ধ সন্ন্যাসী’-কে ফেলে চলে গেলেন তার জনক। তবে ‘বৃদ্ধ সন্ন্যাসী’ বা ‘ওল্ড মঙ্ক’ পিতৃহীন হয়েও আজ আর একা নয়। তার সংসর্গ পেতে গোটা বিশ্ব জুড়েই মুখিয়ে আছেন অজস্র অনুরাগী। আর সেই কৃতিত্বের একমাত্র দাবিদার এক ভারতীয়। ‘ওল্ড মঙ্ক’-এর জন্মদাতা কপিল মোহন। গত শনিবার গাজিয়াবাদের মোহননগরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ ছিলেন ব্রিগেডিয়ার মোহন। সেই হৃদরোগই কেড়ে নিল ‘পদ্মশ্রী’ প্রাপক কপিলের প্রাণ।
সাল ১৯৪৯। সদ্য স্বাধীন ভারত থেকে একে একে পাততাড়ি গুটোতে শুরু করেছেন শ্বেতাঙ্গ ব্যবসায়ীরা। সেইসময় হিমাচল প্রদেশের কসৌলিতে এডওয়ার্ড ডায়ারের প্রতিষ্ঠিত মদ তৈরির কারখানা হস্তান্তরিত হয়ে যায় মোহন বংশের কুলপতির হাতে। তার নামকরণ হয় ‘মোহন ম্যাকিন ব্রিউয়ারিস’। সেই কোম্পানির যোগ্য উত্তরসূরি হয়ে ওঠেন কপিল মোহন। ১৯৫৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর ‘মোহন ম্যাকিন ব্রিউয়ারিস’-এর চেয়ারপার্সন কপিল প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন ‘ওল্ড মঙ্ক’-কে। এটিই প্রথম ভারতীয় সুরা, যা ভারতবাসীসহ সমগ্র বিশ্বের সুরা রসিকদের হৃদয় হরণ করে নিয়েছিল একসময়। যে কারণে সর্বাধিক বিক্রিত সুরা-পণ্য হিসেবে স্বীকৃতিও পায় ‘ওল্ড মঙ্ক’। অথচ মজার বিষয়, কপিল মোহন নিজে কিন্তু মদ ছুঁয়েও দেখতেন না।
সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে ‘ডার্ক রাম’ তৈরি করে কপিল জন্ম দিলেন ‘ওল্ড মঙ্ক’-এর। ‘রাম’ তৈরির জন্য প্রয়োজন পরিস্রুত বিশুদ্ধ ঠান্ডা জল। সেই জলের ব্যবহার করেই তৈরি হল ওল্ড মঙ্ক। বহু বছর বিশ্ব জুড়ে ডার্ক রামের জগতে কার্যত একাই শাসন করেছে ওল্ড মঙ্ক। যদিও খতিয়ান বলছে ২০১০ সালের পর থেকে পড়তে শুরু করে ওল্ড মঙ্কের বিক্রি। তাতে কী? ওল্ড মঙ্ক বিশ্ব সুরার ইতিহাসে নিজের পাকাপোক্ত জায়গা ইতিমধ্যেই তৈরি করে নিয়েছে। ভারতের তৈরি সেই ইতিহাসের জনক বিদায় নিলেন।