Kolkata

আলোচনা ফলপ্রসূ, কাটছে জট, চিকিৎসকদের কাজে ফেরা এখন সময়ের অপেক্ষা

২ তরফই কিছুটা করে নমনীয়। ফলে নবান্নে বৈঠক। আর সেই বৈঠকে মিটল এক সপ্তাহের জট। এটা রাজ্য সরকার বা জুনিয়র ডাক্তারদের কাছে যতটা না স্বস্তির তার চেয়েও অনেক বেশি স্বস্তির রাজ্যের সাধারণ মানুষের কাছে, মরণাপন্ন রোগীদের পরিজনদের কাছে, ছোট ছোট শিশুদের কাছে, আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া অসুস্থ মানুষদের কাছে। ওপিডি থেকে অন্য সব বিভাগ হাসপাতালে ঠিকঠাক কাজ শুরু করলে তাঁরা বাঁচেন। আর সেই রফা সূত্রই সোমবার বেরিয়ে এল নবান্নের বৈঠক থেকে।

বৈঠক শুরুর কথা ছিল বিকেল ৩টেয়। কিন্তু এনআরএস থেকে ৩১ জন চিকিৎসককে নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের বাস নবান্নের উদ্দেশে যাত্রাই শুরু করে ৩টের পর। পুলিশের কনভয়ে সেই বাস নবান্নে পৌঁছয় ৩টে ২৫ মিনিটে। বৈঠক শুরু হয় বিকেল ৪টেয়। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব, স্বাস্থ্য শিক্ষা সচিব, পরিবহণ সচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি, কলকাতা পুলিশের কমিশনার, সিনিয়র চিকিৎসকেরা। প্রথমেই বিক্ষোভরত ডাক্তারদের বক্তব্য রাখতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁদের তরফে বলা হয়, তাঁরা ১২ দফা দাবিতে আন্দোলনে। ভয়ের সঙ্গে তাঁদের কর্মস্থানে কাজ করতে হচ্ছে। অনেক সময় রোগীর পরিজনদের হাতে আহত হতে হয়। তাঁরা চান চিকিৎসার জন্য সঠিক পরিবেশ তাঁদের দেওয়া হোক। চিকিৎসকদের মারধর করা যায় না এটা মানুষকে জানানো হোক। মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে কড়া বার্তা দিন। দীর্ঘদিন ধরে আতঙ্কের পরিবেশে কাজ করতে করতে অবশেষে তাঁরা কর্মবিরতির পথে হাঁটতে বাধ্য হয়েছেন। এই অবস্থা বদলে তাঁরাও কাজে ফিরতে চান। তবে যে অপ্রীতিকর ঘটনা এনআরএস হাসপাতালে ঘটেছে তার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে তা নিশ্চিত করুক সরকার। এনআরএস কাণ্ডে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের কী কী ধারা দেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে সে সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য চান আন্দোলনকারীরা।


জুনিয়র ডাক্তারদের কথা শোনার পর মুখ্যমন্ত্রীও জানান জরুরি বিভাগে রোগীর সঙ্গে ২ জনের বেশি না ঢুকতে দেওয়ার নিয়ম করতে। এছাড়া জরুরি বিভাগের সামনে কোলাপসিবল গেট তৈরি করতে। রোগীর কী পরিস্থিতি, চিকিৎসকদের মাধ্যমে তা না জানিয়ে এজন্য পিআর নিয়োগ করা। তাঁরা রোগীর পরিজনদের সঙ্গে রোগীর অবস্থা নিয়ে কথা বলবেন। সহজ কথায় চিকিৎসক ও রোগীর আত্মীয়ের মধ্যে যোগসূত্রের কাজ করবেন তাঁরা। এমন প্রস্তাবও দেন মুখ্যমন্ত্রী। এজন্য প্রতি হাসপাতালে ৩ জন করে রাখা হবে। মেডিক্যাল আইন বদলে আরও শক্তিশালী করার দাবিও এদিন মেনে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই আইন বদলাতে তাঁকে বিধানসভা থেকে পাশ করাতে হবে। এছাড়া সরকারি হাসপাতালে গ্রিভান্স সেল অর্থাৎ অভিযোগ বিভাগ চোখে পড়ার মত জায়গায় করার জুনিয়র ডাক্তারদের দাবিও মেনে নেন মুখ্যমন্ত্রী।

জুনিয়র ডাক্তাররা জানান প্রি-অ্যানাস্থেটিক চেকআপ স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতাভুক্ত নয়। কিন্তু মানুষ মনে করেন হাসপাতালে এলে আর তাঁর হাতে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকলে তাঁর ওই পরীক্ষাগুলিও ফ্রি। যা বোঝাতে হিমসিম খেতে হয় ডাক্তারদের। এক্ষেত্রে বিষয়টি শোনার সঙ্গে সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী ওই চেকআপগুলি স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় আনার নির্দেশ দিয়ে দেন। অন্যদিকে অনেক জেলাস্তরের হাসপাতালের রাজনৈতিক নেতারা রোগী এনে তথাকথিত দাদাগিরি করেন বলে অভিযোগ করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। এক্ষেত্রে কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দল নয়, সব দলের নেতারাই এটা করে থাকেন বলে মুখ্যমন্ত্রীকে জানান তাঁরা। মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়েও পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেন।


বিক্ষোভরত ডাক্তারদের আরও দাবি ছিল মুখ্যমন্ত্রী যেন তাঁদের ওপর হামলার ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি নেন। পুলিশও যেন তা দেখে। তাছাড়া তাঁদের দাবি ছিল এমন একটি নম্বর পুলিশের তরফ থেকে দেওয়া হোক যেখানে ফোন করলে তাঁরা তাঁদের ওপর কোনও হামলা হলে দ্রুত জানাতে পারেন। এদিন কিন্তু ২টি বিষয় স্পষ্ট দাবি করেছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের দাবি, এনআরএস কাণ্ডের দিন পুলিশ থাকা সত্ত্বেও তারা কোনও পদক্ষেপ করেনি। আর মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁরা জানান, তাঁরা কোনও পদবী দেখে চিকিৎসা করেন না। যে বিষয়ে কোনও পাল্টা মন্তব্যের রাস্তায় হাঁটেননি মুখ্যমন্ত্রী।

এদিন আগাগোড়াই বৈঠক হয়েছে সুন্দর পরিবেশে। জুনিয়র ডাক্তারদের বক্তব্য পেশ ছিল অত্যন্ত পরিশীলিত। মুখ্যমন্ত্রীকে যথাযোগ্য সম্মান দিয়েই তাঁরা তাঁদের যাবতীয় দাবিদাওয়া তুলে ধরেছেন। যেখানে একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল পরিকাঠামোকে আরও উন্নত করার দাবি। অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রীও মনোযোগ সহকারে জুনিয়র ডাক্তারদের বক্তব্য শুনেছেন। সচিব ও পুলিশ প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন। সবশেষে মুখ্যমন্ত্রী জানান, বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। জুনিয়র ডাক্তাররাও একরকম জানিয়ে যান তাঁরা আন্দোলন থেকে সরে আসছেন। তবে তাঁরা আন্দোলন প্রত্যাহারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এনআরএস-এ ফিরে করবেন বলে জানান।

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button