একের পর এক তাঁর দেওয়া সুর এখনও মানুষের কানে বাজে। আজও বারবার শুনতে ইচ্ছে হয় সেই সুরের মূর্ছনা। তাঁকে বলা হত পারফেকশনিস্ট সুরকার। নিখুঁত সুর করতে ভালবাসতেন তিনি। জীবনে মাত্র ৫৪টি সিনেমায় সুর দিয়েছেন। কিন্তু যে সব সিনেমায় দিয়েছেন সেসব সিনেমার সুর চিরকালীন হয়ে আছে। যারমধ্যে রয়েছে ‘কভি কভি’, ‘উমরাও জান’-এর মত সিনেমা। যে ২টি সিনেমার জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার পুরস্কারও পান। সেই সুরকার খৈয়াম সোমবার রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন মুম্বইয়ের একটি হাসপাতালে।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। প্রথম সুরকার হিসাবে সুযোগ পান ১৯৫০ সালে ‘বিবি’ সিনেমায়। কিন্তু ১৯৫৮ সালে ‘ফির সুবহা হোগি’ সিনেমায় তাঁর দেওয়া সুর গোটা দেশকে মুগ্ধ করে। তাঁকে সুরকার হিসাবে আলাদা পরিচিতি দেয়। তারপর থেকে দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছর হিন্দি সিনেমায় সুর দিয়েছেন। তবে ৫০ বছর ধরে সুর দিয়েও সুর দিয়েছিলেন মাত্র ৫৪টি সিনেমায়। যারমধ্যে রয়েছে ‘নুরি’, ‘ত্রিশূল’, ‘রাজিয়া সুলতান’, ‘থোড়ি সি বেওফাই’, ‘বাজার’, ‘চম্বল কি কসম’-এর মত সিনেমা। জীবনে ২টি সিনেমার সুরের জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জেতেন। পাশাপাশি ২০১০ সালে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পান তাঁর সারাজীবনের অবদানের জন্য। পদ্মভূষণ সম্মানও অর্জন করেন তিনি। ২০০৭ সালে জেতেন সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার। উমরাও জান সিনেমায় সুর দিয়ে জেতেন জাতীয় পুরস্কারও।
খৈয়ামের পুরো নাম মহম্মদ জহুর খৈয়াম হাশমি। জন্মগ্রহণ করেন জলন্ধরের কাছে একটি ছোট্ট শহর রাহোনে। ছোট থেকেই তাঁর ছিল সঙ্গীতের প্রতি আগ্রহ। তিনি চেয়েছিলেন একজন গায়ক-নায়ক হিসাবে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগও দিয়েছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন ভারতীয় মার্গ সঙ্গীতের সাধক। ফলে তাঁর সুরে বারবার ভারতীয় ধ্রুপদী ঘরানা ছাপ ফেলেছে। সেখানেই হয়তো অন্য সুরকারদের থেকে খৈয়াম ছিলেন আলাদা। ভারতীয় সিনেমায় সুরকার হিসাবে তিনি এক কিংবদন্তী হয়ে থেকে যাবেন চিরকাল। তাঁর সুর আগামী দিনেও মানুষকে অভিভূত করবে। তাঁকে নিয়ে চর্চা হবে। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা