চুমুর আবিষ্কার কোথায়, যথেষ্ট অবাক হওয়ার মত উত্তর
খ্রিস্টের জন্মের ২০০০ বছর আগের ইতিহাস জানাচ্ছে অন্য এক চুম্বন তত্ত্বের কথা। সে সময় পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশে প্রচলিত ছিল এক অদ্ভুত ধর্মীয় প্রথা।
‘…চুমি মোরা দুটিতে/ না আছে শ্রম, নেইকো শরম/ শুধু ভালোলাগা, ভালোবেসে থাকা’। ভালোবাসার এক অনবদ্য ভাষাহীন প্রকাশ চুম্বন। সেকথা রোমান কবি পেত্রোনিয়াস বুঝেছিলেন বহু আগেই।
শুধু পেত্রোনিয়াস কেন, ভালোবাসার আবেগঘন এই মাধ্যমটির মাহাত্ম্যের কথা যুগ যুগ ধরে স্বীকার করে এসেছেন বহু বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব। নিবিড় আলিঙ্গন আর উষ্ণ অধরদ্বয়ের মিলনে পূর্ণতা পায় প্রেম। সে কথা আলাদা করে আজ আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
হৃদয়ের গভীরতম তলদেশে নিহিত বিশেষ মানুষের প্রতি অদম্য ভালোবাসার প্রতীকী রূপ চুম্বন। মরুভূমির বুকে মরূদ্যান হয়ে ওঠা চুম্বনের অপরিহার্যতার কথা মাথায় রেখেই প্রেমের ক্যালেন্ডারে তাই একসময় নিজের স্বতন্ত্র জায়গা করে নেয় ‘কিস ডে’। গোলাপ, চকোলেট, টেডি বেয়ার, অঙ্গীকার, আলিঙ্গন এই সবকিছু প্রেমের কণ্টকময় পথকে মসৃণ করে তুলতে উপলক্ষ মাত্র।
প্রেমের পরিণতি তো আসলে দুটি প্রেমাতুর ঠোঁটের একাত্ম হয়ে ওঠাতেই। তাই ভ্যালেন্টাইন লগ্নের প্রাকমুহুর্তেটিতেই বিশেষ মানুষকে ‘আন্তরিকতম’ করে তুলতে তৈরি হল একটি বিশেষ দিন। ১৩ ফেব্রুয়ারি সেই দিন। চুম্বনে চুম্বনে প্রিয়তম বা প্রিয়তমাকে রাঙিয়ে তোলার দিন।
প্রেম দিবসের ঠিক আগেই কেন পালিত হয় চুম্বন দিবস? সেই ইতিবৃত্ত জানতে গেলে আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে প্রাগৈতিহাসিক যুগে। যে যুগে আদিম মানুষ জানত না ভাষার ব্যবহার। আড়ম্বরের সঙ্গে সভ্য মানুষের মতো তারা জানাতে পারত না তাঁদের অনুভূতির কথা। তা বলে কি তাদের মধ্যে ঘাটতি ছিল প্রেম ভালোবাসার?
একেবারেই তা নয়। বরং নির্বাক সেই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ছিল বড়ই আন্তরিক, আদরের চাদরে মাখামাখি। ইতিহাস অন্তত সে কথাই বলছে। আদিম যুগে জঙ্গল থেকে শিকার করা বা সংগ্রহ করে আনা খাদ্য সকলে মিলে ভাগ করে খেত গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষ। তখন আগুনের ব্যবহারও জানা ছিল না তাদের।
চুমুর এত উপকারিতা, জানতে হলে পড়তে হবে পুরোটা
ছোট্ট দুধের শিশুকে শক্ত সেই খাবার খাওয়াতে সমস্যায় পড়তেন মা। অপাচ্য খাবার খাইয়ে তো আর সন্তানকে বিপদে ফেলতে পারেন না তিনি। আবার মায়ের স্তন্যপানের বাইরে অন্য খাবার না খেলে অসুস্থ হয়ে পড়বে শিশু! কি উপায়ে কাঁচা ফল, সবজি বা মাংস শিশুকে খাওয়ানো যায় তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান মায়েরা।
একসময় মাথায় দারুণ বুদ্ধি খেলে যায় তাঁদের। সংগ্রহের খাবার প্রথমে মুখে নিয়ে ভালো করে দাঁত দিয়ে চিবিয়ে নরম করে ফেলেন মা। সেই চিবানো নরম খাবার ঠোঁট দিয়ে শিশুর মুখের মধ্যে প্রবেশ করান তিনি। খাবার বিনিময়ের ছলে এভাবেই মা ও সন্তানের অধরে অধরে স্পর্শের হাত ধরে জন্ম নেয় প্রেমময় চুম্বন। এটাই তো অনাবিল ভালোবাসার উৎসারিত প্রকাশ। তাই নয় কি?
খ্রিস্টের জন্মের ২০০০ বছর আগের ইতিহাস অবশ্য জানাচ্ছে অন্য এক চুম্বন তত্ত্বের কথা। সে সময় পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশে প্রচলিত ছিল এক অদ্ভুত ধর্মীয় প্রথা। ২ জন মানুষের ঠোঁটসহ মুখাবয়ব নিবিড়ভাবে ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠার মধ্য দিয়ে নাকি মানব শরীরের আত্মার একত্রীকরণের পথ সহজ হয়ে ওঠে। এই বিশ্বাসে আত্মায় আত্মায় সঙ্গম ঘটাতে ২ জন মানুষ একে অপরকে চুম্বন করতেন।
সেই রীতিই কালক্রমে ভারত, রোম, রাশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের জনগোষ্ঠীর জীবনে উৎসবে পরিণত হয়। মা বাবার সন্তানের প্রতি চুম্বন হোক বা প্রেমিক প্রেমিকার ঠোঁটে ঠোঁটে আলিঙ্গন, চুম্বন দেশ কাল ভেদে পেয়ে যায় উৎসবের মর্যাদা। বলাবাহুল্য, প্রেমিক-প্রেমিকার চুম্বন উৎসবের আধুনিক পোশাকি নাম এখন ‘কিস ডে’।