কামসূত্র রচয়িতা মহর্ষি বাৎস্যায়নের চুম্বন তথ্য
নীতিশাস্ত্র প্রণেতা বাৎস্যায়ন মুনি কামসূত্র-র তৃতীয় অধ্যায়ে চুম্বনের নানা কলাকৌশল সম্বন্ধে বিশদে লিখেছেন অনেক কথা। সংক্ষেপে তারই কিছু কথা।
চুম্বন বহু প্রকারের। স্থান কাল পাত্র ভেদেও আছে এর প্রকাশভেদ। চুম্বন প্রসঙ্গে ‘কামসূত্র’-র তৃতীয় অধ্যায়ে নীতিশাস্ত্র প্রণেতা বাৎস্যায়ন মুনি চুম্বনের নানা কলাকৌশল সম্বন্ধে বিশদ বর্ণনায় লিখেছেন অনেক কথা। অতি সংক্ষেপে তারই কিছু কথা –
বাৎস্যায়ন বলেন, চুম্বনের স্থান ললাট, অলক (চূর্ণকুন্তল, কোঁকড়ান কেশদাম), কপোল, নয়ন, বক্ষ, স্তন, ওষ্ঠ এবং ওষ্ঠের ভিতরের দিক।
দক্ষিণ ভূখণ্ডের পশ্চিম উপকূলের অন্তর্গত একশ্রেণীর লোকেদের লাট বলে। তাদের মতে, ঊরুসন্ধি বাহুমূল আর নাভির নীচেও চুম্বনের প্রথা প্রচলিত আছে, তবে যে যে দেশে যে যে স্থানে চুম্বনের প্রথা প্রচলিত আছে, সেই স্থানই চুম্বিত হয় নরনারীর অনুরাগ উপস্থিত হলে।
চুম্বনের সংজ্ঞায় বাৎস্যায়ন বলেছেন, দুটি ঠোঁট ছুঁচালো করে আনা অর্থাৎ ‘মুকুলীকৃত’ মুখের সংযোজনকেই চুম্বন বলে। তবে তার স্থান বিশেষে রয়েছে নানা ধরণের দান ও গ্রহণ ভেদ। ফলে চুম্বনেও মুখের প্রাধান্যই বেশি বলে এখানে বাৎস্যায়ন মুখের কথাই বলেছেন।
উপরোষ্ঠ ও নিম্নোষ্ঠ ভেদে অপ্রাপ্ত সঙ্গম (যে নারী আগে কখনও সঙ্গম করেনি) এবং অজাতবিশ্রম্ভা (যে নারী কখনও কারও সঙ্গে প্রেমালাপ করেনি) মেয়েদের চুম্বন তিন প্রকার। ‘নির্মিতক’, ‘স্ফুরিতক’ ও ‘ঘট্টিটক’। এই ধরণের চুম্বন মেয়েরাই প্রয়োগ করে থাকে।
পুরুষের দ্বারা বলাৎকারপূর্বক সহসা চুম্বনে নিযুক্ত হয়ে নারী যখন পুরুষের মুখে মুখ রাখে কিন্তু অধর পানের কোনও চেষ্টা করে না তখন তাকে নির্মিতক চুম্বন বলে। নির্মিতক অর্থে পরিমিত চুম্বন বোঝায়।
নারীর মুখে পুরুষ নিজের অধর প্রবেশ করিয়ে দিলে, নারীর কিঞ্চিৎ লজ্জা পরিত্যাগ করে হালকা চেপে ধরতে ইচ্ছে করে কিন্তু নিজের ওষ্ঠ ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে এবং পুরুষের অধর নিজের অধরে রাখতে দেয় না। আবার পুরুষ যদি নিজেই নিজের অধর বের করে আনার চেষ্টা করে তখন নারী নিজে অধর ওষ্ঠ দিয়ে চেপে ধরে। তখন তাকে স্ফুরিতক চুম্বন বলে।
হাত দিয়ে পুরুষের চোখ ঢেকে নারী নিজেও চোখ নিমীলিত করে পুরুষের অধরপ্রান্ত অল্পভাবে ধরে চারদিক ঘুরিয়ে দেখে, তখন তাকে বলে ঘট্টিতক চুম্বন।
বাৎস্যায়ন আরও বলেছেন:
যখন নারী নিজেদের অধর দিয়ে পুরুষের ওষ্ঠাধর স্পর্শ করে মাত্র, তাকে ‘নামমাত্র চুম্বন’ বলে।
‘স্পন্দিত চুম্বন’–এ ক্ষেত্রে নারীদের ততটা লজ্জা থাকে না, নীচের ঠোঁট দিয়ে ওষ্ঠাধরে হাল্কা চাপ দিয়ে থাকে পুরুষের।
আর একটি ‘Touching Kiss’, এ ক্ষেত্রে নারী জিভ দিয়ে পুরুষের ঠোঁট স্পর্শ করে এবং চোখ বুজে নিজের হাতের সঙ্গে পুরুষের হাত মিলিয়ে দেয়।
এ দেশে হাজার একটা পণ্ডিত, মতেরও আর অন্ত নেই। তাদের মতে, চুম্বন চার প্রকার। সম, বক্র, উদ্ভ্রান্ত আর অবপীড়িতক।
সমান সমান মুখ রেখে একে অপরের অধরোষ্ঠ গ্রহণকে ‘সমচুম্বন’ বলে। মুখ ঘুরিয়ে অধরোষ্ঠ বর্তুলাকার অর্থাৎ ছুঁচালো করে যে অধর গ্রহণ তাকে বক্র বাঁ তির্যক চুম্বন বলে।
চিবুক ও মাথা ধরা মুখ ঘুরিয়ে যে অধরোষ্ঠ গ্রহণ, তাকে বলে উদ্ভ্রান্ত চুম্বন। ঠিক সেই অবস্থায় যদি অত্যন্ত পীড়ন করে চুম্বন করা হয় তবে তাকে অবপীড়িতক চুম্বন বলে।
এই অবস্থায় যদি উভয়ে উভয়কে পীড়ন করে তবে সেই চুম্বনকে শুদ্ধপীড়িত চুম্বন বলে। আর যদি জিহ্বাসহ পীড়ন করা যায়। তবে সেই চুম্বন অধরপান বা চুষণ নামে অভিহিত।
হাতের আঙুল যুক্ত করে অর্থাৎ বৃদ্ধ ও তর্জনীর মাথা একত্র করে অধরোষ্ঠকে চেপে ধরে পিণ্ডাকার করে, না কামড়িয়ে শুধুমাত্র ওষ্ঠপুট দিয়ে অবপীড়িত করাকে পঞ্চম অবপীড়িত চুম্বন বলে।
এই ধরণের চুম্বনের আগে পীড়ন থাকলেও আকর্ষণ করাটাই এখানে একমাত্র উদ্দেশ্য, বিশেষত্ব। এমন অবপীড়িত চুম্বনকে আকৃষ্ট চুম্বনও বলে।
অতি সংক্ষেপে এই পর্যন্ত। এছাড়াও কথায় কথায় হাজারও রকমের চুম্বন আর অসংখ্য রকমের প্রয়োগ প্রণালীর কথা ভাষার বিচিত্র বিন্যাসে লিখেছেন মুনি বাৎস্যায়ন তাঁর অমর গ্রন্থ ‘কামসূত্রে’।